ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের যেভাবে কৃতকার্য করতো তারা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১
  • / 130
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তথ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরির অভিযোগে ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

পুলিশ বলছে, এই প্রতারক চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো।

গ্রেপ্তারা হলেন- নূর রিমতি, মো. জামাল হোসেন, এ. কে. এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও মো.আবেদ আলী।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, নূর তাবাসসুম সুলতানা নামের একজন ২০১৯ সালে ধানমন্ডি কামরুননেছা গভ. গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য শিক্ষা বোর্ডে দেয়া মোবাইল নাম্বারে গত ২১ আগস্ট একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ওই বার্তায় তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর নাম ও পিতা-মাতার নামসহ জন্ম তারিখ পরিবর্তিত দেখতে পায়। তখন তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পায়।

এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত শুরু করে ডিবি।

ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জালিয়াতির সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার নূর রিমতি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট প্রয়োজন। জাল সনদ তৈরির জন্য সে তার মামা গ্রেপ্তার মো. জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ. কে. এম মোস্তফা কামাল এর সঙ্গে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন।

পুলিশ বলছে, চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল চক্র গ্রেপ্তার মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মো.আবেদ আলীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নূর ভিক্টিম তাবাসসুমের, পিতা ও মাতার সার্টিফিকেট সংক্রান্ত জেএসসি এবং এসএসসি পাসের সকল তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুম এর তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নুর রিমতির তথ্যসমূহ আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরবর্তীতে জন্ম তারিখও পরিবর্তন করে নেয়। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংযোজিত তথ্যসমূহ প্রদর্শন করে।

ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন। এই প্রতারক চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ইতোপূর্বে যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড থেকে কৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আর্কিইভে প্রবেশ করে ফলাফল যাচাই করে কোন পরিবর্তন দেখতে পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেন ডিবির এ পুলিশ কর্মকর্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের যেভাবে কৃতকার্য করতো তারা

আপডেট : ১২:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২১
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে তথ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরির অভিযোগে ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

পুলিশ বলছে, এই প্রতারক চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো।

গ্রেপ্তারা হলেন- নূর রিমতি, মো. জামাল হোসেন, এ. কে. এম মোস্তফা কামাল, মো. মারুফ, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মাহবুব আলম ও মো.আবেদ আলী।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রমনা ও চকবাজার থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, নূর তাবাসসুম সুলতানা নামের একজন ২০১৯ সালে ধানমন্ডি কামরুননেছা গভ. গার্লস হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য শিক্ষা বোর্ডে দেয়া মোবাইল নাম্বারে গত ২১ আগস্ট একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ওই বার্তায় তার রোল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঠিক থাকলেও শিক্ষার্থীর নাম ও পিতা-মাতার নামসহ জন্ম তারিখ পরিবর্তিত দেখতে পায়। তখন তারা স্কুল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে পরিবর্তনের বিষয়ে সত্যতা পায়।

এ ঘটনায় ধানমন্ডি মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত শুরু করে ডিবি।

ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জালিয়াতির সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেপ্তার নূর রিমতি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর সিটি মডেল কলেজ থেকে অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। কিন্তু তার ইতালি যাওয়ার জন্য এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট প্রয়োজন। জাল সনদ তৈরির জন্য সে তার মামা গ্রেপ্তার মো. জামাল হোসেনের মাধ্যমে এ. কে. এম মোস্তফা কামাল এর সঙ্গে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন।

পুলিশ বলছে, চুক্তি অনুযায়ী মোস্তফা কামাল শিক্ষা বোর্ডের দালাল চক্র গ্রেপ্তার মো. মারুফ, মাহবুব আলম, ফারুক আহম্মেদ স্বপন, মো.আবেদ আলীদের সঙ্গে সমন্বয় করে নূর ভিক্টিম তাবাসসুমের, পিতা ও মাতার সার্টিফিকেট সংক্রান্ত জেএসসি এবং এসএসসি পাসের সকল তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর তারা প্রথমে শিক্ষার্থীর নাম, পিতার নাম, মাতার নাম সংশোধনের জন্য শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফরমেটে আবেদন করেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শিক্ষা বোর্ডের কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের রেজাল্ট আর্কাইভে নির্ধারিত ফরমেটে সংরক্ষিত কৃতকার্য প্রকৃত শিক্ষার্থী নূর তাবাসসুম এর তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী নুর রিমতির তথ্যসমূহ আপলোডের মাধ্যমে জাল সনদ তৈরি করে। পরবর্তীতে জন্ম তারিখও পরিবর্তন করে নেয়। এমনকি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও পরিবর্তিত শিক্ষার্থীর সংযোজিত তথ্যসমূহ প্রদর্শন করে।

ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন। এই প্রতারক চক্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন করে জাল সনদ তৈরির মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ইতোপূর্বে যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ড থেকে কৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে শিক্ষা বোর্ডের রেজাল্ট আর্কিইভে প্রবেশ করে ফলাফল যাচাই করে কোন পরিবর্তন দেখতে পেলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্তৃপক্ষ বা পুলিশকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করেন ডিবির এ পুলিশ কর্মকর্তা।