ঢাকা ১০:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স তৈরির সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৮:২০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 158
রাজধানীতে ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকতার সঙ্গে যোগসাজস করে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ চালকদে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতো একটি চক্র। যারা নিজেদের পরিচয় দিত বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কর্মকর্তা হিসেবে।

গত মঙ্গল ও বুধবার বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলো, লিটন পাইক, সুজন পাইক, মো. হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, মো. আব্দুল খালেক, মো. আব্দুল্লাহ রনি, মো. সোহেল রানা, মো. সোহাগ, মো. নুরনবী ও মো. হুমায়ুন কবির।

এসময় তাদের কাছ থেকে বিআরটিএ’র ১৫৯টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৫৮টি ফাইল, একই কার্যালয়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৮৩টি, কর্মকর্তা আল ফয়সাল স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৭টি, এনামুল হক ইমন স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৭টি, ইকবাল আহমেদ স্বাক্ষরিত ও রিল মোহরযুক্ত ৪টি, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর ডোপ টেস্টের সনদ পাওয়ার আবেদন ১৫টি, ২টি মনিটর, ২টি সিপিইউ, ২টি কিবোর্ড, একটি কালার প্রিন্টার, লেমিলেটিং মেশিন একটি, ভিজিএ কেবল ২টি এবং ২টি পাওয়ার কট জব্দ করা হয়।

বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, দেশে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। যেখানে বেরিয়ে আসে চালকদের অদক্ষতা, অসাধু উপায়ে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়গুলো। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

তদন্তে বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ভুয়া অফিস পরিচালনাকারী একটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে দারুসসালাম থানার মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলসহ লিটন, সুজন ও হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জব্দকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনটি পরীক্ষা করে দেখে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বিপি (বাংলাদেশ পুলিশ) নম্বর দেখে গোয়েন্দা পুলিশ বুঝতে পারে বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সাথে এর কোনো মিল নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করলে তারা স্বীকার করে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সহযোগিতায় বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর পর তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সিল মোহর যুক্ত স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য মতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশে পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ এর কিছু অসাধু কর্মকতার সাথে যোগসাজস করে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতো। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভাররা। দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিআরটিএ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স তৈরির সিন্ডিকেট

আপডেট : ০৮:২০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
রাজধানীতে ভুয়া পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ বিভিন্ন জালিয়াতির মাধ্যমে বিআরটিএর কিছু অসাধু কর্মকতার সঙ্গে যোগসাজস করে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ চালকদে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতো একটি চক্র। যারা নিজেদের পরিচয় দিত বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কর্মকর্তা হিসেবে।

গত মঙ্গল ও বুধবার বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলো, লিটন পাইক, সুজন পাইক, মো. হাসান শেখ ওরফে আকচান, মোহাম্মদ আলী ওরফে মিস্টার, মো. আব্দুল খালেক, মো. আব্দুল্লাহ রনি, মো. সোহেল রানা, মো. সোহাগ, মো. নুরনবী ও মো. হুমায়ুন কবির।

এসময় তাদের কাছ থেকে বিআরটিএ’র ১৫৯টি ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৫৮টি ফাইল, একই কার্যালয়ের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাঈমা বেগম স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৮৩টি, কর্মকর্তা আল ফয়সাল স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৭টি, এনামুল হক ইমন স্বাক্ষরিত ও সিল মোহরযুক্ত ৭টি, ইকবাল আহমেদ স্বাক্ষরিত ও রিল মোহরযুক্ত ৪টি, বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক বরাবর ডোপ টেস্টের সনদ পাওয়ার আবেদন ১৫টি, ২টি মনিটর, ২টি সিপিইউ, ২টি কিবোর্ড, একটি কালার প্রিন্টার, লেমিলেটিং মেশিন একটি, ভিজিএ কেবল ২টি এবং ২টি পাওয়ার কট জব্দ করা হয়।

বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, দেশে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। যেখানে বেরিয়ে আসে চালকদের অদক্ষতা, অসাধু উপায়ে খুব সহজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার বিষয়গুলো। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

তদন্তে বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ভুয়া অফিস পরিচালনাকারী একটি চক্রের সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে দারুসসালাম থানার মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইলসহ লিটন, সুজন ও হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জব্দকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন ফাইল পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রতিবেদনটি পরীক্ষা করে দেখে। পুলিশ ভেরিফিকেশন বিপি (বাংলাদেশ পুলিশ) নম্বর দেখে গোয়েন্দা পুলিশ বুঝতে পারে বাংলাদেশ পুলিশের বিপি নম্বরের সাথে এর কোনো মিল নেই।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসা করলে তারা স্বীকার করে তাদের অন্যান্য সহযোগীদের সহযোগিতায় বিআরটিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আবেদন ফাইলগুলো অফিসের বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর পর তারা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া সিল মোহর যুক্ত স্বাক্ষরিত পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট তৈরি করে গ্রাহকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেয়া তথ্য মতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে দিয়াবাড়ী বিআরটিএ অফিস ও এর আশে পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছে এই দালাল চক্র। বিআরটিএ এর কিছু অসাধু কর্মকতার সাথে যোগসাজস করে কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ ছাড়াই অদক্ষ ড্রাইভারদের ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করে দিতো। এর ফলে লাইসেন্স পাচ্ছে অদক্ষ ড্রাইভাররা। দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।