মিরসরাইয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম আসাদ আলী ক্বারী সেতু বদলে দিল লাখো মানুষের ভাগ্য

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই
  • আপডেট : ০৬:২৮:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 318

একসময় বাঁশের ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হতো মিরসরাইয়ের ৩ ইউনিয়নের মানুষের। অবশেষে দুর্ভোগ দূর করলো ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট্ট একটি সেতু। উপজেলার ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়নের পূর্ব ইছাখালী গ্রাম হয়ে বয়ে যাওয়া ইছাখালী খালের ওপর নির্মিত এই সেতু বদলে দিয়েছে দুই পাড়ের লাখো মানুষের ভাগ্য।

গ্রামীণ এই জনপদে সূচিত হয়েছে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। এই সেতুর সাথে যুক্ত হয়েছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম। এতে উপকারভোগী গ্রামগুলোর মানুষ বেশ খুশি। ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ হওয়া আসাদ আলী ক্বারী সেতু সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উদ্বোধন করেন মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। এসময় তিনি বলেন, ‘ইছাখালি ইউনিয়নের আসাদ আলী ক্বারী সড়কের ওপর যে সেতু নির্মাণ করা হলো এর মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের বেশকিছু জনপদ যোগাযোগের নতুন দিনে প্রবেশ করলো।

নতুন এই সেতু মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল এখানে প্রতিষ্ঠার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতি হবে।’ মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করলে তাতে বাধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি বেজার সাথে আলোচনা করেছি তারা কথা দিয়েছে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করবেনা। যদি করে আমি না থাকলেও আপনারা তার প্রতিবাদ করবেন।’

সেতু উদ্বোধনের পর আয়োজিত জনসভায় ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং ইছাখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল আলমের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শেখ আতাউর রহমান, সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল, মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন, করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ইছাখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম ভূঁইয়া প্রমুখ।

এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইছাখালী খালের ওপর নির্মিত এ সেতুর বদৌলতে ইছাখালী ইউনিয়ন, বামনসুন্দর ইউনিয়নের আংশিক এলাকার মানুষ ও মিঠানালা ইউনিয়নের আংশিক এলাকার মানুষ যোগাযোগের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এ সেতুর উপকারভোগী তিন অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের প্রধান খাত হলো কৃষি। এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার দরুন মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠে গিয়ে বাজারদরের তুলনায় কম দামে কৃষকদের থেকে কৃষি পণ্য সংগ্রহ করত। এখন কৃষকরা নিজেরেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।

এছাড়া উপজেলার ইছাখালী, মঘাদিয়া ও সাহেরখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠা দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে এসব গ্রামের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

মিঠানালা ইউনিয়নের রহমতাবাদ গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘আসাদ আলী ক্বারী সড়কের ওপর সেতু নির্মাণের ফলে আমাদের গ্রামের মানুষ বেশ উপকৃত হবে। এতদিন এই সেতুর জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।’
ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

এখানে এখন হাজার হাজার লোক উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এতদিন আমার ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিল্পনগর এলাকায় যাতায়াত করতে পারত না।

এখন তারা শিল্পনগরের উন্নয়ন কাজে নিজেদের সামিল করতে পারবে। এছাড়া শিল্পনগরে কাজ করা নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের আবাসনের জায়গা নেই। তারা গ্রামীণ অঞ্চলে কম দামে ভাড়া ঘরেও থাকতে পারবে। সেদিক দিয়েও এসব গ্রামের বাসিন্দারা লাভবান হবে।’

মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার চৌষট্টি টাকা ব্যয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ উপকৃত হবে।

এছাড়া সেতুর সাথে যুক্ত আসাদ আলী ক্বারী সড়কটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে সরাসরি যুক্ত হবে। এতে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো টেকসই হবে। এটি আয়তনের দিক থেকে মিরসরাই উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মিরসরাইয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম আসাদ আলী ক্বারী সেতু বদলে দিল লাখো মানুষের ভাগ্য

আপডেট : ০৬:২৮:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২

একসময় বাঁশের ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে হতো মিরসরাইয়ের ৩ ইউনিয়নের মানুষের। অবশেষে দুর্ভোগ দূর করলো ৮১ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট্ট একটি সেতু। উপজেলার ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়নের পূর্ব ইছাখালী গ্রাম হয়ে বয়ে যাওয়া ইছাখালী খালের ওপর নির্মিত এই সেতু বদলে দিয়েছে দুই পাড়ের লাখো মানুষের ভাগ্য।

গ্রামীণ এই জনপদে সূচিত হয়েছে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। এই সেতুর সাথে যুক্ত হয়েছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রাম। এতে উপকারভোগী গ্রামগুলোর মানুষ বেশ খুশি। ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ হওয়া আসাদ আলী ক্বারী সেতু সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) উদ্বোধন করেন মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। এসময় তিনি বলেন, ‘ইছাখালি ইউনিয়নের আসাদ আলী ক্বারী সড়কের ওপর যে সেতু নির্মাণ করা হলো এর মধ্যদিয়ে এই অঞ্চলের বেশকিছু জনপদ যোগাযোগের নতুন দিনে প্রবেশ করলো।

নতুন এই সেতু মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল এখানে প্রতিষ্ঠার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নতি হবে।’ মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করলে তাতে বাধা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি বেজার সাথে আলোচনা করেছি তারা কথা দিয়েছে কৃষি জমি অধিগ্রহণ করবেনা। যদি করে আমি না থাকলেও আপনারা তার প্রতিবাদ করবেন।’

সেতু উদ্বোধনের পর আয়োজিত জনসভায় ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফার সভাপতিত্বে এবং ইছাখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল আলমের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ শেখ আতাউর রহমান, সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল, মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন, করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ইছাখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম ভূঁইয়া প্রমুখ।

এলাকার লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইছাখালী খালের ওপর নির্মিত এ সেতুর বদৌলতে ইছাখালী ইউনিয়ন, বামনসুন্দর ইউনিয়নের আংশিক এলাকার মানুষ ও মিঠানালা ইউনিয়নের আংশিক এলাকার মানুষ যোগাযোগের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এ সেতুর উপকারভোগী তিন অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের প্রধান খাত হলো কৃষি। এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার দরুন মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠে গিয়ে বাজারদরের তুলনায় কম দামে কৃষকদের থেকে কৃষি পণ্য সংগ্রহ করত। এখন কৃষকরা নিজেরেই তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।

এছাড়া উপজেলার ইছাখালী, মঘাদিয়া ও সাহেরখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠা দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে এসব গ্রামের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি হওয়ায় তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

মিঠানালা ইউনিয়নের রহমতাবাদ গ্রামের বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘আসাদ আলী ক্বারী সড়কের ওপর সেতু নির্মাণের ফলে আমাদের গ্রামের মানুষ বেশ উপকৃত হবে। এতদিন এই সেতুর জন্য পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।’
ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ‘বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

এখানে এখন হাজার হাজার লোক উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এতদিন আমার ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামের মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিল্পনগর এলাকায় যাতায়াত করতে পারত না।

এখন তারা শিল্পনগরের উন্নয়ন কাজে নিজেদের সামিল করতে পারবে। এছাড়া শিল্পনগরে কাজ করা নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের আবাসনের জায়গা নেই। তারা গ্রামীণ অঞ্চলে কম দামে ভাড়া ঘরেও থাকতে পারবে। সেদিক দিয়েও এসব গ্রামের বাসিন্দারা লাভবান হবে।’

মিরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার চৌষট্টি টাকা ব্যয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ উপকৃত হবে।

এছাড়া সেতুর সাথে যুক্ত আসাদ আলী ক্বারী সড়কটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সাথে সরাসরি যুক্ত হবে। এতে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো টেকসই হবে। এটি আয়তনের দিক থেকে মিরসরাই উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু।’