ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগর পাড়ের মানুষ আজও ভুলেনি সেই কথা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:০১:৫১ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১
  • / 95
আজ থেকে ১৩ বছর আগে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় লন্ডভন্ড করে দেয় প্রকৃতি ও মানবতাকে। সেই দিনের কথা আজও ভুলেনি এ জনপদের মানুষ।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে কেড়ে নেয় ভয়াবহ সিডরে। অনেকেই নিখোঁজ হওয়া স্বামী, সন্তান, বাবা-মা কিংবা ভাইয়ের অপেক্ষায় এখনও পথ চেয়ে আছেন।

প্রাণ হারানো মানুষের স্মৃতি কিংবা কবরস্থান পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। আকাশে মেঘ দেখলেই বেড়ে চলে ছোটাছুটি। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের যথাযথ সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না সাগর পাড়ের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেড়িবাঁধসহ অসংখ্য স্থাপনা, কৃষকের ক্ষেত ও মৎস্য সম্পদ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক, বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় ও ঝড়ের পরবর্তী সময়ে রোগ বালাইয়ে মারা গেছে বহু গবাদি পশু।

এছাড়া সুপার সাইক্লোন সিডরে এ উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক হাজার ৭৮ জন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৮ জন জেলে। স্বজন হারাদের কাছে তাদের খোঁজখবর নিতে গেলে তারা বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জীবনে এই দিনটির কথা কখনোই ভুলতে পারবে না।

স্থানীয়রা জানান, সিডরের পরবর্তিতে যেসব বাঁধ মেরামত করা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা নাজুক। অমাবস্যা-পূর্ণিমায় বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এখনো গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে থাকে। ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্নবাসনের জন্য সরকার ও বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা ঘর ও আবাসন পল্লী নির্মাণ করে দিয়েছে।

বর্তমানে ওইসব নির্মাণকৃত অধিকাংশ ঘর গুলোর বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তাদের থাকতে হচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে।

উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের গ্রামের বাসিন্দা আল মামুন হাওলাদার জানান, আজও মনে পড়ে সেই দিনের স্মৃতি। বাবা মাকে নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার পথে মা হাত থেকে ছুটে গিয়ে হারিয়ে যায়। মায়ের স্মৃতি কিছুতেই মন থেকে মুছা যাচ্ছেনা।

মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা নূর জামাল বলেন, সিডরের পর আমাদের ঘরবাড়ি, গাছ-পালা কিছুই ছিল না। সে সময় কিছু সাহায্য পেয়েছিলাম।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আবসানের আব্দুর রব বলেন, এ আবাসনের প্রত্যেকটি ঘরই এখন বসবাসের অনুপযোগী। কোন ঘরের চাল নেই, আবার কোন ঘরের বেড়া নেই। চালে পলিথিন দিয়ে থাকতে হয়।

গৃহিনী আলেয়া বেগম বলেন, আকাশে মেঘ কিংবা আবহাওয়ার সিগন্যাল দিলে আমাদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন কর্মকর্তা মো.হুমায়ন কবির বলেন, সিডর পরবর্তি সময় ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালের অধিনে এ সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, সেদিনের সেই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ উপজেলার ৫শত ৬০টি অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার প্রদান করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিক্তিতে কলাপাড়ার অস্বচ্ছল পরিবারকে গৃহ পুনর্বাসন, আবাসন এবং আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সাগর পাড়ের মানুষ আজও ভুলেনি সেই কথা

আপডেট : ০১:০১:৫১ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১
আজ থেকে ১৩ বছর আগে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডর। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় লন্ডভন্ড করে দেয় প্রকৃতি ও মানবতাকে। সেই দিনের কথা আজও ভুলেনি এ জনপদের মানুষ।

একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে কেড়ে নেয় ভয়াবহ সিডরে। অনেকেই নিখোঁজ হওয়া স্বামী, সন্তান, বাবা-মা কিংবা ভাইয়ের অপেক্ষায় এখনও পথ চেয়ে আছেন।

প্রাণ হারানো মানুষের স্মৃতি কিংবা কবরস্থান পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। আকাশে মেঘ দেখলেই বেড়ে চলে ছোটাছুটি। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধের যথাযথ সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না সাগর পাড়ের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, সুপার সাইক্লোন সিডরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বেড়িবাঁধসহ অসংখ্য স্থাপনা, কৃষকের ক্ষেত ও মৎস্য সম্পদ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সড়ক, বিদ্যুৎসহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। ঝড় ও ঝড়ের পরবর্তী সময়ে রোগ বালাইয়ে মারা গেছে বহু গবাদি পশু।

এছাড়া সুপার সাইক্লোন সিডরে এ উপজেলায় ৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক হাজার ৭৮ জন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ৮ জন জেলে। স্বজন হারাদের কাছে তাদের খোঁজখবর নিতে গেলে তারা বার বার কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা জীবনে এই দিনটির কথা কখনোই ভুলতে পারবে না।

স্থানীয়রা জানান, সিডরের পরবর্তিতে যেসব বাঁধ মেরামত করা হয়েছে সেগুলোর অবস্থা নাজুক। অমাবস্যা-পূর্ণিমায় বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে এখনো গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে থাকে। ক্ষতিগ্রস্থদের পূর্নবাসনের জন্য সরকার ও বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা ঘর ও আবাসন পল্লী নির্মাণ করে দিয়েছে।

বর্তমানে ওইসব নির্মাণকৃত অধিকাংশ ঘর গুলোর বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তাদের থাকতে হচ্ছে ঝুঁকির মধ্যে।

উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের গ্রামের বাসিন্দা আল মামুন হাওলাদার জানান, আজও মনে পড়ে সেই দিনের স্মৃতি। বাবা মাকে নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার পথে মা হাত থেকে ছুটে গিয়ে হারিয়ে যায়। মায়ের স্মৃতি কিছুতেই মন থেকে মুছা যাচ্ছেনা।

মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা নূর জামাল বলেন, সিডরের পর আমাদের ঘরবাড়ি, গাছ-পালা কিছুই ছিল না। সে সময় কিছু সাহায্য পেয়েছিলাম।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আবসানের আব্দুর রব বলেন, এ আবাসনের প্রত্যেকটি ঘরই এখন বসবাসের অনুপযোগী। কোন ঘরের চাল নেই, আবার কোন ঘরের বেড়া নেই। চালে পলিথিন দিয়ে থাকতে হয়।

গৃহিনী আলেয়া বেগম বলেন, আকাশে মেঘ কিংবা আবহাওয়ার সিগন্যাল দিলে আমাদের দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন কর্মকর্তা মো.হুমায়ন কবির বলেন, সিডর পরবর্তি সময় ক্ষতিগ্রস্থদের পর্যায়ক্রমে বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হয়েছে। দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালের অধিনে এ সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক সাংবাদিকদের জানান, সেদিনের সেই ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এ উপজেলার ৫শত ৬০টি অসহায় পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার প্রদান করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিক্তিতে কলাপাড়ার অস্বচ্ছল পরিবারকে গৃহ পুনর্বাসন, আবাসন এবং আশ্রায়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।