ঢাকা ০৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পুরুষ শূন্য পীরগঞ্জের ঘিডোব গ্রাম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১
  • / 57
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় নির্বাচনের দিনটি উৎসবের মতোই পালন করা হয়। আবার কখনো কখনো এই উৎসব শোকে রূপান্তর হয়ে যায়। ঠিক এমনি একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোব গ্রামটি।

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সহিংসতার ঘটনায় বিজিবির ছোড়া গুলিতে ঘিডোব কেন্দ্র এলাকায় তিনজনের মৃত্যু হয়। সে থেকেই গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এর মাঝে শোক সামলে উঠার আগেই পুলিশের করা মামলার কারণে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।

সোমবার ঘিডোব গ্রামের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করে একটি সহিংসতার মামলা করেছে পুলিশ। পীরগঞ্জ থানায় করা এই মামলার কারণেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ঘিডোব গ্রামের পুরুষেরা। এতেকরে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।

মামলা হওয়ার পর সনগাও ইউনিয়নের ঘিডোব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে গুলিবিদ্ধের ছিদ্র ও যেখানে সেখানে রক্তের চিহ্ন। যা আগের রাতের সহিংসতার পরিমাণ বর্ণনা করে দিচ্ছে।

এই স্কুলটি এবার ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। কেন্দ্রর আশেপাশের এলাকায় থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশ। কেউ কান্না করতে চাইলেও হয়তো শব্দের ভয়ে চেপে রেখেছে। অপরিচিত মানুষ দেখলেই ভয়ে সরে যেতে চাইছে। এছাড়াও গ্রাম ঘুরে কিছু ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ছাড়া আর কোনো পুরুষ মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, ঘিডোব শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম ছিলো। কিন্তু ভোটের সঠিক ফলাফলের দাবি করাই আমাদের হয়তো ভুল হয়েছে। আমরা সংঘাত চাইনি। তবুও এই নির্বাচনটি আমাদের জন্যে দুঃস্বপ্নের মত এসেছে।

ওই নারী আরও জানান, পুলিশ বিজিবির গুলি বর্ষণের পরেই অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকে সম্পুর্ণ গ্রাম ভয়ে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। আমরা নারীরাও ভয় পাচ্ছি। আমরাও নিজেদের নিয়ে আটকের শঙ্কায় আছি। তবে বাড়ি ভিটার মায়ায় যেতে পারনি।

তিনি বলেন, আমরাই মরলাম আবার আমরাই মামলার স্বীকার হলাম। স্বজন হারানোর ব্যথা আমাদের, সঙ্গে গ্রেপ্তারের ভয়ে আমাদেরকেই থাকতে হচ্ছে। আহত স্বজনের চিকিৎসার খরচ আমাদের নিম্ন আয়ে সম্ভব না। পালিয়ে থাকার কারণে খাবারের জন্যে অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শান্তির জীবনের আশাও ভুলে যেতে হচ্ছে।

এই বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, থানা পুলিশ বাদি হয়ে ৬০০/৭০০ জনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পুরুষ শূন্য পীরগঞ্জের ঘিডোব গ্রাম

আপডেট : ১১:০৮:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় নির্বাচনের দিনটি উৎসবের মতোই পালন করা হয়। আবার কখনো কখনো এই উৎসব শোকে রূপান্তর হয়ে যায়। ঠিক এমনি একটি ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ঘিডোব গ্রামটি।

তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের সহিংসতার ঘটনায় বিজিবির ছোড়া গুলিতে ঘিডোব কেন্দ্র এলাকায় তিনজনের মৃত্যু হয়। সে থেকেই গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এর মাঝে শোক সামলে উঠার আগেই পুলিশের করা মামলার কারণে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।

সোমবার ঘিডোব গ্রামের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করে একটি সহিংসতার মামলা করেছে পুলিশ। পীরগঞ্জ থানায় করা এই মামলার কারণেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ঘিডোব গ্রামের পুরুষেরা। এতেকরে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামটি।

মামলা হওয়ার পর সনগাও ইউনিয়নের ঘিডোব গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘিডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে গুলিবিদ্ধের ছিদ্র ও যেখানে সেখানে রক্তের চিহ্ন। যা আগের রাতের সহিংসতার পরিমাণ বর্ণনা করে দিচ্ছে।

এই স্কুলটি এবার ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। কেন্দ্রর আশেপাশের এলাকায় থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশ। কেউ কান্না করতে চাইলেও হয়তো শব্দের ভয়ে চেপে রেখেছে। অপরিচিত মানুষ দেখলেই ভয়ে সরে যেতে চাইছে। এছাড়াও গ্রাম ঘুরে কিছু ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ছাড়া আর কোনো পুরুষ মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, ঘিডোব শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম ছিলো। কিন্তু ভোটের সঠিক ফলাফলের দাবি করাই আমাদের হয়তো ভুল হয়েছে। আমরা সংঘাত চাইনি। তবুও এই নির্বাচনটি আমাদের জন্যে দুঃস্বপ্নের মত এসেছে।

ওই নারী আরও জানান, পুলিশ বিজিবির গুলি বর্ষণের পরেই অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকে সম্পুর্ণ গ্রাম ভয়ে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। আমরা নারীরাও ভয় পাচ্ছি। আমরাও নিজেদের নিয়ে আটকের শঙ্কায় আছি। তবে বাড়ি ভিটার মায়ায় যেতে পারনি।

তিনি বলেন, আমরাই মরলাম আবার আমরাই মামলার স্বীকার হলাম। স্বজন হারানোর ব্যথা আমাদের, সঙ্গে গ্রেপ্তারের ভয়ে আমাদেরকেই থাকতে হচ্ছে। আহত স্বজনের চিকিৎসার খরচ আমাদের নিম্ন আয়ে সম্ভব না। পালিয়ে থাকার কারণে খাবারের জন্যে অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন শান্তির জীবনের আশাও ভুলে যেতে হচ্ছে।

এই বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, থানা পুলিশ বাদি হয়ে ৬০০/৭০০ জনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা করেছে। তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।