ঢাকা ০৭:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিংগাইরে ৬০ ইট ভাটায় পুড়ছে ফসলি জমির প্রাণ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
  • / 97

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৬০ ইট ভাটায় জ্বলছে আগুন, পুড়ছে ফসলি জমির প্রাণ। প্রতিবছরই কমছে ফসলি জমির মাটি। ২১৭.৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে এ বছর ৬০টি ইট ভাটা চালু রয়েছে।

ভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা আইনকে পাশ কাটিয়ে প্রভাবশালীরা আবাসিক এলাকায় ৩ ফসলি জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলেছে এ ভাটাগুলো। প্রতিদিন প্রায় ৪’শ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে ওইসব ভাটায়। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী জগতে। জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকিতে।

স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী উপজেলার বলধারা ইউনিয়নে ২৯টি, চান্দহরে ১০টি, বায়রাতে ৭টি, জামির্ত্তায় ৬টি, চারিগ্রামে ৩টি, সিংগাইর সদরে ৩টি ও ধল্লাতে ২টি ইট ভাটা চালু রয়েছে। যার ফলে দূষণের কবলে পড়েছে পুরো এলাকা। আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হ্রাস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।

নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসল, বসতবাড়ির ফলজ-বনজ গাছপালা । এছাড়া সরকার হারাচ্ছে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ এবং বৈধ গুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে কার্যত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এ মওসুমে।

এদিকে, ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমাণ মাটির যোগান দিতে প্রতিবছরই ৪-৫ শ বিঘা ৩ ফসলি জমি জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। বলধারা ইউনিয়নের উত্তর পারিল গ্রামের মো. আসলাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টে আমার দায়ের করা রীটের প্রেক্ষিতে বলধারা জলিল কোম্পানীর মালিকানাধীন সফর ব্রিকস নামের ইট ভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দিলেও মালিক পক্ষ প্রশাসন কে ম্যানেজ করে ভাটাটি চালু রেখেছে।

তিনি আরো বলেন, এক প্রভাবশালী জন প্রতিনিধিসহ অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে চালাচ্ছেন ইট ভাটা। চান্দহর ইউনিয়নের ওয়াইজনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের রিফায়েতপুর-মাধবপুর চকটি ইট ভাটার নগরীতে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ম্যানেজ করে শুরু করে ইট পোড়ানোর কর্মযজ্ঞ ।

সর্বনাশা এ ইট ভাটা বন্ধে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসি। এদিকে, জামির্ত্তা ইউনিয়ন বাসীরআবেদনের প্রেক্ষিতে গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ২-৩ ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তারপরও থেমে নেই মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সরেজমিন বলধারা ইউনিয়নের হোনাখালী চকে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ট্রলি যোগে নেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মহর ও কুদ্দুছ কোম্পানীর ইট ভাটায়। স্থানীয়রা জানান, দিনের পাশাপাশি রাতেও চলে মাটি কাটা।

ফসলি জমি রক্ষায় ২০১৩ সালের পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রন) আইন যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জমির মালিকসহ সচেতন সিংগাইরবাসী।

এ প্রসঙ্গে সিংগাইর উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুছ কোম্পানী বলেন, এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. টিপু সুলতান সপন বলেন, ইট ভাটাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর ০.৭০% হারে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ এলাকায় ব্যাপক হাওে ইট ভাটা গড়ে উঠার কারণে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নেয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সিংগাইর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্যা বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক কোনো ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে দেয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি আমি এসিল্যান্ড ও ইউএনওকে গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য বলবো।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সিংগাইরে ৬০ ইট ভাটায় পুড়ছে ফসলি জমির প্রাণ

আপডেট : ০১:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৬০ ইট ভাটায় জ্বলছে আগুন, পুড়ছে ফসলি জমির প্রাণ। প্রতিবছরই কমছে ফসলি জমির মাটি। ২১৭.৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে এ বছর ৬০টি ইট ভাটা চালু রয়েছে।

ভাটা নির্মাণ ও পরিচালনা আইনকে পাশ কাটিয়ে প্রভাবশালীরা আবাসিক এলাকায় ৩ ফসলি জমিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলেছে এ ভাটাগুলো। প্রতিদিন প্রায় ৪’শ মেট্রিক টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে ওইসব ভাটায়। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষি ও প্রাণী জগতে। জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকিতে।

স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী উপজেলার বলধারা ইউনিয়নে ২৯টি, চান্দহরে ১০টি, বায়রাতে ৭টি, জামির্ত্তায় ৬টি, চারিগ্রামে ৩টি, সিংগাইর সদরে ৩টি ও ধল্লাতে ২টি ইট ভাটা চালু রয়েছে। যার ফলে দূষণের কবলে পড়েছে পুরো এলাকা। আবাসিক এলাকা ও ফসলি জমিতে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় হ্রাস পেয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন।

নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের ফসল, বসতবাড়ির ফলজ-বনজ গাছপালা । এছাড়া সরকার হারাচ্ছে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ এবং বৈধ গুলোকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণে কার্যত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি এ মওসুমে।

এদিকে, ইট তৈরির প্রধান উপকরণ বিপুল পরিমাণ মাটির যোগান দিতে প্রতিবছরই ৪-৫ শ বিঘা ৩ ফসলি জমি জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। বলধারা ইউনিয়নের উত্তর পারিল গ্রামের মো. আসলাম হোসেন অভিযোগ করে বলেন, হাইকোর্টে আমার দায়ের করা রীটের প্রেক্ষিতে বলধারা জলিল কোম্পানীর মালিকানাধীন সফর ব্রিকস নামের ইট ভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দিলেও মালিক পক্ষ প্রশাসন কে ম্যানেজ করে ভাটাটি চালু রেখেছে।

তিনি আরো বলেন, এক প্রভাবশালী জন প্রতিনিধিসহ অনেকেই মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে চালাচ্ছেন ইট ভাটা। চান্দহর ইউনিয়নের ওয়াইজনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমাদের রিফায়েতপুর-মাধবপুর চকটি ইট ভাটার নগরীতে পরিণত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ম্যানেজ করে শুরু করে ইট পোড়ানোর কর্মযজ্ঞ ।

সর্বনাশা এ ইট ভাটা বন্ধে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট দফতরে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসি। এদিকে, জামির্ত্তা ইউনিয়ন বাসীরআবেদনের প্রেক্ষিতে গেল বছরের সেপ্টেম্বরে ২-৩ ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। তারপরও থেমে নেই মাটি কাটার কর্মযজ্ঞ।

মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সরেজমিন বলধারা ইউনিয়নের হোনাখালী চকে দেখা গেছে, প্রকাশ্য দিবালোকে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। ট্রলি যোগে নেয়া হচ্ছে পার্শ্ববর্তী মহর ও কুদ্দুছ কোম্পানীর ইট ভাটায়। স্থানীয়রা জানান, দিনের পাশাপাশি রাতেও চলে মাটি কাটা।

ফসলি জমি রক্ষায় ২০১৩ সালের পরিবেশ আইন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রন) আইন যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন জমির মালিকসহ সচেতন সিংগাইরবাসী।

এ প্রসঙ্গে সিংগাইর উপজেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুছ কোম্পানী বলেন, এ বিষয়ে সাক্ষাতে কথা হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. টিপু সুলতান সপন বলেন, ইট ভাটাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতিবছর ০.৭০% হারে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ এলাকায় ব্যাপক হাওে ইট ভাটা গড়ে উঠার কারণে ফসলি জমির টপসয়েল কেটে নেয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সিংগাইর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্যা বলেন, পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশ মোতাবেক কোনো ফসলি জমি থেকে মাটি কাটতে দেয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি আমি এসিল্যান্ড ও ইউএনওকে গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য বলবো।