ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল, যা বললেন চসিক মেয়র
- আপডেট : ১১:০২:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
- / 89
মঙ্গলবার বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভারের পিলারের ফাটল পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আমরা আজকেই সিডিএকে চিঠি দেব পিলারে ফাটলের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। কারণ যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেভাবে ফাটলটা সৃষ্টি হয়েছে তা দেখে হতবাক হয়েছি। এই ফ্লাইওভারে আগেও গার্ডার ধসে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে সময় কয়েকজন মারা গিয়েছিল।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, তবে কী কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে তা বিস্তারিত তদন্ত করে বলা যাবে। সিডিএ-কে চিঠি দেয়া হবে, কারণ তাদের তত্ত্বাবধানে ফ্লাইওভারের কাজ হয়েছে। ওনারা ফাটলের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। যেসব ঠিকাদার এখানে কাজ করেছে তাদের ত্রুটি আছে কি না তা খুঁজে বের করবে সিডিএ। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সহযোগিতা করব।
মেয়র বলেন, ফ্লাইওভারের মূল নকশায় র্যাম্পের ডিজাইন ছিল না। এটা পরে সিডিএ বর্ধিত করেছে। ফ্লাইওভার যারা করেছে তারাই নির্মাণ ত্রুটির কারণ খুঁজে বের করবে। এরপর মেরামত বা যাই করা হবে তারাই করবে।
এদিকে, ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল দেখতে দু’পাশে ভিড় করে আছে শত শত মানুষ। কেউ এসেছেন দুই ঘণ্টা আগে, কেউ আবার ছুটোছুটি করে যাচ্ছেন সেদিকে। এমন কাণ্ড কোনো বিনোদন কেন্দ্র ঘিরে নয়, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের পিলার ফাটলের যে ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে তা দেখতেই ভিড় জমিয়েছে উৎসুক জনতা।
ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী বলেন, সৃষ্ট যানজট নিরসনে কাজ চলছে। উৎসুক সাধারণ মানুষদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। উনাদের সরিয়ে দেয়া হবে।
এরআগে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এক পথচারী ফাটলটি দেখতে পেয়ে ফেসবুকে সেটি নিয়ে একটি পোস্ট দেন। ওই পোস্ট পুলিশের নজরে আসার পর তারা বহদ্দারহাট মদিনা হোটেলের সামনের ফ্লাইওভার পর্যবেক্ষণ করে একটি পিলারের ওপরের অংশে বড় একটি ফাটল শনাক্ত করে। এরপর যেকোনো ধরণের ঝুঁকি এড়াতে রাত ১০টা থেকে ফ্লাইওভারের এ অংশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
সেখানে দেখা গেছে, র্যাম্প ও ফ্লাইওভারের সংযোগস্থলের কিছু নাট ঢিলে হয়ে গেছে। এর প্রভাবে র্যাম্প হালকা দেবে গেছে। ঘটনা শনাক্ত করার পরপরই মোহরার অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফাটলের খবর পেয়ে রাতেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় দুই কাউন্সিলর এবং চান্দগাঁও থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় তারাও পিলারের নিচের অংশে থাকা অস্থায়ী দোকান ও বিভিন্ন গাড়িগুলো সরিয়ে দেন। পাশাপাশি একটি পিলারের অংশে ব্যারিকেড দিয়েও রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার (বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার) নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
নির্মাণের চার বছর পর এম এ মান্নান ফ্লাইওভারে আরাকান সড়কমুখী একটি র্যাম্প যুক্ত করেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। র্যাম্প ব্যবহার করে নগরের মুরাদপুর থেকে আসা গাড়িগুলো চান্দগাঁও ও বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের দিকে একমুখী চলাচল করে। পরে এই ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চসিককে হস্তান্তর করে সিডিএ।
২০১২ সালের নভেম্বরে ফ্লাইওভারের গার্ডার ধসের ঘটনায় ১৪ জন নিহত হলে এর নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।