ঢাকা ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরলাম কিন্তু ভাইকে পেলাম না

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • আপডেট : ০৬:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২
  • / 103
সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভিড় করছেন স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

তাদেরই একজন সূচনা (২০), যিনি নিখোঁজ বড় ভাই শাহজাহনের খোঁজে বাবা তাজুল ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন । তিনি জানান, তাদের বাড়ি ফটিকছড়িতে, চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ এলাকায় থাকেন তারা। তার ভাই ট্রাক চালক শাহজাহান পণ্য নিয়ে ডিপোতে গিয়েছিলেন শনিবার রাতে। আগুন লাগার আগে মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর সঙ্গে শেষবার কথা হয় বলে জানান সূচনা।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাতে এই ঘটনা জানতাম না, সকালে জানতে পেরেছি। সকাল থেকেই ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাই। ডিপোতে ট্রাক আছে, ভাই নেই।

রোববার ভোর থেকে সূচনাদের মত অনেকেই নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় করতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ড আর বারান্দায় সেই ভিড়ও বাড়তে থাকে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেইটে কোনো অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ালেই সেটির কাছে ছুটে যাচ্ছেন স্বজনরা। আবার সংবাদকর্মী বা পুলিশ সদস্যদের সামনে গিয়ে হাতের মোবাইল থাকা ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন স্বজনের খোঁজ।

বিস্ফোরণের পর ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালে আসা ছোট ভাই মানুন জানান, রাতে ডিপোতে আগুন লাগার পর আমাকে ফোন করে জানালো। কিন্তু পরে ফোন করে আর পাইনি। মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। সকালে হাসপাতালে আসলাম, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরলাম কিন্তু ভাইকে পেলাম না।

চট্টগ্রাম শহরের কলসিদীঘি পাড় এলাকার মো. ফারুক ওই ডিপোতে ট্রাকে মালামাল তোলা-নামানোর কাজ করেন। আগুন ও বিস্ফোরণের পর তিনিও নিখোঁজ বলে জানালেন তার মেয়ে ফাতেমা বেগম (২৪)।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও বারবার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোতে রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।

এদিকে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে মরদেহের সংখ্যা।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিস্ফোরণে ৪৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরলাম কিন্তু ভাইকে পেলাম না

আপডেট : ০৬:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ জুন ২০২২
সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের সন্ধানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভিড় করছেন স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে হাসপাতালের পরিবেশ।

তাদেরই একজন সূচনা (২০), যিনি নিখোঁজ বড় ভাই শাহজাহনের খোঁজে বাবা তাজুল ইসলামকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন । তিনি জানান, তাদের বাড়ি ফটিকছড়িতে, চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ এলাকায় থাকেন তারা। তার ভাই ট্রাক চালক শাহজাহান পণ্য নিয়ে ডিপোতে গিয়েছিলেন শনিবার রাতে। আগুন লাগার আগে মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর সঙ্গে শেষবার কথা হয় বলে জানান সূচনা।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাতে এই ঘটনা জানতাম না, সকালে জানতে পেরেছি। সকাল থেকেই ভাইয়ের ফোন বন্ধ পাই। ডিপোতে ট্রাক আছে, ভাই নেই।

রোববার ভোর থেকে সূচনাদের মত অনেকেই নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে হাসপাতালে ভিড় করতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ড আর বারান্দায় সেই ভিড়ও বাড়তে থাকে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেইটে কোনো অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ালেই সেটির কাছে ছুটে যাচ্ছেন স্বজনরা। আবার সংবাদকর্মী বা পুলিশ সদস্যদের সামনে গিয়ে হাতের মোবাইল থাকা ছবি দেখিয়ে জানতে চাইছেন স্বজনের খোঁজ।

বিস্ফোরণের পর ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালে আসা ছোট ভাই মানুন জানান, রাতে ডিপোতে আগুন লাগার পর আমাকে ফোন করে জানালো। কিন্তু পরে ফোন করে আর পাইনি। মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। সকালে হাসপাতালে আসলাম, বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরলাম কিন্তু ভাইকে পেলাম না।

চট্টগ্রাম শহরের কলসিদীঘি পাড় এলাকার মো. ফারুক ওই ডিপোতে ট্রাকে মালামাল তোলা-নামানোর কাজ করেন। আগুন ও বিস্ফোরণের পর তিনিও নিখোঁজ বলে জানালেন তার মেয়ে ফাতেমা বেগম (২৪)।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও বারবার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোতে রাসায়নিক থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়।

এদিকে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টো সময়ের সঙ্গে বেড়েই চলেছে মরদেহের সংখ্যা।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিস্ফোরণে ৪৪ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক মানুষ। তাদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।

অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসাথে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।