ভিত্তি আর পিলারেই ১৩ বছর পার!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:৫৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২১
  • / 227

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষে ২০০৮ সালে সম্প্রসারিত নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু পর থমকে আছে। তিন তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মানকাজ স্থবির হওয়ার ফলে এ উপজেলার মানুষ স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হয়ে আছে। অপরদিকে ৩১ শয্যার অতি পুরাতন ভবনটি দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে জীর্ণদশা। পুরানো ৩১ শয্যার হাসপাতাল ভবন ধ্বসে পড়ার উপক্রম অন্যদিকে ৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবনটি ভিত্তি আর পিলারেই তেরো বছর পার।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজ নামে বরিশালের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সম্প্রসারিত ৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণ কাজ পান। ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই কার্যাদেশের ১৮ মাসের মধ্যে সম্প্রসারিত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা।

পরে ভবন নির্মানের ভিত্তির জন্য দুইটি পুকুর খনন করে ভিত্তি আর পিলার নির্মাণ পরবর্তী ফেলে রাখা হয়। এমন অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়ে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ। কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার এ ব্যাপারে আবেদন নিবেদন করার পর ২০১৪ সালের ২৫ শে জুন মেসার্স নূর-ই এন্টারপ্রাইজ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দরপত্রের কার্যাদেশ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এতে হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবন নির্মান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪ ইউনিটের ২টি নতুন আবাসিক ভবন নির্মান, একটি নতুন দ্বিতল বর্হিবিভাগ ভবন ও পুরনো হাসপাতাল ভবন এবং কোয়াটার গুলোর সংষ্কারের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতার জটিলতায় উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পুরানো ৩১ শয্যার হাসপাতাল ভবনটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও দুই জন চিকিৎসক নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসক সংকট ছাড়াও ১৩ বছর পূর্বে ঘোষনা করা ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির দায়সারা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

সামান্য বৃষ্টি হলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনের ছাদ চুয়ে পানি পড়া, সিলিং ও ভিম থেকে কংক্রিট ভেঙে পড়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসস্থলের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা চিকিৎসক কর্মচারীদের।

কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করিডোরের দৃশ্য

উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করুণ হাল বিরাজ করছে। পিরোজপুর জেলার ৭৯ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাউখালী উপজেলাটি পাঁচটি ইউনিয়ন নিযে গঠিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন ডাক্তারের স্থলে ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৫ জন ।

এছাড়া বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ কোন সমস্যায়ও ৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে যেতে হয়। গাইনী বিভাগ, এথেন্সিয়া বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, আরএমও বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক দীর্ঘদিন পর্যন্ত না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে উপজেলাবাসী রয়েছে।

কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের ফেলা রাখা অবস্থা

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, বহুবার আবেদন নিবেদনের পরও ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করনের জন্য নতুন ভবন নির্মানের কাজ শুরু করা হয়নি। ডাক্তার এবং জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। ঝুকিপূর্ণ ভবনে ডাক্তার এবং রোগী উভয়ই আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনাসহ প্রানহানি ঘটতে পারে।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভিত্তি আর পিলারেই ১৩ বছর পার!

আপডেট : ১২:৫৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২১

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষে ২০০৮ সালে সম্প্রসারিত নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু পর থমকে আছে। তিন তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মানকাজ স্থবির হওয়ার ফলে এ উপজেলার মানুষ স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হয়ে আছে। অপরদিকে ৩১ শয্যার অতি পুরাতন ভবনটি দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে জীর্ণদশা। পুরানো ৩১ শয্যার হাসপাতাল ভবন ধ্বসে পড়ার উপক্রম অন্যদিকে ৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল ভবনটি ভিত্তি আর পিলারেই তেরো বছর পার।

জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট মেসার্স নূরই এন্টারপ্রাইজ নামে বরিশালের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সম্প্রসারিত ৫০ শয্যার নতুন ভবন নির্মাণ কাজ পান। ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই কার্যাদেশের ১৮ মাসের মধ্যে সম্প্রসারিত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা।

পরে ভবন নির্মানের ভিত্তির জন্য দুইটি পুকুর খনন করে ভিত্তি আর পিলার নির্মাণ পরবর্তী ফেলে রাখা হয়। এমন অবস্থায় স্থবির হয়ে পড়ে হাসপাতাল নির্মাণ কাজ। কর্তৃপক্ষের নিকট বারবার এ ব্যাপারে আবেদন নিবেদন করার পর ২০১৪ সালের ২৫ শে জুন মেসার্স নূর-ই এন্টারপ্রাইজ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দরপত্রের কার্যাদেশ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এতে হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবন নির্মান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৪ ইউনিটের ২টি নতুন আবাসিক ভবন নির্মান, একটি নতুন দ্বিতল বর্হিবিভাগ ভবন ও পুরনো হাসপাতাল ভবন এবং কোয়াটার গুলোর সংষ্কারের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন হাসপাতাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পে দীর্ঘসূত্রতার জটিলতায় উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পুরানো ৩১ শয্যার হাসপাতাল ভবনটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও দুই জন চিকিৎসক নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেড় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসক সংকট ছাড়াও ১৩ বছর পূর্বে ঘোষনা করা ঝুকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির দায়সারা চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

সামান্য বৃষ্টি হলেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনের ছাদ চুয়ে পানি পড়া, সিলিং ও ভিম থেকে কংক্রিট ভেঙে পড়া নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের আবাসস্থলের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা চিকিৎসক কর্মচারীদের।

কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করিডোরের দৃশ্য

উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় করুণ হাল বিরাজ করছে। পিরোজপুর জেলার ৭৯ দশমিক ৬৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কাউখালী উপজেলাটি পাঁচটি ইউনিয়ন নিযে গঠিত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন ডাক্তারের স্থলে ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৫ জন ।

এছাড়া বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ কোন সমস্যায়ও ৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে যেতে হয়। গাইনী বিভাগ, এথেন্সিয়া বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, আরএমও বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক দীর্ঘদিন পর্যন্ত না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে উপজেলাবাসী রয়েছে।

কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণের ফেলা রাখা অবস্থা

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, বহুবার আবেদন নিবেদনের পরও ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করনের জন্য নতুন ভবন নির্মানের কাজ শুরু করা হয়নি। ডাক্তার এবং জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। ঝুকিপূর্ণ ভবনে ডাক্তার এবং রোগী উভয়ই আতংকের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনাসহ প্রানহানি ঘটতে পারে।