যুদ্ধের মধ্যেও রপ্তানির পালে হাওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৭:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৪ এপ্রিল ২০২২
  • / 162
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা এসেছে দেশে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সোমবার (৪ এপ্রিল) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি।

২০২১ সালের মার্চের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এটা এ মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।

যুদ্ধের মাসেও রপ্তানি আয়ে এই বড় উল্লম্ফনে খুবই খুশি রপ্তানিকারকরা। অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা। একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ মাসের এই আয় তৃতীয় সর্বোচ্চ সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার।

এই মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। ।

শুধু তৈরি পোশাক নয়, প্রায় সব খাতেই রপ্তানি আয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) প্রায় সমান।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় প্রতি বছরই বাড়ে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে কমই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার মধ্যেও দারুণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যতটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আয় করছে বাংলাদেশ।

৯ মাসের রপ্তানি আয় এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৫.২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩২.০৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সকল পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ৯ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়াজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।

তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে। মার্চ শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮ কো‌টি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যুদ্ধের মধ্যেও রপ্তানির পালে হাওয়া

আপডেট : ০৭:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৪ এপ্রিল ২০২২
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত মার্চে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ (৪.৭৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি মুদ্রা এসেছে দেশে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৬ টাকা ২০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সোমবার (৪ এপ্রিল) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি।

২০২১ সালের মার্চের চেয়ে ৫৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এটা এ মাসের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।

যুদ্ধের মাসেও রপ্তানি আয়ে এই বড় উল্লম্ফনে খুবই খুশি রপ্তানিকারকরা। অর্থবছরের বাকি তিন মাসেও এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন তারা। একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ মাসের এই আয় তৃতীয় সর্বোচ্চ সবচেয়ে বেশি এসেছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ (৪.৯০ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার (৪.৮৫ বিলিয়ন) ডলার। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ (৪.২৯ বিলিয়ন) ডলার।

এই মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের মার্চ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। ।

শুধু তৈরি পোশাক নয়, প্রায় সব খাতেই রপ্তানি আয় বেড়েছে। সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাবে ৩৮ দশমিক ৬০ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) প্রায় সমান।

২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি আয় দেশে এসেছে। রপ্তানি আয় প্রায় প্রতি বছরই বাড়ে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারে কমই। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার মধ্যেও দারুণ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি যতটা লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে আয় করছে বাংলাদেশ।

৯ মাসের রপ্তানি আয় এবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মার্চ মাস শেষে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানিতে ৩৫.২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাকের রপ্তানি ৩২.০৭ শতাংশ বেড়েছে। ফলে সকল পণ্যের রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারে। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ৯ মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয়েও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এসময় চামড়াজাত খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৬৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ ও আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি।

তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে। মার্চ শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৮৮ কো‌টি ৭০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।