লক্ষ্মীপুর জেলাতে বিদ্যালয় অভিভাবক ভোটের ফলাফল বদল!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:০৯:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২
  • / 195

লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ উপজেলাতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য পদে ভোটে জিতেও বাড়িছাড়া তিন অভিভাবক। এদিকে নির্বাচনের ৩ দিন পর ভোট পুনরায় গণনা করে ফলাফলও পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রথমদিনের বিজয়ী মোজাম্মেল হোসেনের স্থানে হুমায়ুন কবির নামে একজনকে জয়ী দেখানো হয়। শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভূক্তভোগী অভিভাবক পানিয়ালা বাজারের মুদি দোকানি মোজাম্মেল এই অভিযোগ করেন।

মোজাম্মেল বলেন, শনিবার ইউএনও অফিসে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের কোন কিছু জানানো হয়নি। এতে আমাকে বাদ দিয়ে হুমায়ুন কবিরকে চতুর্থ স্থানে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। প্রথমদিনের গণনায় হুমায়ুন ১৪৫ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন। আমি মারধরের ভয়ে পুনরায় ভোট গণনার বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করতে পারছি না। ভয়ে তিনি নির্দিষ্ট কারও নামও বলেননি।

পুনরায় ভোট গণনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা, রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক, নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের সদস্য প্রার্থী হুমায়ুন কবির ও জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সভাপতি পদের নির্বাচন রোববার (২৩ জানুারি) দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলা কার্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু সদস্যরা এতে আতঙ্কিত। তাদের ভাষ্যমতে, উপজেলা কার্যালয়ে যাওয়ার পথে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়েই ভোটের আয়োজন করলে ভালো। পছন্দের প্রার্থীকে চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও শোনা যাচ্ছে।

অভিভাবক সদস্যদের অভিযোগ, ২০ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পানিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক ভোট হয়। ভোট শেষে গণনায় ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ইব্রাহিম খলিল, রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোজাম্মেল হোসেনকে সদস্য পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন। ওই রাতেই সভাপতি প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও রামগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মো.কামরুল হাসান ফয়সাল মাল ও তার লোকজন নির্বাচিতদের বাড়িতে যায়। এই সময় আশপাশের লোকজনের কাছে ওই সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যরা ওই রাত থেকেই বাড়িছাড়া বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচিত ৪ সদস্য, ১জন মহিলা সদস্য, ১ জন দাতা সদস্য ও ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করবেন। সভাপতি পদে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, আল মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় পার্টি নেতা জাকির হোসেন পাটওয়ারী, ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান ফয়সাল মাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদস্য নির্বাচনে জাকির হোসেনের প্যানেল নির্বাচিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল কমিটির সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ফয়সাল লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খাঁনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সেই সূত্রে তিনি প্রিসাইডিং অফিসারকে ম্যানেজ করে নিজের প্রার্থী হুমায়ুনকে জয়ী করতে ব্যালট পেপারে পরিবর্তন এনেছেন। পরে হুমায়ুনকে দিয়ে অভিযোগ করিয়ে ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ১৪৭ ভোট পেয়ে ৪র্থ স্থানে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার বিজয়ীদের নামও ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই কয়েকজন তাকে বাড়িতে খুঁজতে আসে এবং হুমকি দিয়ে যায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে হামলার ভয়ে তিনি রাতে বাড়িতে থাকছেন না। ভয়ে তাকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে সভাপতি প্রার্থী কামরুল হাসান ফয়সাল মালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি। তবে তার ঘনিষ্ঠ একজন দাবি করছেন, অভিভাবকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে ইউএনওর উপস্থিতি ভোটগ্রহণ হয়েছে। রোববার (২৩ জানুয়ারি) ১২টার দিকে উপজেলা কার্যালয়ে সভাপতি পদে ভোট গ্রহণ। কোন সদস্যকে কেউ হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়নি। কাউকে যদি হুমকি দেওয়া হয়, থানা পুলিশকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

এই ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা বলেন, হুমায়ুন অভিযোগ করেছেন প্রথম দিন ভোট গণনায় ভুল হয়েছে। পুনরায় ভোটগ্রহণ করলে তিনি ভোটে জয়ী হবেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুনরায় ভোট গ্রহণ করলে তিনি জয়ী হন। এতে মোজাম্মেল বাদ পড়েন। পুনরায় ভোট গণনার বিষয়টি প্রত্যেক প্রার্থীকেই ফোনে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

লক্ষ্মীপুর জেলাতে বিদ্যালয় অভিভাবক ভোটের ফলাফল বদল!

আপডেট : ০১:০৯:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

লক্ষ্মীপুর রামগঞ্জ উপজেলাতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য পদে ভোটে জিতেও বাড়িছাড়া তিন অভিভাবক। এদিকে নির্বাচনের ৩ দিন পর ভোট পুনরায় গণনা করে ফলাফলও পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রথমদিনের বিজয়ী মোজাম্মেল হোসেনের স্থানে হুমায়ুন কবির নামে একজনকে জয়ী দেখানো হয়। শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভূক্তভোগী অভিভাবক পানিয়ালা বাজারের মুদি দোকানি মোজাম্মেল এই অভিযোগ করেন।

মোজাম্মেল বলেন, শনিবার ইউএনও অফিসে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়। কিন্তু এই বিষয়ে আমাদের কোন কিছু জানানো হয়নি। এতে আমাকে বাদ দিয়ে হুমায়ুন কবিরকে চতুর্থ স্থানে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। প্রথমদিনের গণনায় হুমায়ুন ১৪৫ ভোট পেয়ে পঞ্চম হয়েছেন। আমি মারধরের ভয়ে পুনরায় ভোট গণনার বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করতে পারছি না। ভয়ে তিনি নির্দিষ্ট কারও নামও বলেননি।

পুনরায় ভোট গণনার সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা, রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক, নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের সদস্য প্রার্থী হুমায়ুন কবির ও জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সভাপতি পদের নির্বাচন রোববার (২৩ জানুারি) দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলা কার্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু সদস্যরা এতে আতঙ্কিত। তাদের ভাষ্যমতে, উপজেলা কার্যালয়ে যাওয়ার পথে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়েই ভোটের আয়োজন করলে ভালো। পছন্দের প্রার্থীকে চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও শোনা যাচ্ছে।

অভিভাবক সদস্যদের অভিযোগ, ২০ জানুয়ারি উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের পানিয়ালা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক ভোট হয়। ভোট শেষে গণনায় ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ইব্রাহিম খলিল, রফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন ও মোজাম্মেল হোসেনকে সদস্য পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন প্রিসাইডিং অফিসার আনোয়ার হোসেন। ওই রাতেই সভাপতি প্রার্থী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও রামগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর মো.কামরুল হাসান ফয়সাল মাল ও তার লোকজন নির্বাচিতদের বাড়িতে যায়। এই সময় আশপাশের লোকজনের কাছে ওই সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যরা ওই রাত থেকেই বাড়িছাড়া বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচিত ৪ সদস্য, ১জন মহিলা সদস্য, ১ জন দাতা সদস্য ও ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করবেন। সভাপতি পদে লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, আল মদিনা ফার্মাসিউটিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জাতীয় পার্টি নেতা জাকির হোসেন পাটওয়ারী, ছাত্রলীগ নেতা কামরুল হাসান ফয়সাল মাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সদস্য নির্বাচনে জাকির হোসেনের প্যানেল নির্বাচিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল কমিটির সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ফয়সাল লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খাঁনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সেই সূত্রে তিনি প্রিসাইডিং অফিসারকে ম্যানেজ করে নিজের প্রার্থী হুমায়ুনকে জয়ী করতে ব্যালট পেপারে পরিবর্তন এনেছেন। পরে হুমায়ুনকে দিয়ে অভিযোগ করিয়ে ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ১৪৭ ভোট পেয়ে ৪র্থ স্থানে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার বিজয়ীদের নামও ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই কয়েকজন তাকে বাড়িতে খুঁজতে আসে এবং হুমকি দিয়ে যায়। স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে হামলার ভয়ে তিনি রাতে বাড়িতে থাকছেন না। ভয়ে তাকে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে।
এই বিষয়ে জানতে সভাপতি প্রার্থী কামরুল হাসান ফয়সাল মালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি। তবে তার ঘনিষ্ঠ একজন দাবি করছেন, অভিভাবকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আবেদনের ভিত্তিতে ইউএনওর উপস্থিতি ভোটগ্রহণ হয়েছে। রোববার (২৩ জানুয়ারি) ১২টার দিকে উপজেলা কার্যালয়ে সভাপতি পদে ভোট গ্রহণ। কোন সদস্যকে কেউ হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়নি। কাউকে যদি হুমকি দেওয়া হয়, থানা পুলিশকে জানালে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

এই ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা বলেন, হুমায়ুন অভিযোগ করেছেন প্রথম দিন ভোট গণনায় ভুল হয়েছে। পুনরায় ভোটগ্রহণ করলে তিনি ভোটে জয়ী হবেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুনরায় ভোট গ্রহণ করলে তিনি জয়ী হন। এতে মোজাম্মেল বাদ পড়েন। পুনরায় ভোট গণনার বিষয়টি প্রত্যেক প্রার্থীকেই ফোনে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।