ঢাকা ০৮:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

২০ লাখে কিডনি বিক্রি করে ডোনারকে দিত ২ লাখ

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:৩০:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
  • / 150
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচার সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজের আ্যডমিন মো. শাহরিয়ার ইমরানসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। চক্রটি প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীদের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা নিলেও কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে অগ্রিম ২ লাখ টাকা দিতো। কিন্তু ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর কিডনি ডোনারদের প্রতিশ্রুতির অর্থ না দিয়ে উল্টো নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মানুষকে কিডনি বিক্রির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), মো. মেহেদী হাসান (২৪), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. আব্দুল মান্নান (৪৫), ও মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু (৩৮)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগী কিডনি দাতাদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের চিহ্নিত করে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনে প্রলুব্ধ করত। এরপর ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষ গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের কার্যক্রম চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিত্তিতে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ কিডনি কেনবেচার সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

চক্রের ২য় দলটি ১ম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

চক্রের ৩য় একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে বিমান ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো।

কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। চক্রের হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা, মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত।

চক্রের অন্যতম আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করত। ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে।

আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকতো। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের চুপ রাখার চেষ্টা করতো তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

২০ লাখে কিডনি বিক্রি করে ডোনারকে দিত ২ লাখ

আপডেট : ১২:৩০:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অক্টোবর ২০২১
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অবৈধভাবে কিডনি কেনাবেচার সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম হোতা ও ফেসবুক পেজের আ্যডমিন মো. শাহরিয়ার ইমরানসহ ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। চক্রটি প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য রোগীদের কাছ থেকে ১৫-২০ লাখ টাকা নিলেও কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলে অগ্রিম ২ লাখ টাকা দিতো। কিন্তু ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর কিডনি ডোনারদের প্রতিশ্রুতির অর্থ না দিয়ে উল্টো নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক মানুষকে কিডনি বিক্রির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করেছে।

মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ (৩৬), মো. মেহেদী হাসান (২৪), মো. সাইফুল ইসলাম (২৮), মো. আব্দুল মান্নান (৪৫), ও মো. তাজুল ইসলাম ওরফে তাজু (৩৮)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগী কিডনি দাতাদের ৪টি পাসপোর্ট, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, ৫টি মোবাইল ও দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।

র‍্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের চিহ্নিত করে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনে প্রলুব্ধ করত। এরপর ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে সক্রিয় রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে অসহায় নিম্নআয়ের মানুষ ক্ষেত্র বিশেষ গ্রাহকরাও প্রতারিত হচ্ছে। আইন বহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের কার্যক্রম চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভিত্তিতে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, চক্রের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। তারা ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবৈধ কিডনি কেনবেচার সম্পূর্ণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চক্রের প্রথম গ্রুপ ঢাকায় অবস্থান করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে।

চক্রের ২য় দলটি ১ম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

চক্রের ৩য় একটি গ্রুপ প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের ঢাকায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য পরীক্ষা নিরিক্ষা সম্পন্ন করে। ব্লাড ম্যাচিং ও অন্যান্য ডায়াগনস্টিক টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পর তার পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং ও ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করে।

এই চক্রের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানকারী আরেকটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারকে বিদেশের এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করা থেকে শুরু করে হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ কিংবা অবৈধ উপায়ে বিমান ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকার মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠায়।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা এই চক্রের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করতো। বিপরীতে তারা কিডনি ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করে অগ্রীম ২ লাখ টাকা প্রদান করতো।

কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের পর প্রলোভনের শিকার কিডনি দাতাদের প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো। চক্রের হোতা ইমরান প্রতিটি কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন বাবদ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা, মান্নান ও তাজুল প্রতি কিডনি দাতা সংগ্রহ বাবদ যথাক্রমে ৫ লাখ ও ৩ লাখ টাকা গ্রহণ করত।

চক্রের অন্যতম আব্দুল মান্নান মূলত ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করত। ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬টির বেশি মামলা রয়েছে।

আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য চক্রটি কোনো প্রকার রিসিট, পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রমাণ ভুক্তভোগী ডোনারকে সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকতো। চুক্তি অনুযায়ী কিছু অর্থ ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমদের চুপ রাখার চেষ্টা করতো তারা।