সপ্তম দফায় ভাসানচর যাচ্ছে দেড় হাজার রোহিঙ্গা
- আপডেট : ১১:৪১:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১
- / 69
পর্যায়ক্রমে সপ্তম দফায় দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রথমে চট্টগ্রামে নেয়া হবে পরে সেখান থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাহাজে করে ভাসানচর আশ্রয় শিবিরে নেয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে সম্পৃক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরসি) কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
কক্সবাজার-৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন জানান, উখিয়াসহ বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যেতে স্বেচ্ছায় রাজি হওয়া দেড় হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে তালিকা অনুযায়ী স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। তাদের ক্যাম্প থেকে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে নেয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকাল থেকেই রোহিঙ্গাদের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠের অস্থায়ী প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে জড়ো করা হচ্ছে। জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ার পর এটাই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রথম দফায় কার্যক্রম। শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও এ স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠের অস্থায়ী প্রত্যাবাসন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এক্সিবিশন) পুলিশ সুপার নাইমুল হক জানান, ক্যাম্পের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক আছে। রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যাওয়ার জন্য সেচ্ছায় অস্থায়ী প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে এসে জড়ো হয়েছে।
উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান মো. রফিক জানান, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ও সিক্স মার্ডারের পর ক্যাম্পের অনেকের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই রোহিঙ্গারা সেচ্ছায় ভাসানচর যাচ্ছে। পাশপাশি এ কার্যক্রমের সঙ্গে জাতিসংঘ যুক্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে ভাসানচর যাওয়ার উৎসাহ বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার ক্যাম্প ত্যাগ করেছে।
এর আগে ১ ও ২ এপ্রিল ষষ্ঠ দফায় (দুই অংশে) চার হাজার ৩৭২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে গেছে। মোট ছয় দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচর আশ্রয়শিবিরে ১৮ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এক হাজার ৬৪২ জন, ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় এক হাজার ৮০৪ জন, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার তিন হাজার ২৪২ জন, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় তিন হাজার ১৮ জন এবং পঞ্চম দফায় ৩ ও ৪ মার্চ চার হাজার ২১ জন, ষষ্ঠ দফায় ১ ও ২ এপ্রিল চার হাজার ৩৭২ জন রোহিঙ্গা রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের মে মাসে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে সেখানে নিয়ে রাখা হয়।
ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারের। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গার ধারণক্ষমতার আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। ১৩ হাজার একর আয়তনের এই চরে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগের ও তখনকার মিলিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছে।
ওই বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। আশ্রয়ণ-৩ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে।