ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিআইডব্লিউটিসি’র শাহিনুরের সেচ্ছাচারি অনিয়মে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৪:০৭:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩
  • / 209

কথায়ই আছে ‘চুরি তো চুরি, তার উপর আবার সিনাজুরি’। বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি একেবারে পই পই করে মিলে যায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)-এর পরিচালক (অর্থ) শাহিনূর ভূইয়া’র ক্ষেত্রে। কারণ, একেতো শাহিনুরের নেই তার বর্তমান পদ সংশ্লিষ্ট কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা। তার উপর চলতি দায়িত্বে (সাময়িক বা অস্থায়ী) নিয়োগ পাওয়ার পর উক্ত পদের পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও সুবিধাদী দাবি করে হাইকোর্টে রিট করে সেই রিটে হেরেও গত ১৪ বছর ধরে দিব্বি দখল করে বসে আছেন বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক (অর্থ) এর পদটি।

তার এই আচরণ অনেকটাই সেচ্ছাচারী ব্যক্তিদের মত। আর তা হবেই বা না কেন! তার বাবা তো ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বডিগার্ড। তাই অবৈধভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে পরিচালক (অর্থ) এর পদটি দখলে রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন সীমাহীন দুর্নীতি।

বিআইডব্লিউটিসি’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দেওয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, শাহিনুর ভূইয়া ২০০৮ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং থেকে এমবিএ করেছেন। কিন্তু তার তো একাউন্টিং এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর থাকার কথা ছিল। কেননা এই পরিচালক (অর্থ) পদটিতে নিয়োগের জন্য এটি একটি অন্যতম প্রধান শর্ত।

তাহলে তাকে ৮/০২/২০০৯ সালে প্রথমে অতিরিক্ত দায়িত্বে এবং মাসখানেক পর ১২/০৩/২০০৯ সালে চলতি দায়িত্বে নিয়োগের গাফিলতি কার? সেই উত্তর খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৫ এপ্রিল ২০২৩ এর একটি প্রজ্ঞাপনে অনুচ্ছেদ ২ এর (ক) ও (খ) অনুসারে অতিরিক্ত ও চলতি দুটি পদই অস্থায়ী এবং সাময়িক। শাহিনুর সাহেব আবশ্যক মেয়াদকালের প্রায় দশ মাস আগে উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং মহাব্যবস্থাপক হওয়া ছাড়াই সরাসরি এজিএম পদ থেকে টাকা এবং তদবির’র জোরে পাইপলাইনে থাকা যোগ্য কয়েকজন কর্মকর্তা ডিঙ্গিয়ে সাবেক নৌমন্ত্রী প্রয়াত কর্ণেল আকবর আলী খানের সিন্ডিক্যাটের বদৌলতে পরিচালক (অর্থ) পদটি দখল করেন। তাই হাইকোর্টে করা তার রিট আবেদনটির রায় যেখানে তার পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন। নিয়ম অনুসারে তাকে হঠানোর কথা থাকলেও এর পরও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই শাহিনুর প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার কি মাল, দরিয়া মে ঢাল’ এই হিন্দি-উর্দূ প্রবাদটিকে নিজের মত করে সামান্য এদিক সেদিক করে প্রায়ই তিনি বলেন ‘সরকার কি মাল, পকেট মে ঢাল’! এবার আসা যাক তার দুর্নীতি প্রসঙ্গে।

বিআইডব্লিউটিসির শ্রমিক সংগঠন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অভিযোগ, পরিচালক (অর্থ) শাহিনুর ভূইয়া, ঘুষ এবং মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে ভৈরব ল্যান্ড নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি জিয়া উল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তিকে লিজ দেব। এছাড়া, এই শাহিনুর ২০১২ সালে কল্যাণ তহবিলের প্রায় ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং চেক জালিয়াত চক্রকে নিজের স্বজনের মত রক্ষা করেন। ওই সময় শতাধিক চেক জালিয়াতকারী হিসাব সহকারী শাসছুল হককে বরখাস্ত করা হলে তিনি ফের তাকে বহাল করেন।

শাহিনুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা আরও বলেন, বেআইনীভাবে ৩টি বেসরকারি ডকইয়ার্ডকে তিনি ৮৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯০ টাকা আয়কর দিয়েছেন। তার কারণে চট্টগ্রামে ১ ও ২ টার্মিনালের ৫টি গুদাম ভাড়াবাবদ অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, নথি ছাড় করাতে কমিশন না পাওয়া অব্দি তিনি কোন পদক্ষেপ নেন না।

এ সকল বিষয়ে শাহিনুর ভূইয়া’র সঙ্গে সশরীরে এবং মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে, ‘তিনি তার বাবা জিয়াউর রহমানের বডিগার্ড ছিলেন এই কথাটি ইনিয়ে-বিনিয়ে অন্যভাবে স্বীকার করার পাশাপাশি আসছে নির্বাচনে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে মন্তব্য করে।’ তবে নিয়োগ, পদ দখল করে রাখা এবং দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠতেই প্রচন্ড বিব্রত এবং অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিআইডব্লিউটিসি’র শাহিনুরের সেচ্ছাচারি অনিয়মে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন

আপডেট : ০৪:০৭:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ মে ২০২৩

কথায়ই আছে ‘চুরি তো চুরি, তার উপর আবার সিনাজুরি’। বহুল প্রচলিত এই প্রবাদটি একেবারে পই পই করে মিলে যায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)-এর পরিচালক (অর্থ) শাহিনূর ভূইয়া’র ক্ষেত্রে। কারণ, একেতো শাহিনুরের নেই তার বর্তমান পদ সংশ্লিষ্ট কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা। তার উপর চলতি দায়িত্বে (সাময়িক বা অস্থায়ী) নিয়োগ পাওয়ার পর উক্ত পদের পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা ও সুবিধাদী দাবি করে হাইকোর্টে রিট করে সেই রিটে হেরেও গত ১৪ বছর ধরে দিব্বি দখল করে বসে আছেন বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক (অর্থ) এর পদটি।

তার এই আচরণ অনেকটাই সেচ্ছাচারী ব্যক্তিদের মত। আর তা হবেই বা না কেন! তার বাবা তো ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বডিগার্ড। তাই অবৈধভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে পরিচালক (অর্থ) এর পদটি দখলে রেখে চালিয়ে যাচ্ছেন সীমাহীন দুর্নীতি।

বিআইডব্লিউটিসি’র বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দেওয়া তথ্য এবং অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, শাহিনুর ভূইয়া ২০০৮ সালে ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং থেকে এমবিএ করেছেন। কিন্তু তার তো একাউন্টিং এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর থাকার কথা ছিল। কেননা এই পরিচালক (অর্থ) পদটিতে নিয়োগের জন্য এটি একটি অন্যতম প্রধান শর্ত।

তাহলে তাকে ৮/০২/২০০৯ সালে প্রথমে অতিরিক্ত দায়িত্বে এবং মাসখানেক পর ১২/০৩/২০০৯ সালে চলতি দায়িত্বে নিয়োগের গাফিলতি কার? সেই উত্তর খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ৫ এপ্রিল ২০২৩ এর একটি প্রজ্ঞাপনে অনুচ্ছেদ ২ এর (ক) ও (খ) অনুসারে অতিরিক্ত ও চলতি দুটি পদই অস্থায়ী এবং সাময়িক। শাহিনুর সাহেব আবশ্যক মেয়াদকালের প্রায় দশ মাস আগে উপ-মহাব্যবস্থাপক এবং মহাব্যবস্থাপক হওয়া ছাড়াই সরাসরি এজিএম পদ থেকে টাকা এবং তদবির’র জোরে পাইপলাইনে থাকা যোগ্য কয়েকজন কর্মকর্তা ডিঙ্গিয়ে সাবেক নৌমন্ত্রী প্রয়াত কর্ণেল আকবর আলী খানের সিন্ডিক্যাটের বদৌলতে পরিচালক (অর্থ) পদটি দখল করেন। তাই হাইকোর্টে করা তার রিট আবেদনটির রায় যেখানে তার পক্ষে রায় দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন। নিয়ম অনুসারে তাকে হঠানোর কথা থাকলেও এর পরও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিসি’র কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই শাহিনুর প্রসঙ্গে বলেন, ‘সরকার কি মাল, দরিয়া মে ঢাল’ এই হিন্দি-উর্দূ প্রবাদটিকে নিজের মত করে সামান্য এদিক সেদিক করে প্রায়ই তিনি বলেন ‘সরকার কি মাল, পকেট মে ঢাল’! এবার আসা যাক তার দুর্নীতি প্রসঙ্গে।

বিআইডব্লিউটিসির শ্রমিক সংগঠন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অভিযোগ, পরিচালক (অর্থ) শাহিনুর ভূইয়া, ঘুষ এবং মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে ভৈরব ল্যান্ড নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি জিয়া উল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তিকে লিজ দেব। এছাড়া, এই শাহিনুর ২০১২ সালে কল্যাণ তহবিলের প্রায় ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন এবং চেক জালিয়াত চক্রকে নিজের স্বজনের মত রক্ষা করেন। ওই সময় শতাধিক চেক জালিয়াতকারী হিসাব সহকারী শাসছুল হককে বরখাস্ত করা হলে তিনি ফের তাকে বহাল করেন।

শাহিনুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা আরও বলেন, বেআইনীভাবে ৩টি বেসরকারি ডকইয়ার্ডকে তিনি ৮৭ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯০ টাকা আয়কর দিয়েছেন। তার কারণে চট্টগ্রামে ১ ও ২ টার্মিনালের ৫টি গুদাম ভাড়াবাবদ অনেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, নথি ছাড় করাতে কমিশন না পাওয়া অব্দি তিনি কোন পদক্ষেপ নেন না।

এ সকল বিষয়ে শাহিনুর ভূইয়া’র সঙ্গে সশরীরে এবং মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে, ‘তিনি তার বাবা জিয়াউর রহমানের বডিগার্ড ছিলেন এই কথাটি ইনিয়ে-বিনিয়ে অন্যভাবে স্বীকার করার পাশাপাশি আসছে নির্বাচনে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে মন্তব্য করে।’ তবে নিয়োগ, পদ দখল করে রাখা এবং দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠতেই প্রচন্ড বিব্রত এবং অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন তিনি।