ঢাকা ১০:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো, রিভিউ চাইবো

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
  • / 79
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এমন সিদ্ধান্তের পর চুপ থাকলেও শনিবার গণমাধ্যমের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন মেয়র জাহাঙ্গীর।

ভুল আর অপরাধ তো এক নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এ নেতা বলেন, নেত্রীকে (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) ভুল বুঝানো হয়েছে। মিথ্যাচার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। এ তিন আদর্শের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

মানুষের জীবনে ভুল থাকতে পারে, ভুল হতে পারে উল্লেখ করে গাজীপুরের মেয়র বলেন, কিছু কথা কেটে কেটে মিথ্যাচারসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি মানুষ, ভুল হতে পারে। আমি নেত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো। বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করবো। রিভিউ করবো।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভায় জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের খবরে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হলেও (রাত ৮টা পর্যন্ত) মেয়র এ ব্যাপারে অফিসিয়ালি কিছু পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। অধিকাংশ ফোন রিসিভ না করলেও দু’এক সাংবাদিকের ফোন রিসিভ করে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী মীগের সদস্য আব্দুল হাদী শামিম জানান, দলীয় পদ থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরের শহরে, গাছা, পূবাইল, টঙ্গী, কাউলতিয়া, বাসনসহ মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ নাগরিকরা আনন্দ মিছিল করেছে। তার নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়ে গাজীপুরের শহরের রাজবাড়ি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি।

শামিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। যিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলবে সেটা গ্রহণ করার কোনো সুযোগ আওয়ামী পরিবারের আছে বলে আমি মনে করি না। মেয়র আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার মতো কথা বলেছেন। যা ইতিহাস বিকৃতির শামিল। এ বক্তব্যে আমজনতার মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।

বোর্ডবাজার এলাকায় একই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দীপের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করেছে।

অপরদিকে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আতশবাজি ফুটিয়ে জাহাঙ্গীর বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উল্লাস করতে থাকে। এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের নিয়ে মেয়রের করা বিতর্কিত মন্তব্য নেতাকর্মীসহ কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। আমরা তার বহিষ্কারের দাবিতে আগে থেকেই আন্দোলন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছিলাম। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসায় পুরো গাজীপুরবাসীসহ দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে যতদিন পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে না, ততদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তরক্ষণ বন্ধ হবে না।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে এবং জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।

এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

এ ঘটনায় গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে কয়েক দফা।

এরপর ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাবও দেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘সুপার এডিট’ করা বলে বারবার দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।

এদিকে ওই ভিডিওর জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। ভিডিও প্রকাশে সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে বলে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের নেতার ধারণা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নেত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো, রিভিউ চাইবো

আপডেট : ১১:০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ নভেম্বর ২০২১
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এমন সিদ্ধান্তের পর চুপ থাকলেও শনিবার গণমাধ্যমের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন মেয়র জাহাঙ্গীর।

ভুল আর অপরাধ তো এক নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাবেক এ নেতা বলেন, নেত্রীকে (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী) ভুল বুঝানো হয়েছে। মিথ্যাচার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ। এ তিন আদর্শের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

মানুষের জীবনে ভুল থাকতে পারে, ভুল হতে পারে উল্লেখ করে গাজীপুরের মেয়র বলেন, কিছু কথা কেটে কেটে মিথ্যাচারসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি মানুষ, ভুল হতে পারে। আমি নেত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করবো। বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করবো। রিভিউ করবো।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভায় জাহাঙ্গীরকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের খবরে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হলেও (রাত ৮টা পর্যন্ত) মেয়র এ ব্যাপারে অফিসিয়ালি কিছু পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। অধিকাংশ ফোন রিসিভ না করলেও দু’এক সাংবাদিকের ফোন রিসিভ করে তিনি এ কথা জানিয়েছেন।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী মীগের সদস্য আব্দুল হাদী শামিম জানান, দলীয় পদ থেকে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে গাজীপুরের শহরে, গাছা, পূবাইল, টঙ্গী, কাউলতিয়া, বাসনসহ মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ নাগরিকরা আনন্দ মিছিল করেছে। তার নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়ে গাজীপুরের শহরের রাজবাড়ি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দলীয় কার্যালয়ের সামনে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন তিনি।

শামিম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। যিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আপত্তিকর কথা বলবে সেটা গ্রহণ করার কোনো সুযোগ আওয়ামী পরিবারের আছে বলে আমি মনে করি না। মেয়র আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার মতো কথা বলেছেন। যা ইতিহাস বিকৃতির শামিল। এ বক্তব্যে আমজনতার মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।

বোর্ডবাজার এলাকায় একই সময়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দীপের নেতৃত্বে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করেছে।

অপরদিকে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আতশবাজি ফুটিয়ে জাহাঙ্গীর বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উল্লাস করতে থাকে। এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের নিয়ে মেয়রের করা বিতর্কিত মন্তব্য নেতাকর্মীসহ কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। আমরা তার বহিষ্কারের দাবিতে আগে থেকেই আন্দোলন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছিলাম। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে এমন সিদ্ধান্ত আসায় পুরো গাজীপুরবাসীসহ দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এখন তার বিরুদ্ধে যতদিন পর্যন্ত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে না, ততদিন পর্যন্ত দেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তরক্ষণ বন্ধ হবে না।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে এবং জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন।

এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

এ ঘটনায় গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে কয়েক দফা।

এরপর ৩ অক্টোবর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে জাহাঙ্গীরকে এর জবাব দিতে বলা হয়। তিনি জবাবও দেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি ‘সুপার এডিট’ করা বলে বারবার দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম।

এদিকে ওই ভিডিওর জের ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলমের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে অনড় থাকেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গাজীপুরে দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। ভিডিও প্রকাশে সেই ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে বলে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগের নেতার ধারণা।