ঢাকা ০৭:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারায়ণগঞ্জে ‘চ্যানেল মাষ্টার’কে মেনেজ করলেই মিলবে পাসপোর্ট!

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট : ০৬:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩
  • / 489

কয়েকদিন না যেতেই আবারও শুরু হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি। প্রতিষ্ঠানটিতে অফিসারদের পাশাপাশি এখন ২ জন আনসার সদস্য- রেজাউল, বকুল এবং নৈশ প্রহরী জাহিদ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পাসপোর্ট নিতে এসেছেন এমন একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসেই নাকি ‘চ্যানেল মাষ্টার’ থাকে। আমি এখানে এসে তাই দেখলাম। কয়েজন আনসার সদস্য তারাই এখন এখানের বস দাবি করে। আরেকজন পরিচয় দিলেন নৈশ প্রহরী তিনি নাকি সব ফাইল নিয়ন্ত্রণ করে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরেকজন ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনি তার কাছে যা শুনলেন পুরোটাই সত্য ঘটনা আমরা আসলে অসহায়। কারণ আমাদের বিদেশ যেতে হবে। পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে। পাসপোর্ট যদি না পাই তাহলে ভিসা পাবো কিভাবে। আমরা তো তাদের ক্ষমতার কাছে জিম্মি। পাসপোর্ট প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ তাদের দিয়ে হয়। আর তা না দিলে ফাইল যত ভালো করেই তৈরি করা হয় না কেন! সমস্যা দেখিয়ে তা এমন জায়গায় ফেলে রাখে তা পাওয়া খুবই কঠিন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরেকজন বলেন, ‘কি-হয় না এখানে সেই সকাল থেকে লাইনে এসে দাড়িয়ে আছি। এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের টাকা দিলেই মুহুর্তেই লাইনস থেকে বের করে নিয়ে যায় আনসার সদস্যসহ বেশ কিছু এখানকার দালালরা। কয়েক মিনিটেই কাজ শেষ হয়ে যায়।’
সম্প্রতি অফিসটিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট অভিযান পরিচালনা করে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট সেবা প্রদানে গ্রাহকদের হয়রানি ও দালাল চক্রের ঘুষ সংক্রান্ত নানান ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালায় দুদক।

অভিযান পরিচালনা কালে দুদক টিম প্রথমে ছদ্মবেশ ধারন করে পাসপোর্ট অফিসে অবস্থানরত সেবা গ্রহীতাদের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। গ্রাহকদের আবেদনে কোন ধরনের বিশেষ চিহ্ন আছে কি না তাও পর্যালোচনা করেন।

এছাড়াও সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন পাসপোর্ট অফিসের পার্শ্ববর্তী দোকানে থাকা দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট সেবা পাওয়ার সত্যতা পায় দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) টিম।

পরে দুদক টিম পাসপোর্ট অফিসে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক জামাল হোসেনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তিনি দালালদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের ব্যাপারে এবং পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতাদের নিরবিচ্ছিন্ন ও সহজতম সেবা প্রদানের প্রতি টিমকে অবহিত করেন।
এ সময় দুদক টিম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সকল কক্ষ পরিদর্শন সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্তভাবে জনগণকে সেবা প্রদানের পরামর্শ দেন।

এছাড়া সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা হয়। অভিযান প্রসঙ্গে পরবর্তীতে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নারায়ণগঞ্জে ‘চ্যানেল মাষ্টার’কে মেনেজ করলেই মিলবে পাসপোর্ট!

আপডেট : ০৬:৪০:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ এপ্রিল ২০২৩

কয়েকদিন না যেতেই আবারও শুরু হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি। প্রতিষ্ঠানটিতে অফিসারদের পাশাপাশি এখন ২ জন আনসার সদস্য- রেজাউল, বকুল এবং নৈশ প্রহরী জাহিদ এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পাসপোর্ট নিতে এসেছেন এমন একজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসেই নাকি ‘চ্যানেল মাষ্টার’ থাকে। আমি এখানে এসে তাই দেখলাম। কয়েজন আনসার সদস্য তারাই এখন এখানের বস দাবি করে। আরেকজন পরিচয় দিলেন নৈশ প্রহরী তিনি নাকি সব ফাইল নিয়ন্ত্রণ করে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরেকজন ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনি তার কাছে যা শুনলেন পুরোটাই সত্য ঘটনা আমরা আসলে অসহায়। কারণ আমাদের বিদেশ যেতে হবে। পরিবারের জন্য কিছু করতে হবে। পাসপোর্ট যদি না পাই তাহলে ভিসা পাবো কিভাবে। আমরা তো তাদের ক্ষমতার কাছে জিম্মি। পাসপোর্ট প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ঘুষ তাদের দিয়ে হয়। আর তা না দিলে ফাইল যত ভালো করেই তৈরি করা হয় না কেন! সমস্যা দেখিয়ে তা এমন জায়গায় ফেলে রাখে তা পাওয়া খুবই কঠিন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরেকজন বলেন, ‘কি-হয় না এখানে সেই সকাল থেকে লাইনে এসে দাড়িয়ে আছি। এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের টাকা দিলেই মুহুর্তেই লাইনস থেকে বের করে নিয়ে যায় আনসার সদস্যসহ বেশ কিছু এখানকার দালালরা। কয়েক মিনিটেই কাজ শেষ হয়ে যায়।’
সম্প্রতি অফিসটিতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট অভিযান পরিচালনা করে।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট সেবা প্রদানে গ্রাহকদের হয়রানি ও দালাল চক্রের ঘুষ সংক্রান্ত নানান ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালায় দুদক।

অভিযান পরিচালনা কালে দুদক টিম প্রথমে ছদ্মবেশ ধারন করে পাসপোর্ট অফিসে অবস্থানরত সেবা গ্রহীতাদের পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। গ্রাহকদের আবেদনে কোন ধরনের বিশেষ চিহ্ন আছে কি না তাও পর্যালোচনা করেন।

এছাড়াও সেবা গ্রহীতাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন পাসপোর্ট অফিসের পার্শ্ববর্তী দোকানে থাকা দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট সেবা পাওয়ার সত্যতা পায় দূর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) টিম।

পরে দুদক টিম পাসপোর্ট অফিসে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক জামাল হোসেনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তিনি দালালদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের ব্যাপারে এবং পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতাদের নিরবিচ্ছিন্ন ও সহজতম সেবা প্রদানের প্রতি টিমকে অবহিত করেন।
এ সময় দুদক টিম আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সকল কক্ষ পরিদর্শন সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্তভাবে জনগণকে সেবা প্রদানের পরামর্শ দেন।

এছাড়া সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা হয়। অভিযান প্রসঙ্গে পরবর্তীতে কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে এনফোর্সমেন্ট টিম জানিয়েছেন।