ঢাকা ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাবনার চাটমোহরে নৌকায় ভোট দিতে আ’লীগ নেতাদের হুশিয়ারী; উৎকন্ঠায় ভোটাররা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:০৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
  • / 102

আসন্ন তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নিয়ে পাবনার চাটমোহর উপজেলায় আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ভোটারদের উদ্দেশ্যে ‘নৌকায় ভোট দেয়ার’ হুশিয়ারী’র অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন ও সমাবেশে বক্তব্যকালে এমন হুশিয়ারী উচ্চারণ করছেন নেতারা। প্রতিদিন আচরণবিধি ভঙ্গ করে চলেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে আতংক ও উৎকন্ঠা।

চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতারা প্রায় প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করছেন। সেখানে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন তারা। নেতারা তাদের বক্তব্যে সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে নানাভাবে হুশিয়ারী করছেন নৌকায় ভোট দিতে। তারা বলছেন, নৌকায় ভোট দিলে কেন্দ্রে আসবেন, নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসবেন না। নৌকা ছাড়া কোনো কথা হবে না। অন্য কাউকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৫ নভেম্বর ভাদড়া বাইপাস মোড়, ৬ নভেম্বর মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, ১৩ নভেম্বর মুলগ্রামের রেলবাজার এলাকায় নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান এবং মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ বেনজীর প্রকাশ্যে এই উস্কানিমূলক হুমকিÑধামকির বক্তব্য দেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ৩টির বেশি নির্বাচনী অফিস করা এবং ৫টির বেশি মোটরসাইকেল ব্যবহার না করা, মানুষ জড়ো করে সমাবেশ না করার আচরণবিধি থাকলেও তারা তা মানছেন না।

আওয়ামীলীগ নেতাদের এমন বক্তব্য নিয়ে সর্বত্র চলছে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা। সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এতে করে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সাধারন ভোটারেরা। অনেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে কেন্দ্র দখল ও জোর করে ভোট কেটে নেওয়াসহ ভোট কারচুপি হওয়ার আশংকা করেছেন সাধারণ মানুষ।

মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, তার পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়াসহ পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ৩টার বেশি নির্বাচনী অফিস করার নিয়ম না থাকলেও নৌকার প্রার্থী প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক নির্বাচনী অফিস করছেন। আওয়ামীলীগ নেতারা সমাবেশ করে রীতিমতো উস্কানীমুলক হুমকি ধামকি দিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

মুলগ্রাম ইউনিয়নের স্বতন্ত্র (আ’লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, নৌকার সমর্থকরা আমার এক সমর্থকের বাড়ি ভেঙ্গে উল্টো আমাদের নামেই থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, যাতে আমরা অভিযোগ করার সুযোগ না পাই। আওয়ামীলীগ নেতারা নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের নিষেধ করছেন প্রকাশ্যে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান এই প্রার্থী।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনাই ঘটেনি। নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করতে একটি চক্র এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা নৌকার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়েই মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, তৃণমূল তথা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আমরা কোন রাজনীতি করিনা। নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে কাউকে কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হয়েছে পুরোটাই মিথ্যা দাবী করে তিনি বলেন, বিএনপি একটি চক্র মিথ্যা রটাচ্ছে। তাদের নির্বাচন করতে হলে মাঠে আসতে হবে, জনগণের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঘরে বসে মিথ্যা রটানোর চর্চা পরিহার করে সাংগঠনিক ভীত মজবুত করতে পরামর্শ দেন তিনি।

মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নুর মোহাম্মদ বেনজীর বলেন, স্থানীয় দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যেই পথ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আওয়ামীলীগ করে যদি আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে ভোট না দেন, তাহলে কেন্দ্রে আসার দরকার নেই। তবে কোন সাধারণ ভোটারকে উস্কানী, হুমকি ধামকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শণের বিষয়টি অসত্য ও ভিত্তিহীন।

নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মগরেব আলী ও মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের লিখিত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারপরও আমরা মৌখিকভাবে যে অভিযোগগুলো পাই সেগুলো তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আচরণবিধি মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাবনার চাটমোহরে নৌকায় ভোট দিতে আ’লীগ নেতাদের হুশিয়ারী; উৎকন্ঠায় ভোটাররা

আপডেট : ০১:০৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১

আসন্ন তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে নিয়ে পাবনার চাটমোহর উপজেলায় আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ভোটারদের উদ্দেশ্যে ‘নৌকায় ভোট দেয়ার’ হুশিয়ারী’র অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন ও সমাবেশে বক্তব্যকালে এমন হুশিয়ারী উচ্চারণ করছেন নেতারা। প্রতিদিন আচরণবিধি ভঙ্গ করে চলেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে আতংক ও উৎকন্ঠা।

চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতারা প্রায় প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন এলাকায় নৌকা মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করছেন। সেখানে নির্বাচনী সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন তারা। নেতারা তাদের বক্তব্যে সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে নানাভাবে হুশিয়ারী করছেন নৌকায় ভোট দিতে। তারা বলছেন, নৌকায় ভোট দিলে কেন্দ্রে আসবেন, নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে আসবেন না। নৌকা ছাড়া কোনো কথা হবে না। অন্য কাউকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৫ নভেম্বর ভাদড়া বাইপাস মোড়, ৬ নভেম্বর মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর, ১৩ নভেম্বর মুলগ্রামের রেলবাজার এলাকায় নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসব অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান এবং মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নূর মোহাম্মদ বেনজীর প্রকাশ্যে এই উস্কানিমূলক হুমকিÑধামকির বক্তব্য দেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ৩টির বেশি নির্বাচনী অফিস করা এবং ৫টির বেশি মোটরসাইকেল ব্যবহার না করা, মানুষ জড়ো করে সমাবেশ না করার আচরণবিধি থাকলেও তারা তা মানছেন না।

আওয়ামীলীগ নেতাদের এমন বক্তব্য নিয়ে সর্বত্র চলছে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা। সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। এতে করে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সাধারন ভোটারেরা। অনেকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন কিনা তা নিয়ে ভাবছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে কেন্দ্র দখল ও জোর করে ভোট কেটে নেওয়াসহ ভোট কারচুপি হওয়ার আশংকা করেছেন সাধারণ মানুষ।

মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করে বলেন, তার পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়াসহ পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ৩টার বেশি নির্বাচনী অফিস করার নিয়ম না থাকলেও নৌকার প্রার্থী প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক নির্বাচনী অফিস করছেন। আওয়ামীলীগ নেতারা সমাবেশ করে রীতিমতো উস্কানীমুলক হুমকি ধামকি দিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে ভোটাররা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।

মুলগ্রাম ইউনিয়নের স্বতন্ত্র (আ’লীগ বিদ্রোহী) প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, নৌকার সমর্থকরা আমার এক সমর্থকের বাড়ি ভেঙ্গে উল্টো আমাদের নামেই থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে, যাতে আমরা অভিযোগ করার সুযোগ না পাই। আওয়ামীলীগ নেতারা নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে ভোটারদের নিষেধ করছেন প্রকাশ্যে। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কাছে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান এই প্রার্থী।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনাই ঘটেনি। নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট করতে একটি চক্র এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা নৌকার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়েই মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দলে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, তৃণমূল তথা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে আমরা কোন রাজনীতি করিনা। নৌকা প্রতীকে ভোট না দিলে কাউকে কেন্দ্রে আসতে নিষেধ করা হয়েছে পুরোটাই মিথ্যা দাবী করে তিনি বলেন, বিএনপি একটি চক্র মিথ্যা রটাচ্ছে। তাদের নির্বাচন করতে হলে মাঠে আসতে হবে, জনগণের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঘরে বসে মিথ্যা রটানোর চর্চা পরিহার করে সাংগঠনিক ভীত মজবুত করতে পরামর্শ দেন তিনি।

মথুরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা নুর মোহাম্মদ বেনজীর বলেন, স্থানীয় দ্বন্দ্ব নিরসনের লক্ষ্যেই পথ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আওয়ামীলীগ করে যদি আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকে ভোট না দেন, তাহলে কেন্দ্রে আসার দরকার নেই। তবে কোন সাধারণ ভোটারকে উস্কানী, হুমকি ধামকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শণের বিষয়টি অসত্য ও ভিত্তিহীন।

নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা মগরেব আলী ও মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের লিখিত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারপরও আমরা মৌখিকভাবে যে অভিযোগগুলো পাই সেগুলো তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। আচরণবিধি মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।