ঢাকা ০৫:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কোথায় আছেন চিত্রনায়িকা অলিভিয়া?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১০:৩১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 89
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা অলিভিয়া সিনেমায় নেই বহু বছর। তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিলো ১৯৯৫ সালে ‘দুশমনি’ সিনেমায়। এরপর আর তাকে পাওয়া যায়নি। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেই তিনি হারিয়ে যান শোবিজ থেকে। হারিয়ে যাওয়া নায়িকাদের মধ্যে এখনো দর্শক যাকে সবচেয়ে বেশি খোঁজেন তিনি হচ্ছেন ‘দি রেইন’খ্যাত নায়িকা অলিভিয়া।

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন অলিভিয়া। অভিনয় জীবনের শুরুতেই গ্লামার আর অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে নিয়েছিলেন। চিত্রনায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। তিনি-ই বাংলাদেশের একমাত্র নায়িকা যিনি মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বহ্নিশিখা’ সিনেমায় তিনি ছিলেন উত্তম কুমারের নায়িকা। সেবারই প্রথম ও শেষ বারের মতো কোনো বাংলাদেশি নায়িকার বিপরীতে কাজ করেন এই মহানায়ক।

বহুবছর ধরে অলিভিয়া নিজেকে আড়ালে রেখেছেন। তবে একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে তিনি রাজধানীর বনানীতেই আছেন। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিবার কিংবা কোন সাংবাদিকের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। সিনেমার অনেক পরিচালক এবং শিল্পী তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

অলিভিয়া প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রের আরেক জীবন্ত কিংবদন্তী নায়িকা শবনম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে আমার সঙ্গে রাজধানীর বারিধারা পার্কে দেখা হয়েছিলো। তখন দু’জন কুশল বিনিময় করেছিলাম। এরপর আসলে তারসঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। যে সময়টাতে অলিভিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো সেই সময়টাতে তিনি পার্কে হাঁটতে এসেছিলেন। তারপর আমি এখনো নিয়মিত পার্কে হাঁটলেও তার দেখা আর পাইনি কোনদিন।’

এর আগে একবার ববিতা জানিয়েছিলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রায় সময়ই দেখা হয় তার। এখনো আগের মতোই হাসিখুশি আছে ও। স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই কাটছে তার জীবন।’

খ্রিস্টান মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অলিভিয়া গোমেজের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। পরিচালক জহির রায়হান তাকে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে নির্বাচিত করেও তাকে বাদ দেন। তবে কী সেই কারণ ছিলো জানা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এস এম শফির পরিচালনায় ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ সিনেমায় তিনি প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে ‘দি রেইন’ সিনেমায় অভিনয় করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

ক্যারিয়ারে মোট ৫৩টি সিনেমা করেন অলিভিয়া। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘মাসুদ রানা’,‘শ্রীমতি ৪২০’,‘ যাদুর বাঁশী’,‘বে-দ্বীন’,‘পাগলা রাজা’, ‘বন্ধু’,‘ চন্দ্রলেখা’,‘লুটেরা’,‘শাহজাদী গুলবাহার’,‘ডার্লিং’,‘লাল মেম সাহেব’,‘টক্কর’,‘হিম্মত ওয়ালী’,‘রাস্তার রাজা’,‘লাখে একটা’,‘ সারেন্ডার’,‘হাতকড়া’,‘দুশমনী’, ‘তকদিরের খেলা’,‘কালা খুন’ ইত্যাদি।

‘দি রেইন’ সিনেমার গাওয়া ‘আয়রে মেঘ আয়রে’ এবং ‘লাল মেম সাহেব’ সিনেমায় ‘চিরদিন পাশে থেকো বন্ধু’ গানটি এখনো দর্শকের মনে গেঁথে আছে অলিভিয়ারই কারণে। হারিয়ে যাওয়া অনেক নায়িকাকে খুঁজে পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র অলিভিয়াকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে তার ভক্তরা তাকে এখনো খুঁজে বেড়ান, তাদের বিশ্বাস একদিন তারা অলিভিয়ার দেখা পাবেন।

শোনা গিয়েছিলো, চলচ্চিত্রকার এস এম শফিকে ভালোবেসে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন অলিভিয়া এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শফি। সেই শোকে অলিভিয়া চলচ্চিত্র জগৎ ত্যাগ করেন। পরে বিয়ে করেন ফতুল্লার মুনলাইট টেক্সটাইল মিলের কর্ণধার হাসানকে। বর্তমানে বসবাস করছেন বনানীর ডিওএসএইচ-এর বাড়িতে। ধর্ম-কর্ম পালন ও সংসারধর্ম নিয়ে ভালোই আছেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কোথায় আছেন চিত্রনায়িকা অলিভিয়া?

আপডেট : ১০:৩১:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি নায়িকা অলিভিয়া সিনেমায় নেই বহু বছর। তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিলো ১৯৯৫ সালে ‘দুশমনি’ সিনেমায়। এরপর আর তাকে পাওয়া যায়নি। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থাতেই তিনি হারিয়ে যান শোবিজ থেকে। হারিয়ে যাওয়া নায়িকাদের মধ্যে এখনো দর্শক যাকে সবচেয়ে বেশি খোঁজেন তিনি হচ্ছেন ‘দি রেইন’খ্যাত নায়িকা অলিভিয়া।

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন অলিভিয়া। অভিনয় জীবনের শুরুতেই গ্লামার আর অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শক হৃদয়ে স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে নিয়েছিলেন। চিত্রনায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে জুটি বেঁধে কাজ করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। তিনি-ই বাংলাদেশের একমাত্র নায়িকা যিনি মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বহ্নিশিখা’ সিনেমায় তিনি ছিলেন উত্তম কুমারের নায়িকা। সেবারই প্রথম ও শেষ বারের মতো কোনো বাংলাদেশি নায়িকার বিপরীতে কাজ করেন এই মহানায়ক।

বহুবছর ধরে অলিভিয়া নিজেকে আড়ালে রেখেছেন। তবে একটি বিশেষ সূত্রে জানা গেছে তিনি রাজধানীর বনানীতেই আছেন। কিন্তু চলচ্চিত্র পরিবার কিংবা কোন সাংবাদিকের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। সিনেমার অনেক পরিচালক এবং শিল্পী তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

অলিভিয়া প্রসঙ্গে চলচ্চিত্রের আরেক জীবন্ত কিংবদন্তী নায়িকা শবনম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে আমার সঙ্গে রাজধানীর বারিধারা পার্কে দেখা হয়েছিলো। তখন দু’জন কুশল বিনিময় করেছিলাম। এরপর আসলে তারসঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। যে সময়টাতে অলিভিয়ার সঙ্গে দেখা হয়েছিলো সেই সময়টাতে তিনি পার্কে হাঁটতে এসেছিলেন। তারপর আমি এখনো নিয়মিত পার্কে হাঁটলেও তার দেখা আর পাইনি কোনদিন।’

এর আগে একবার ববিতা জানিয়েছিলেন, ‘আমার সঙ্গে প্রায় সময়ই দেখা হয় তার। এখনো আগের মতোই হাসিখুশি আছে ও। স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই কাটছে তার জীবন।’

খ্রিস্টান মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অলিভিয়া গোমেজের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের করাচিতে। পরিচালক জহির রায়হান তাকে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সিনেমায় নায়িকা হিসেবে নির্বাচিত করেও তাকে বাদ দেন। তবে কী সেই কারণ ছিলো জানা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এস এম শফির পরিচালনায় ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’ সিনেমায় তিনি প্রথম অভিনয় করেন। পরবর্তীতে নায়ক ওয়াসিমের সঙ্গে ‘দি রেইন’ সিনেমায় অভিনয় করে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।

ক্যারিয়ারে মোট ৫৩টি সিনেমা করেন অলিভিয়া। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘মাসুদ রানা’,‘শ্রীমতি ৪২০’,‘ যাদুর বাঁশী’,‘বে-দ্বীন’,‘পাগলা রাজা’, ‘বন্ধু’,‘ চন্দ্রলেখা’,‘লুটেরা’,‘শাহজাদী গুলবাহার’,‘ডার্লিং’,‘লাল মেম সাহেব’,‘টক্কর’,‘হিম্মত ওয়ালী’,‘রাস্তার রাজা’,‘লাখে একটা’,‘ সারেন্ডার’,‘হাতকড়া’,‘দুশমনী’, ‘তকদিরের খেলা’,‘কালা খুন’ ইত্যাদি।

‘দি রেইন’ সিনেমার গাওয়া ‘আয়রে মেঘ আয়রে’ এবং ‘লাল মেম সাহেব’ সিনেমায় ‘চিরদিন পাশে থেকো বন্ধু’ গানটি এখনো দর্শকের মনে গেঁথে আছে অলিভিয়ারই কারণে। হারিয়ে যাওয়া অনেক নায়িকাকে খুঁজে পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র অলিভিয়াকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে তার ভক্তরা তাকে এখনো খুঁজে বেড়ান, তাদের বিশ্বাস একদিন তারা অলিভিয়ার দেখা পাবেন।

শোনা গিয়েছিলো, চলচ্চিত্রকার এস এম শফিকে ভালোবেসে ১৯৭২ সালে বিয়ে করেন অলিভিয়া এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৯৫ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান শফি। সেই শোকে অলিভিয়া চলচ্চিত্র জগৎ ত্যাগ করেন। পরে বিয়ে করেন ফতুল্লার মুনলাইট টেক্সটাইল মিলের কর্ণধার হাসানকে। বর্তমানে বসবাস করছেন বনানীর ডিওএসএইচ-এর বাড়িতে। ধর্ম-কর্ম পালন ও সংসারধর্ম নিয়ে ভালোই আছেন তিনি।