জয়পুরহাটে সার নিয়ে সিন্ডিকেট, বিপাকে আলু চাষীরা
- আপডেট : ০১:৪৯:২৯ অপরাহ্ন, সোমাবার, ২২ নভেম্বর ২০২১
- / 116
আবার পেলেও গুনতে হচ্ছে সরকারের নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা। তাই এবার বিঘাপ্রতি আলু চাষে ৪-৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত বছর আলুর চাষ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছিলেন কৃষকরা। তবে মাস দেড়েক আগে আলুর দাম কিছুটা কমে যায়। পরে আমন কেটে আলুর চাষ শুরু হলে আবারও আলুর বাজার বেড়ে যায়। ফলে এবারও লাভের আশায় ব্যাপক আলু চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এ আলু চাষে সবচেয়ে বেশি চাহিদা টিএসপি সারের।
কৃষকরা বলছেন, ডিলারদের কাছে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও মিলছেনা টিএসপি সার। আবার সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলেই মিলছে কাঙ্খিত টিএসপি সার। এসব কৃষকদের দেয়া হচ্ছেনা কোন মেমো।
১১শ টাকার টিএসপি সার তারা কৃষকদের কাছ থেকে নিচ্ছে ১৩ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত। তাই বিঘাপ্রতি কৃষকদের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে বলে জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হচ্ছে। গতবছর জেলায় ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছিল।
কেন্দুলী এলাকার কৃষক বেলাল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ৪ বিঘাজমিতে এবার আলুর চাষ করছি। শ্রমিকদের খরচও এবার অনেক বেশি। বিঘাপ্রতি ২৫ হাজার টাকার মত খরচ হচ্ছে এবার। সব থেকে বড় সমস্যা সার (টিএসপি) পাচ্ছিনা।
একই গ্রামের রেজুয়ান নামে আরেক কৃষক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমার টিএসপি লাগবে ১০ বস্তা কিন্তু আমি পেয়েছি ৬ বস্তা। ডিলাররা বলছে সার নেই। এখন বাকি সার আমি কোথায় পাব। বিঘাপ্রতি খরচও ৩-৪ হাজার টাকা বেশি। এতো টাকা খরচ করে শেষে যদি আমরা আলুর ন্যায্য দাম নাই পাই তাহলে তো পথে বসতে হবে।
এদিকে ডিলাররা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, প্রথমে যা বরাদ্দ ছিল তা কৃষকদের চাহিদা বেশি থাকায় শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন বরাদ্দ পেলে আর সংকট থাকবেনা। কোন দাম বেশি নেয়া হচ্ছেনা বলেও দাবি তাদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৫০ ভাগ জমিতে আলু চাষ শেষ হয়েছে। জেলায় চলতি মাসে ইউরিয়া ৫ হাজার ৪২২, টিএসপি ২ হাজার ৭১, এমওপি ৪ হাজার ৬২০ এবং ডিএপি সার ৪ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত মাসেরও বরাদ্দ রয়েছে।
বিসিআইসির ৫৮জন, বিএডিসির ১শত ১১ জন ও কার্ডধারী ৩শত ২৩ জন সার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব সার কিনতে পারছেন। কৃষি উপকরণ কৃষকরা যাতে নায্যমূল্যে কিনতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ৫শ মে. টন টিএসপি বরাদ্দ এসেছে। নতুন করে আবারও সার বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অতিরিক্ত বরাদ্দ আসলে আর কোন সমস্যা থাকবেনা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, নতুন করে আরও ৫শ মে.টন টিএসপি সার সরবরাহ করা হয়েছে। অতিরিক্ত আরও বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুত বরাদ্দ আসবে। এতে করে কৃষকদের আর কোন সারের সংকট থাকবেনা।
টিএসপি সারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত চলমান রয়েছে। কেউ যদি বেশি দামে সার বিক্রি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।