ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চমেকে ফের নিষিদ্ধ ছাত্র রাজনীতি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০৭:৪১:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২১
  • / 120
::চট্টগ্রাম প্রতিনিধি::

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কলেজ ক্যাম্পাসে সভা-সেমিনার ও মিছিল-স্লোগান না দিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রেখে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ৩ মার্চ ২০২১ সালের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার সুষ্ঠ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সভা-সমাবেশ, মিছিল, শ্লোগান ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘এমতাবস্থায় প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উদ্দ্যেশ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদেরকে জাতীয় দিবস বা অন্য কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, শ্লোগান ইত্যাদি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেয়া হলো।’

জারিকৃত নতুন নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগামীকাল সোমবার থেকে প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে, তারা যেন কোন জাতীয় দিবস বা অন্যকোন রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে। তার জন্যই পুনরায় এমন নির্দেশনা।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিবৃতির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এটিকে ‘অভাবনীয় সিদ্ধান্ত’ মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তারা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে। নাহলে জাতীয় দিবসে কলেজের যত রকম কার্যক্রম সবই নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘কলেজে অনেকদিন দুইটা গ্রুপের বিরোধ চলছে। এই এক বছরে তারা সবাই ৩-৪ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এখন আগামী ১৬ তারিখ থেকে একটা প্রফেশনাল পরীক্ষা আর এরা যদি আবার সংঘাত সংঘর্ষ করে তাহলে পরীক্ষাটা আটকে যাবে। এমনিতেই করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। যাতে এই পরীক্ষা আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি না হয় সেজন্যই এই বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।’

এদিকে, রোববার ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চমেক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছে কলেজ প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ কারণে আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবীর বলেন, ‘কলেজে আমাদের পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা থাকবেন। এর বাইরে থানা পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন।’

এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই চমেক ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ তুলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা সেবা দেয়া বন্ধও রেখেছিলেন।

কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে কর্ম বিরতি প্রত্যাহার করলেও সেই থেকে ক্যাম্পাসে কোন কর্মসূচি নেই কোনও পক্ষেরই।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) দীর্ঘদিন ধরেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তবে গত বছর ধরে হাসপাতালটিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ।

নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত এক বছরে ছোট-বড় একাধিক সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনাও ঘটে উভয় গ্রুপের মধ্যে। যা তদন্ত কমিটি থেকে শুরু করে পাল্টাপাল্টি মামলাতেও গড়ায়। গ্রেপ্তারও হয় দুই গ্রুপের কয়েকজন নেতা-কর্মী।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চমেকে ফের নিষিদ্ধ ছাত্র রাজনীতি

আপডেট : ০৭:৪১:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২১
::চট্টগ্রাম প্রতিনিধি::

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কলেজ ক্যাম্পাসে সভা-সেমিনার ও মিছিল-স্লোগান না দিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষার সুষ্ঠ পরিবেশ বজায় রেখে একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। গত ৩ মার্চ ২০২১ সালের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার সুষ্ঠ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সভা-সমাবেশ, মিছিল, শ্লোগান ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘এমতাবস্থায় প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের উদ্দ্যেশ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদেরকে জাতীয় দিবস বা অন্য কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, শ্লোগান ইত্যাদি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য পুনরায় নির্দেশ দেয়া হলো।’

জারিকৃত নতুন নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগামীকাল সোমবার থেকে প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছে, তারা যেন কোন জাতীয় দিবস বা অন্যকোন রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত থাকে। তার জন্যই পুনরায় এমন নির্দেশনা।

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিবৃতির ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে এটিকে ‘অভাবনীয় সিদ্ধান্ত’ মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। তারা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে। নাহলে জাতীয় দিবসে কলেজের যত রকম কার্যক্রম সবই নিয়ম অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘কলেজে অনেকদিন দুইটা গ্রুপের বিরোধ চলছে। এই এক বছরে তারা সবাই ৩-৪ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এখন আগামী ১৬ তারিখ থেকে একটা প্রফেশনাল পরীক্ষা আর এরা যদি আবার সংঘাত সংঘর্ষ করে তাহলে পরীক্ষাটা আটকে যাবে। এমনিতেই করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। যাতে এই পরীক্ষা আটকে যাওয়ার পরিস্থিতি না হয় সেজন্যই এই বিষয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।’

এদিকে, রোববার ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চমেক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছে কলেজ প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ কারণে আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবীর বলেন, ‘কলেজে আমাদের পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা থাকবেন। এর বাইরে থানা পুলিশের সদস্যরাও উপস্থিত থাকবেন।’

এর আগে চলতি বছরের শুরুতেই চমেক ছাত্রলীগের বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বহিরাগতদের হামলার অভিযোগ তুলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা সেবা দেয়া বন্ধও রেখেছিলেন।

কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে কর্ম বিরতি প্রত্যাহার করলেও সেই থেকে ক্যাম্পাসে কোন কর্মসূচি নেই কোনও পক্ষেরই।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) দীর্ঘদিন ধরেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তবে গত বছর ধরে হাসপাতালটিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে ইতোমধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ।

নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত এক বছরে ছোট-বড় একাধিক সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনাও ঘটে উভয় গ্রুপের মধ্যে। যা তদন্ত কমিটি থেকে শুরু করে পাল্টাপাল্টি মামলাতেও গড়ায়। গ্রেপ্তারও হয় দুই গ্রুপের কয়েকজন নেতা-কর্মী।