বিদেশ ভ্রমণে প্রধান গন্তব্য ভারত ও সৌদি আরব

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২২
  • / 177
বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাদের পছন্দের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার পরের স্থানে আছে থাইল্যান্ড।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ শীর্ষক এই জরিপে বলা হয়েছে, বিভাগ ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি বিদেশে ঘুরতে যান ঢাকার পর্যটকেরা।

দেশের পর্যটনশিল্প নিয়ে এটিই বিবিএসের করা প্রথম জরিপ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে। জরিপের ফল গত মাসে প্রকাশ করা হয়। বিবিএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে পর্যটকের সংখ্যা ও ভ্রমণ ব্যয়ের পরিমাণ এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই জরিপ করা হয়েছে।

দেশে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগে গত বছরের মার্চ মাসে জরিপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যাঁরা দেশ কিংবা দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে গিয়ে এক রাতের বেশি সময় কাটিয়েছেন, তাদেরকেই এই জরিপে পর্যটক হিসেবে ধরা হয়েছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৩৯ হাজার ৪১৭টি খানার ওপর পরিচালিত হয় এই জরিপ।

জরিপের তথ্য বলছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৯ লাখ ২১ হাজার পর্যটক বিদেশে ঘুরতে যান। ভ্রমণে গিয়ে একেকজন পর্যটক বিদেশে গড়ে ৬ দিন অবস্থান করেন।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী বিদেশভ্রমণে গিয়ে বাংলাদেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেন চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশই যায় চিকিৎসাসেবায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় পরিবহনে। বেশি খরচের তৃতীয় স্থানে রয়েছে কেনাকাটা, যা শতকরা হিসাবে ২৩ শতাংশ।

বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বহির্গামী পর্যটনে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদেশভ্রমণে যাওয়ার আগে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে খরচ হয়েছে আরও সাড়ে ৭৫০ কোটি টাকা।

বিদেশভ্রমণে বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে ডিসেম্বর মাস। জরিপে অংশ নেয়া ১৪ শতাংশ পর্যটক জানান, তারা ডিসেম্বরে ঘুরতে গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যটক এপ্রিল মাসে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছেন। পর্যটক তৃতীয় পছন্দের মাস জানুয়ারি। এই মাসে ঘুরতে যান ১১ শতাংশ পর্যটক। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে সবচেয়ে কম ঘুরতে যান।

বিবিএস বলছে, বিদেশগামী পর্যটকদের মধ্যে ২৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, যা শতকরা হারে মোট পর্যটকের ৬০ শতাংশ এবং সংখ্যায় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিদেশভ্রমণকারীদের হার ১৩ শতাংশ, যা সংখ্যায় ৩ লাখ ৭৩ হাজার। ১৪ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ৫ লাখ ৮ হাজার বিদেশে ঘুরতে যায়। এই সংখ্যা মোট পর্যটকের ১৭ শতাংশ। ষাটোর্ধ্ব বয়সের বিদেশভ্রমণকারীদের সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার, যা মোট পর্যটকের ১০ শতাংশ।

জরিপে ৪৮ শতাংশ পর্যটক জানান, তারা বিদেশভ্রমণে গিয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাত যাপন করেন। ২৬ শতাংশ সাধারণ মানের হোটেলে রাত যাপনের কথা বলেছেন। ৭ শতাংশ পাঁচ তারকা হোটেলে রাত যাপনের তথ্য জানান।

বিভাগ ভিত্তিতে বিদেশভ্রমণে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ঢাকা বিভাগের মানুষ। মোট পর্যটকের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ এই বিভাগের। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগের পর্যটক ২০ শতাংশ। মোট পর্যটকের ১৮ শতাংশ হলো তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট বিভাগের। সবচেয়ে কম বিদেশভ্রমণে যান ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের মানুষ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিদেশ ভ্রমণে প্রধান গন্তব্য ভারত ও সৌদি আরব

আপডেট : ১২:১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২২
বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য প্রতিবেশী দেশ ভারত। তাদের পছন্দের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া। সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার পরের স্থানে আছে থাইল্যান্ড।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট’ শীর্ষক এই জরিপে বলা হয়েছে, বিভাগ ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি বিদেশে ঘুরতে যান ঢাকার পর্যটকেরা।

দেশের পর্যটনশিল্প নিয়ে এটিই বিবিএসের করা প্রথম জরিপ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জরিপটি করা হয়েছে। জরিপের ফল গত মাসে প্রকাশ করা হয়। বিবিএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে পর্যটকের সংখ্যা ও ভ্রমণ ব্যয়ের পরিমাণ এবং মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই জরিপ করা হয়েছে।

দেশে করোনা সংক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঠিক আগে গত বছরের মার্চ মাসে জরিপের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যাঁরা দেশ কিংবা দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে গিয়ে এক রাতের বেশি সময় কাটিয়েছেন, তাদেরকেই এই জরিপে পর্যটক হিসেবে ধরা হয়েছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে দেশের ৩৯ হাজার ৪১৭টি খানার ওপর পরিচালিত হয় এই জরিপ।

জরিপের তথ্য বলছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৯ লাখ ২১ হাজার পর্যটক বিদেশে ঘুরতে যান। ভ্রমণে গিয়ে একেকজন পর্যটক বিদেশে গড়ে ৬ দিন অবস্থান করেন।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী বিদেশভ্রমণে গিয়ে বাংলাদেশের পর্যটকেরা সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেন চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশই যায় চিকিৎসাসেবায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয় পরিবহনে। বেশি খরচের তৃতীয় স্থানে রয়েছে কেনাকাটা, যা শতকরা হিসাবে ২৩ শতাংশ।

বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বহির্গামী পর্যটনে ব্যয় হয়েছে ৩৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিদেশভ্রমণে যাওয়ার আগে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে খরচ হয়েছে আরও সাড়ে ৭৫০ কোটি টাকা।

বিদেশভ্রমণে বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে ডিসেম্বর মাস। জরিপে অংশ নেয়া ১৪ শতাংশ পর্যটক জানান, তারা ডিসেম্বরে ঘুরতে গেছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ পর্যটক এপ্রিল মাসে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছেন। পর্যটক তৃতীয় পছন্দের মাস জানুয়ারি। এই মাসে ঘুরতে যান ১১ শতাংশ পর্যটক। অন্যদিকে সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে সবচেয়ে কম ঘুরতে যান।

বিবিএস বলছে, বিদেশগামী পর্যটকদের মধ্যে ২৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি, যা শতকরা হারে মোট পর্যটকের ৬০ শতাংশ এবং সংখ্যায় ১৭ লাখ ৩৮ হাজার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী বিদেশভ্রমণকারীদের হার ১৩ শতাংশ, যা সংখ্যায় ৩ লাখ ৭৩ হাজার। ১৪ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ৫ লাখ ৮ হাজার বিদেশে ঘুরতে যায়। এই সংখ্যা মোট পর্যটকের ১৭ শতাংশ। ষাটোর্ধ্ব বয়সের বিদেশভ্রমণকারীদের সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার, যা মোট পর্যটকের ১০ শতাংশ।

জরিপে ৪৮ শতাংশ পর্যটক জানান, তারা বিদেশভ্রমণে গিয়ে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাত যাপন করেন। ২৬ শতাংশ সাধারণ মানের হোটেলে রাত যাপনের কথা বলেছেন। ৭ শতাংশ পাঁচ তারকা হোটেলে রাত যাপনের তথ্য জানান।

বিভাগ ভিত্তিতে বিদেশভ্রমণে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ঢাকা বিভাগের মানুষ। মোট পর্যটকের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ এই বিভাগের। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগের পর্যটক ২০ শতাংশ। মোট পর্যটকের ১৮ শতাংশ হলো তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিলেট বিভাগের। সবচেয়ে কম বিদেশভ্রমণে যান ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের মানুষ।