ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর, কলেজ অধ্যক্ষসহ গ্রেপ্তার ৫

গাজীপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট : ০৬:২৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / 101
কলেজ অধ্যক্ষ অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকালে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা পুলিশের মামলায় গাজীপুরের নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার বাদী হলেন গাজীপুর সদর থানার এসআই উৎপল কুমার। মামলায় অধ্যক্ষকে হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরীর সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অন্যায় আচরণসহ নানা অভিযোগের কারণে তার পদত্যাগের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে ও পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ-অবরোধ করে। এ সময়ে অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতার উস্কানিতে বহিরাগতরা পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের পিকআপ ভাংচুর করে। ওই ঘটনায় গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল কুমার বাদী হয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গাজীপুর মহানগরীর সালনা নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন, সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মতিউর রহমান, তার সহযোগী মাকসুদুর রহমান, মোবারক হোসেন ও তামিম হোসেন তন্ময়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানান, গাজীপুরের সালনা বাজার এলাকায় নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অবস্থান। কলেজটি দীর্ঘদিনের পুরনো ও এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে। ওই কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তারই জের ধরে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান ১০-১২ জন বহিরাগত লোক নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে যান। এসময়ে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে কলেজের অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং চড়থাপ্পড় মারে। ঘটনাটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল দেখে বিষয়টির প্রতিবাদ জানায়। এসময় অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা বাহিরাগতরাও ওই শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হন। পরে এ খবর কলেজের অন্যন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা অধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও বহিরাগতদের অধ্যক্ষের কক্ষে অবরোধ করে রাখে। পরে ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে তাদের কলেজের পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।

মামলার বাদি গাজীপুর সদর থানার এসআই উৎপল কুমার জানান, অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ওই মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে গাজীপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং তাদের বহনকারী পিকআপ গাড়িটি কলেজের মাঠে রেখে মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে যায়।

এক পর্যায়ে মহাসড়ক থেকে কিছু শিক্ষার্থী মাঠে থাকা পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে ও হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর করে। আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে পুলিশের সরকারি কাজেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে সোয়া ১২টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।

পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অবরুদ্ধ করে রাখা কলেজের অধ্যক্ষসহ ৫ জনকে থানায় হেফাজতে নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।

গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার সময় পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল কুমার বাদী হয়ে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কলেজের অধ্যক্ষসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। পরে থানা হেফাজতে থাকা পাঁচজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অধ্যক্ষ হলেন ৫নং আসামি। ১-৪ নং আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা পুলিশকে জানায় এ ঘটনায় অধ্যক্ষেরও ইন্ধন রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গাজীপুরে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর, কলেজ অধ্যক্ষসহ গ্রেপ্তার ৫

আপডেট : ০৬:২৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
কলেজ অধ্যক্ষ অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকালে পুলিশের গাড়ি ভাংচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা পুলিশের মামলায় গাজীপুরের নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার বাদী হলেন গাজীপুর সদর থানার এসআই উৎপল কুমার। মামলায় অধ্যক্ষকে হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গাজীপুর মহানগরীর সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অন্যায় আচরণসহ নানা অভিযোগের কারণে তার পদত্যাগের দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাসে ও পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ-অবরোধ করে। এ সময়ে অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতার উস্কানিতে বহিরাগতরা পুলিশের সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও পুলিশের পিকআপ ভাংচুর করে। ওই ঘটনায় গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল কুমার বাদী হয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতে একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- গাজীপুর মহানগরীর সালনা নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন, সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মতিউর রহমান, তার সহযোগী মাকসুদুর রহমান, মোবারক হোসেন ও তামিম হোসেন তন্ময়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক জানান, গাজীপুরের সালনা বাজার এলাকায় নাসিরুদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের অবস্থান। কলেজটি দীর্ঘদিনের পুরনো ও এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে। ওই কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তারই জের ধরে মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সালনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান ১০-১২ জন বহিরাগত লোক নিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষে যান। এসময়ে কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে কলেজের অধ্যক্ষ নাজমা নাসরিন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং চড়থাপ্পড় মারে। ঘটনাটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র হাসিবুল দেখে বিষয়টির প্রতিবাদ জানায়। এসময় অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা বাহিরাগতরাও ওই শিক্ষার্থীর ওপর চড়াও হন। পরে এ খবর কলেজের অন্যন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা অধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও বহিরাগতদের অধ্যক্ষের কক্ষে অবরোধ করে রাখে। পরে ৫০০-৬০০ শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে তাদের কলেজের পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।

মামলার বাদি গাজীপুর সদর থানার এসআই উৎপল কুমার জানান, অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা প্রায় দুই ঘণ্টা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ওই মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে গাজীপুর সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং তাদের বহনকারী পিকআপ গাড়িটি কলেজের মাঠে রেখে মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে যায়।

এক পর্যায়ে মহাসড়ক থেকে কিছু শিক্ষার্থী মাঠে থাকা পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়ে ও হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাংচুর করে। আন্দোলনকারীরা মহাসড়কে পুলিশের সরকারি কাজেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে সোয়া ১২টার দিকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে।

পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অবরুদ্ধ করে রাখা কলেজের অধ্যক্ষসহ ৫ জনকে থানায় হেফাজতে নিয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে।

গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার সময় পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানার উপ-পরিদর্শক উৎপল কুমার বাদী হয়ে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কলেজের অধ্যক্ষসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে। পরে থানা হেফাজতে থাকা পাঁচজনকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অধ্যক্ষ হলেন ৫নং আসামি। ১-৪ নং আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা পুলিশকে জানায় এ ঘটনায় অধ্যক্ষেরও ইন্ধন রয়েছে।