ঢাকা ০৩:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাথার ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:৩২:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১
  • / 96
মাথার ব্যান্ডেজে লেখা আছে ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’। এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মাহাদী জে আকিব নামে এক শিক্ষার্থীর। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৬২তম ব্যাচের ছাত্র।

আকিব হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুমিল্লায়। সে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে পাশ করেছে। আর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। এরপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়।

মাহাদী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আকিবের ব্রেইনে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে ওঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আকিবের জ্ঞান ফেরেনি। তবে জ্ঞান ফিরে আসলেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা।

জানা যায়, গুরুতর আহত হয়ে আকিবকে প্রথমে চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ সেন্টারে নেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নিউরো সার্জারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে মাথায় অস্ত্রপচার হয় আকিবের। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অস্ত্রপচারে নেতৃত্ব দেন চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী।

অধ্যাপক নোমান খালেদ ছাড়াও মেডিকেল টিমে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।

মাথায় মারাত্মক জখম নিয়ে ভর্তি হন চমেক হাসপাতালে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিব।

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল। তবে আকিব গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। সাথে ব্রেইনেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ইনজুরিটা খুব ভয়াবহ হওয়ায় এই মুহূর্তে কোন কমেন্ট করতে চাইনা। তবুও আমি খুবই আশাবাদী।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানিয়েছেন আকিবের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার (৩১ অক্টোবর) মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। তিনি বলেন, আকিবের ব্রেনে অপারেশন করতে হয়েছে। ওর ব্রেনে রক্ত জমে গিয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়। ওই রক্তগুলো সরানো হয়েছে। সরানোর পরেও সে আউট অব ডেঞ্জার না। এজন্য তাকে আপাতত ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় প্রথম দুই পক্ষের মধ্যে ছাত্রবাসে সংঘর্ষ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় শনিবার সকাল ৯টার দিকে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় উভয় গ্রুপ। এতে মাহফুজুল হক (২৩), নাইমুল ইসলাম (২০) এবং মাহাদী জে আকিব (২০) নামের তিনজন আহত হন। এদের মধ্যে আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসন চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। আর মাহফুজ ও নাইমুল ইসলাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- সাদ মোহাম্মদ গালিব (২১), আহসানুল কবির রুমন (২১), জাহিদুল ইসলাম জিসান (২১), মাহাদি বিন হাশিম (২৪), আসিফ বিন তাকি (২৫), ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী (২১), মাহতাব উদ্দিন রাফি (২১), জাহিদুল আলম জিসান (২১), সৌরভ ব্যাপারী (২১), মো. আনিস (২১), রক্তিম দে (২১), এইচ এম আসহাব উদ্দিন (২১), তানভীর ইসলাম (২১), নাজমুস সাদাত আসিফ (২১), এনামুল হাসান সীমান্ত (২১) ও রিজওয়ান আহমেদ (২১)।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাথার ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’

আপডেট : ১১:৩২:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১
মাথার ব্যান্ডেজে লেখা আছে ‘হাড় নেই চাপ দিবেন না’। এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মাহাদী জে আকিব নামে এক শিক্ষার্থীর। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৬২তম ব্যাচের ছাত্র।

আকিব হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুমিল্লায়। সে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়ে কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে পাশ করেছে। আর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। এরপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়।

মাহাদী শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আকিবের ব্রেইনে মারাত্মক জখম হয়েছে। এ ক্ষত সেরে ওঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আকিবের জ্ঞান ফেরেনি। তবে জ্ঞান ফিরে আসলেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা।

জানা যায়, গুরুতর আহত হয়ে আকিবকে প্রথমে চমেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ সেন্টারে নেয়া হয়। পরবর্তীতে হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নিউরো সার্জারিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে মাথায় অস্ত্রপচার হয় আকিবের। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা এ অস্ত্রপচারে নেতৃত্ব দেন চমেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী।

অধ্যাপক নোমান খালেদ ছাড়াও মেডিকেল টিমে ছিলেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, চমেক হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. হাসানুজ্জামান, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার।

মাথায় মারাত্মক জখম নিয়ে ভর্তি হন চমেক হাসপাতালে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহাদি জে আকিব।

অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অপারেশন সাকসেসফুল। তবে আকিব গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথার হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। সাথে ব্রেইনেও গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। ইনজুরিটা খুব ভয়াবহ হওয়ায় এই মুহূর্তে কোন কমেন্ট করতে চাইনা। তবুও আমি খুবই আশাবাদী।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান জানিয়েছেন আকিবের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার (৩১ অক্টোবর) মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। তিনি বলেন, আকিবের ব্রেনে অপারেশন করতে হয়েছে। ওর ব্রেনে রক্ত জমে গিয়েছিল বিভিন্ন জায়গায়। ওই রক্তগুলো সরানো হয়েছে। সরানোর পরেও সে আউট অব ডেঞ্জার না। এজন্য তাকে আপাতত ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় প্রথম দুই পক্ষের মধ্যে ছাত্রবাসে সংঘর্ষ হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় শনিবার সকাল ৯টার দিকে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় উভয় গ্রুপ। এতে মাহফুজুল হক (২৩), নাইমুল ইসলাম (২০) এবং মাহাদী জে আকিব (২০) নামের তিনজন আহত হন। এদের মধ্যে আকিব শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসন চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। আর মাহফুজ ও নাইমুল ইসলাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ ঘটনায় ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- সাদ মোহাম্মদ গালিব (২১), আহসানুল কবির রুমন (২১), জাহিদুল ইসলাম জিসান (২১), মাহাদি বিন হাশিম (২৪), আসিফ বিন তাকি (২৫), ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী (২১), মাহতাব উদ্দিন রাফি (২১), জাহিদুল আলম জিসান (২১), সৌরভ ব্যাপারী (২১), মো. আনিস (২১), রক্তিম দে (২১), এইচ এম আসহাব উদ্দিন (২১), তানভীর ইসলাম (২১), নাজমুস সাদাত আসিফ (২১), এনামুল হাসান সীমান্ত (২১) ও রিজওয়ান আহমেদ (২১)।