বিআইডব্লিউটিএতে ‘সিবিএ’র বিরুদ্ধে যতবার মামলা ততবার খারিজ!
- আপডেট : ০৪:৪৬:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল ২০২৩
- / 239
বিআইডব্লিউটিয়ের ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক মামলাবাজ ওসমান গনি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবুল হোসেনসহ ৮ নেতাকর্মীকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওসমান গনি ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ‘সিবিএ’ সংগঠনে কোনো ধরনের পদ-পদবী না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন সময়ে গায়েবী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিপক্ষ আবুল হোসেনদের নামে মামলা দিয়ে আসছে। শেষ পর্যায়ে মামলাগুলো আদালতের বিচারে খারিজ হয়ে যায়।
কারণ মামলার বাদী হিসেবে ওসমান গনি সিন্ডিকেট ঘটনার স্বপক্ষে ‘স্বাক্ষ্য-প্রমাণ’ আদালতে দাখিল করতে ব্যর্থ হয় এবং আদালত অসংখ্যবার মামলার শুনানিতে ডাকলেও হাজিরা না দেয়ায় আদালত মামলা গুলো খারিজ করে দেয়। এতে আবুল হোসেন ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু মামলাবাজ ওসমান গনির দেয়া এক মামলা শেষ না হতেই শুরু হয় আরেক মামলার হয়রানি।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী বিআইডব্লিউটিয়ের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন হয়। যার রেজি নং-২১৭৬। একই বছর ২২ জুন নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকরী কমিটিতে আবুল হোসেন সভাপতি ও রফিকুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। কমিটি হওয়ার ৩ মাস পরে মহামান্য হাইকোর্টে সিবিএ রেজিস্ট্রেশনের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পাশাপাশি সিবিএ সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
তদন্ত কমিটির দীর্ঘ ৬ বছর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে ২২ জুন-২০২২ তারিখে সভাপতি আবুল হোসেনকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় দুইবার তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে কোন অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএর আইন অনুযায়ী এবং দুদকের মামলার নিষ্পত্তির সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওসমান গনি বিআইডব্লিউটিএর ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক।
তিনি এই পদে থেকে সভাপতি হওয়ার জন্য এবং ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে থাকার জন্য নানা পরিকল্পনায় নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। প্রতিপক্ষের কেউ যেন সভাপতি হতে না পারেন সে জন্য তাদেরকে দমন করতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির জাল বিস্তার করেন। এ কারণে বিআইডব্লিউটিএ’র শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আবুল হোসেনসহ ফ্লোটিং ওয়ার্কার ইউনিয়নের ৭ নেতার নামে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করে।
বিজ্ঞ আদালত মামলাগুলো তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবেদনপ্রাপ্ত হইয়া এবং উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খারিজ করে দেন। ওসমান গনির দায়েরকৃত ১৫১৬/২১নং সিআর মামলাটি আদালত ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারী ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারা মোতাবেক খারিজ করে দেন। ওসমান গনি এই মামলায় আবুল হোসেনসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করেন। অভিযোগ করেন আবুল হোসেন ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ’ করেছে। মামলাটি মতিঝিল থানার সাব- ইন্সপেক্টর মো. শফিকুল ইসলাম আকন্দ দীর্ঘদিন তদন্তকালে ওসমান গনি কোন প্রকারের সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। বিআইডব্লিউটিয়ের মতো একটি জনবহুল প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনার মামলায় ৪/৫ জন অজ্ঞাত পরিচয়ের লোক কিভাবে আসামী হয় সেই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে গেছে অজানা।
ওসমান গনি ও তার সিন্ডিকেট আবুল হোসেনের নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করিলে দুর্নীতি দমন কমিশন উক্ত অভিযোগের আলোকে দীর্ঘদিন তদন্ত করে কোন প্রকারের সত্যতা না পেয়ে আবুল হোসেনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষ এই অব্যাহতি আদেশ প্রদান করা হয়।
বিআইডব্লিউটিয়ের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সভাপতি আবুল হোসেনকে অপসারণ করা হয়েছে মর্মে নোটিশ বানিয়ে প্রচার করে ওসমান গনি। পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এক নোটিশের মাধ্যমে বিষয়টি অস্বীকার করে উল্লেখ করে তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সভাপতির বিরুদ্ধে অপসারণের নোটিশ প্রচার করা হয়েছে।
ওসমান গনি ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারী আবুল হোসেনসহ ৬ জনের নামে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে পিটিশন মামলা করে। মামলা নং-৩১/২২। তিনি অভিযোগ উল্লেখ করেন আবুল হোসেন ও তার লোকজনেরা তাকেও তার লোকজনকে মারধর করেছে। মামলাটি নারায়ণগঞ্জ জেলা পিবিআইয়ের এসআই নজরুল ইসলাম তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদন পছন্দ না হওয়ায় ওসমান গনি নারাজি দিলে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় নারায়ণগঞ্জ জেলা সিআইডির এসআই মুন্সী শহিদুল ইসলাম। এসআই শহীদুল ইসলাম দীর্ঘ দিন মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে এবং ঘটনার সাথে আবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাঁদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।
ওসমান সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মুজিবুর রহমানের দায়েরকৃত ১৭৮১/১৮নং সিআর মামলাটিও আদালত ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট ফৌজদারী কার্যবিধির ২০৩ ধারা মোতাবেক খারিজ করে দেন। মতিঝিল থানার এসআই থোয়াই চনু মার্মা দীর্ঘদিন তদন্ত কালে মজিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য কোন প্রকারের সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেননি এবং তাকে একাধিকবার নোটিশ করার পরেও তিনি সাক্ষ্য প্রমান হাজির করেনি।
অতঃপর তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীদের সাক্ষ্য, বাদীর মামলার নথি ও বিবাদী কর্তৃক উপস্থাপিত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনার ভিত্তিতে বাদী কর্তৃক বিবাদীর বিরুদ্ধে আনীত দন্ডবিধি আইনের ৪২৭/৫০০/৫০৭ ধারায় অপরাধের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ফলে মহামান্য আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন। পাশাপাশি আবুল হোসেনকে জামাত-বিএনপি ঘরনার লোক বানানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে ওসমান গনি।
কিন্তু আবুল হোসেন ১৯৯২/৯৩ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে। ২০১৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যের পদ লাভ করে। কর্মজীবনে বিআইডব্লিউটিয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় শ্রমিক লীগ বিআইডব্লিউটি শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিআইডব্লিউটিএ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (রেজি:২১৭৬) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওসমান গনি বিআইডব্লিউটিএর ফ্লোটিং ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের আহ্বায়ক পদে থেকে নিজের ইচ্ছেমতো সংগঠনের অর্থ তসরূপ করেছে। যেখানে সংগঠনের একাধিক সদস্য দীর্ঘদিন যাবত প্রতিবাদ করেছে। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করলেই তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে দেয়। পরপর দুটি মিথ্যা মামলা আদালত কর্তৃক খারিজ হলেও আবারো আবুল হোসেনসহ ৮ জনের নামে একটি মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়েছেন। বিএলএ (ফৌজদারী) মামলা নং-০১/২০২৩।