এই ফ্লাটগুলো তো আবাসিক
বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স ক্লাবে হচ্ছে কী?
- আপডেট : ০৫:৪৭:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
- / 368
সেগুন বাগিচাস্থ নিউ ভিশন টাওয়ারের বিআইডব্লিউটিএ অফিসার্স ক্লাবে হচ্ছে কী? এ প্রশ্ন এই আবাসিক ভবনের প্রতিটি ফ্ল্যাট ওনারের। তারা জানান, বিকাল থেকে গভীর রাত অবধি এই অফিসার্স ক্লাবে নানা কিসিমের লোকজন আসা যাওয়া করেন। তাদের গাড়ীগুলো এমন ভাবে পার্কিং করা থাকে যে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা তাদের গাড়ীগুলো ঠিকমত পার্কিং করতে পারেন না। এ ছাড়া যেসব লোকজন এই অফিসার্স ক্লাবে আসা যাওয়া করেন তাদের গতিবিধিও সুবিধাজনক মনে হয় না। অনেক সময় ক্লাবের ভেতরে উচ্চস্বরে মিউজিক বাজানো হয়। আবার চিল্লাচিল্লি চেচামেচিও শোনা যায়। অফিসার হিসাবে অনেকে এসে রাত্রীও যাপন করেন। এতকরে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বিরক্ত হন। ছেলে মেয়েরাও আকংকিত হয়ে পড়ে। তাদের প্রশ্ন, আসলে কী হয় এই অফিসার্স ক্লাবটিতে ?
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএ অফিসারদের মানষিক রিক্রিয়েশনের জন্য সেগুনবাগিচাস্থ নিউ ভিশন টাওয়ারের ৯ তলায় বিশাল আকৃতির এই ফ্ল্যাটটি ক্রয় করেন বিআইডব্লিউটিএ অফিসার এসোসিয়েশন। যার মুল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এরপর এর ভেতরে অত্যাধুনিক ডেকোরেশন করা হয়। ফ্ল্যাটটি ক্রয়ের সময় তারা আবাসিক চুক্তিতে আবদ্ধ হলেও পরে গিয়ে সেটাকে ক্লাবে রূপদান করেন। অফিসারদের থাকার জন্য তিনটি ডিল্যাক্স কক্ষও তৈরী করা হয়। এ ছাড়া কার্ড ও ক্যারাম খেলার জন্য আলাদা স্পেস রয়েছে। ডেকোরেশন কমপ্লিট হতেই সেখানে অফিসারদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
শোনা যায় এই ক্লাবটি তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকাদারদের সাথে গোপন লেনদেন ও আনন্দ ফুর্তি করার জন্য। শুধু তাই নয়, এইক্লাবে জামায়াত ও বিএনপিপন্থি অফিসাররা দলের বড় বড় নেতাদের নিয়ে গোপন সভা করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সব থেকে বড় প্রশ্ন উঠেছে এই ফ্ল্যাটটি কেনার অর্থের উৎস নিয়ে। এত টাকা কি বিআইডব্লিউটিএ অফিসার এসোসিয়েশনের ব্যাংক হিসাবে ছিলো? নাকি অন্য কেন অবৈধপথে এই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে ? সেটি তদন্তের দাবী রাখে।
আরো অভিযোগ উঠেছে, তারা এটাকে বাইরের সংগঠনের কাছে ভাড়াও দিয়ে থাকেন। অফিসের আগতদের সেবা দান করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের দুজন আউটসোসিং কর্মচারীকে ওই ক্লাবে ডিউটি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বর্তমানে ক্লাবটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারীর দায়িত্বে আছেন ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলী মো. ছাইয়েদুর রহমান, অন্যান্য দায়িত্বে আছেন উপ-পরিচালক (মানবসম্পদ) মো. সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া ও হিসাব বিভাগের উপ-পরিচালক মো. কবিরুল ইসলাম। আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী নানা প্রকার কর্মকান্ডও এই ক্লাবটিতে চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চোখে ফাঁকি দিয়ে আবাসিক ভবনে অফিসার্স ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সরকার বিরোধী কর্মকান্ড ও ওয়ানটেন জাতীয় জুয়ারবোর্ড পরিচালনা, ওয়ানটেড ব্যাক্তিদের নিরাপদে রাত কাটানোর সুব্যবস্থা করার নিরাপদ স্থান হিসাবে এই ক্লাবটি এখন ব্যবহার হচ্ছে মর্মে অনেকেই সন্দেহ করছেন।
এই বিষয়ে একাধিক ফ্লাট মালিকরা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমাদের এই ফ্লাটগুলো তো আবাসিক কিন্তু তারা (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা কিভাবে ক্লাব করলেন সেটা জানিনা। যতটুকু জানি একটু ভবনে কোন ক্লাব করতে হলে বানিজ্যিক হতে হবে। আমরা যারা কিনেছি আবাসিক হিসেবেই। তাদের এই বানিজ্যিক কি-না সেটা জানার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রবাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক বিআইডব্লিউটিএ একাধিক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, তারা নিজেদের সুবিধা নেওয়ার জন্য এটি নিয়েছেন। তারা কিছু কর্মকর্তা ছাড়া বাকিদের কিছুই মনে করে না। তাদের ইচ্ছায়ই সব কিছু হয় এই ভবনে। ঠিকাদারদের মেনেজ করে এই ফ্লাটটি কিনেছেন। আর যারা যাওয়া আসা করে খোজ নিয়ে দেখুন তারা কারা। দেখবেন শুধু মাত্র…. তারাই সেখানে যাতায়াত করে।
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ অফিসার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও ড্রেজিং বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রকিব তালুকদারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘সব বাজে কথা। আপনারা তদন্ত করে দেখুন। এটা মূলত অফিসারদের আবাসিক সমস্যা সমাধান ও কর্মকর্তাদের নানাবিধ কল্যাণের জন্যই করা হয়েছে। সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকেও রেজিষ্ট্রেশন নেওয়া হয়েছে।’