ঢাকা ০২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বন্যার পানি নেমে গেলেও রেখে গেছে ক্ষয় ক্ষতির দৃশ্য

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 126
বন্যার পানি নেমে গেছে, তিস্তা পাড়ের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু তারা যে বাড়ি আর যে ফসলী ক্ষেত রেখে গেছেন তা কিন্তু ফিরে পায়নি।

পানির স্রোতে বসত বাড়ি যেমন ভেঙে গেছে তেমনি জমির উঠতি ফসলও নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলে এবারের বন্যায় লালমনিরহাটে তিস্তা পাড়ের লোকজনের অপুরণীয় ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকা গুলো ঘুরে দেখা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নসহ জেলার পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকা গুলোর হাজার হাজার পরিবার শুধু পানিবন্দি হয়নি। পানির স্রোতে অনেকের বসত বাড়িও ভেঙে গেছে।

বন্যা কবলিত এলাকা গুলোর অধিকাংশ কাঁচা পাকা রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট ভেঙে গেছে। হাজার হাজার একর জমির ধান, ভুট্টা, আলু ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে গেছে। অনেক জমিতে বালু পড়ে চর জেগে উঠেছে।

এ দিকে বন্যার পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাস ও কাকিনা-মহিপুর সড়ক ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সাথে রংপুর ও নীলফামারীর সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, আর কয়েকদিন পর ক্ষেতের আমন ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল। আশা ছিল এবার আমন ধানে গোলা ভরে যাবে। তার স্বপ্ন এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আকস্মিক বন্যায় তার ৭ বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকার কৃষক সফিয়ার রহমান বলেন, ভাবতেই পারছি না ধান ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। নিরুপায় হয়ে আছি। কি ভাবে সংসার চালাবো, কিভাবে সার ও কীটনাশকের দোকানের বাকির টাকা শোধ করবো। হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের ডাউয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, অকাল বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়ে ছিলাম। সবগুলো ভুট্টাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষেতে দেয়ার জন্যে সার কিনে বাড়িতে রেখেছিলাম। বন্যায় সেগুলোও নষ্ট হয়েছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমরা চরে ভুট্টা চাষ করি। বন্যা আমাদেরকে আরও বেশি ঋণগ্রস্ত করে দিয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি সস্প্রসারণ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে।

বুধবার সকালে এক নিমিষেই তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। ১৫ হাজার একরের বেশি জমির ফসল বন্যায় তলিয়ে গেছে। দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানির তোড়ে খামারের বিপুল সংখ্যক হাঁস-মুরগিও ভেসে গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, অকাল বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষেত এখনো পানির নিচে। কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বন্যার পানি নেমে গেলেও রেখে গেছে ক্ষয় ক্ষতির দৃশ্য

আপডেট : ১১:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
বন্যার পানি নেমে গেছে, তিস্তা পাড়ের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু তারা যে বাড়ি আর যে ফসলী ক্ষেত রেখে গেছেন তা কিন্তু ফিরে পায়নি।

পানির স্রোতে বসত বাড়ি যেমন ভেঙে গেছে তেমনি জমির উঠতি ফসলও নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলে এবারের বন্যায় লালমনিরহাটে তিস্তা পাড়ের লোকজনের অপুরণীয় ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।

বন্যা কবলিত এলাকা গুলো ঘুরে দেখা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নসহ জেলার পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকা গুলোর হাজার হাজার পরিবার শুধু পানিবন্দি হয়নি। পানির স্রোতে অনেকের বসত বাড়িও ভেঙে গেছে।

বন্যা কবলিত এলাকা গুলোর অধিকাংশ কাঁচা পাকা রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট ভেঙে গেছে। হাজার হাজার একর জমির ধান, ভুট্টা, আলু ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে গেছে। অনেক জমিতে বালু পড়ে চর জেগে উঠেছে।

এ দিকে বন্যার পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাস ও কাকিনা-মহিপুর সড়ক ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের সাথে রংপুর ও নীলফামারীর সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান, আর কয়েকদিন পর ক্ষেতের আমন ধান কেটে ঘরে তোলার কথা ছিল। আশা ছিল এবার আমন ধানে গোলা ভরে যাবে। তার স্বপ্ন এক নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আকস্মিক বন্যায় তার ৭ বিঘা জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকার কৃষক সফিয়ার রহমান বলেন, ভাবতেই পারছি না ধান ঘরে তোলার আগেই নষ্ট হয়ে যাবে। নিরুপায় হয়ে আছি। কি ভাবে সংসার চালাবো, কিভাবে সার ও কীটনাশকের দোকানের বাকির টাকা শোধ করবো। হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড়ের ডাউয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, অকাল বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি। ৮ বিঘা জমিতে ভুট্টা লাগিয়ে ছিলাম। সবগুলো ভুট্টাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষেতে দেয়ার জন্যে সার কিনে বাড়িতে রেখেছিলাম। বন্যায় সেগুলোও নষ্ট হয়েছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আমরা চরে ভুট্টা চাষ করি। বন্যা আমাদেরকে আরও বেশি ঋণগ্রস্ত করে দিয়েছে।

লালমনিরহাট কৃষি সস্প্রসারণ, প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে গত মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে।

বুধবার সকালে এক নিমিষেই তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। ১৫ হাজার একরের বেশি জমির ফসল বন্যায় তলিয়ে গেছে। দেড় শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। পানির তোড়ে খামারের বিপুল সংখ্যক হাঁস-মুরগিও ভেসে গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামিম আশরাফ বলেন, অকাল বন্যায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসলের ক্ষেত এখনো পানির নিচে। কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে কৃষি বিভাগ মাঠে কাজ করছে।