ঢাকা ০৫:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৬০ হাজার টাকা দিয়েও সরকারি ঘর পাননি আলিয়ারা!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০২:১০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 100
‘মোর গরুও গেলো, বাড়িও গেলো। মোর আর থাকার কোনো জায়গা নাই।’ এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে এসে প্রলাপ গাইতে থাকেন আলিয়ারা।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিক খুঁজতে ঠাকুরগাঁও প্রেশক্লাবে এসে ইউএনও ও তার শ্যালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এই নারী।

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী আলিয়ারা (২৫)। নিজের দুটি গুরুই ছিলো তার সম্বল। তবে তিনি চাচ্ছিলের মাথা গোজার একটি নিশ্চিত ঠিকানা। সেই আশাতেই নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করেন তিনি। গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা ইউএনওর শ্যালককে দিয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ওঠেন। তবে ঘরে ওঠার ৪ মাস পর তাকে বের করে দেয়া হয়।

আলিয়ারা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, হরিপুরের জীবনপুর কুশলগাঁও এলাকার ইয়াসিন আলীর মেয়ে আলিয়ারা খাতুন প্রায় ২ বছর পূর্বে ১ সন্তান নিয়ে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে দুলাভাই নঈমউদ্দীনের সরকারি খাস জমিতে নির্মিত বসতবাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেয়া হবে জানার পর আলিয়ারা তদবির শুরু করেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের তদারককারী তরিকুল ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মানিকের কথামত তিনি নিজের গাভী বিক্রি করে ইউএনওর শ্যালক তানভীন হাসানকে সরাসরি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করে।

আলিয়ারা জানান, টাকা দেয়ার পর তারা আলিয়ারাকে তারবাগান এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ২ নং ঘরটির দখল বুঝিয়ে দেয়। সেই ঘরে তিনি প্রায় চার মাস যাবৎ সন্তানসহ বসবাস করছিলেন। পরবর্তীতে তরিকুল ও মানিক আলিয়ারার কাছে পুনরায় ২০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দেবে বলে হুমকি দেয়। টাকা দিতে না পারায় তারা আলিয়ারাকে গত ১ সেপ্টেম্বর ঘর থেকে বের করে দেয়।

আলিয়ারা আরও জানান, এসব বিষয়ে আলিয়ারা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেটা জানার পর ১৩ তারিখ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম তাকে কৌশলে কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে ইউএনও আলিয়ারাকে পুলিশ ও তার কার্যালয়ের কর্মচারী দিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং হুমিকি দেয় যে, তাদের মতো করে জবানবন্দি না দিলে বড় ধরনের ক্ষতি করবে। সে সময় জোরপূর্বক আলিয়ারার কাছে তাদের মতো করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিকদের কাছে সাহায্য চান তিনি।

ইউএনওর শ্যালক তানভিন হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল করিম বলেন, ‘সেই মহিলা অনেক খারাপ ও মিথ্যে কথা বলে। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আমার পা জড়িয়ে ধরলে আমার লোকেরা তাকে টেনে সরিয়ে দিয়েছে।’

ইউএনও বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। সে যদি টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে এই দায় তার নিজের। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নেবো।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

৬০ হাজার টাকা দিয়েও সরকারি ঘর পাননি আলিয়ারা!

আপডেট : ০২:১০:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
‘মোর গরুও গেলো, বাড়িও গেলো। মোর আর থাকার কোনো জায়গা নাই।’ এভাবেই সাংবাদিকদের কাছে এসে প্রলাপ গাইতে থাকেন আলিয়ারা।

মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিক খুঁজতে ঠাকুরগাঁও প্রেশক্লাবে এসে ইউএনও ও তার শ্যালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এই নারী।

এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় নারী আলিয়ারা (২৫)। নিজের দুটি গুরুই ছিলো তার সম্বল। তবে তিনি চাচ্ছিলের মাথা গোজার একটি নিশ্চিত ঠিকানা। সেই আশাতেই নিজের শেষ সম্বল বিক্রি করেন তিনি। গরু বিক্রির ৬০ হাজার টাকা ইউএনওর শ্যালককে দিয়ে তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে ওঠেন। তবে ঘরে ওঠার ৪ মাস পর তাকে বের করে দেয়া হয়।

আলিয়ারা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, হরিপুরের জীবনপুর কুশলগাঁও এলাকার ইয়াসিন আলীর মেয়ে আলিয়ারা খাতুন প্রায় ২ বছর পূর্বে ১ সন্তান নিয়ে স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে দুলাভাই নঈমউদ্দীনের সরকারি খাস জমিতে নির্মিত বসতবাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ করে। ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর দেয়া হবে জানার পর আলিয়ারা তদবির শুরু করেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের তদারককারী তরিকুল ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী মানিকের কথামত তিনি নিজের গাভী বিক্রি করে ইউএনওর শ্যালক তানভীন হাসানকে সরাসরি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করে।

আলিয়ারা জানান, টাকা দেয়ার পর তারা আলিয়ারাকে তারবাগান এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ন প্রকল্পের ২ নং ঘরটির দখল বুঝিয়ে দেয়। সেই ঘরে তিনি প্রায় চার মাস যাবৎ সন্তানসহ বসবাস করছিলেন। পরবর্তীতে তরিকুল ও মানিক আলিয়ারার কাছে পুনরায় ২০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে ঘর থেকে বের করে দেবে বলে হুমকি দেয়। টাকা দিতে না পারায় তারা আলিয়ারাকে গত ১ সেপ্টেম্বর ঘর থেকে বের করে দেয়।

আলিয়ারা আরও জানান, এসব বিষয়ে আলিয়ারা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেটা জানার পর ১৩ তারিখ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল করিম তাকে কৌশলে কার্যালয়ে ডাকেন। সেখানে ইউএনও আলিয়ারাকে পুলিশ ও তার কার্যালয়ের কর্মচারী দিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন এবং হুমিকি দেয় যে, তাদের মতো করে জবানবন্দি না দিলে বড় ধরনের ক্ষতি করবে। সে সময় জোরপূর্বক আলিয়ারার কাছে তাদের মতো করে স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করে এবং সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তাই নিরাপত্তাহীনতার কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তার জন্য সাংবাদিকদের কাছে সাহায্য চান তিনি।

ইউএনওর শ্যালক তানভিন হাসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল করিম বলেন, ‘সেই মহিলা অনেক খারাপ ও মিথ্যে কথা বলে। তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। আমার পা জড়িয়ে ধরলে আমার লোকেরা তাকে টেনে সরিয়ে দিয়েছে।’

ইউএনও বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। সে যদি টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে এই দায় তার নিজের। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নেবো।’