তুহিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
লালমোহনে পৌর মেয়রের দুর্নীতির তদন্তে দুদক
- আপডেট : ০৮:৪৩:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩
- / 294
বহু আলোচনার পর এবার দুদকের জালে আটকা পড়লো লালমোহন পৌর মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন। আলোচনায় শুধু তিনি একা না; তার সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। যার স্বারক নং ১২০৫।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, পৌর মেয়রসহ যে ৪ জনের চিঠি হয়েছে টাকা আত্মসাৎ নিয়ে। প্রয়োজন হলে এ বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্ত হবে। দুদক ক্ষমতার কাছে মাথানত করে না। তিনি যেই হোক।
এ মামলায় পৌর মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিনসহ অপর আসামিরা হচ্ছে- সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বনিক, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন ও ঠিকাদার মেসার্স রিয়াজ স্টোরের মালিক কামাল হোসেন রিয়াজ।
এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশ, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে লালমোহন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর অডিটোরিয়ামের (পার্ট-১, পার্ট-২ ও পার্ট-৩) নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে না করে সরকারি ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন আসামিরা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ভোলা জেলার লালমোহন পৌরসভার, লালমোহন পৌর অডিটোরিয়াম পার্ট- ১ পার্ট- ২ ও পার্ট -৩ এর টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।যার নং ০৫/১৯/২০২০। (এলটিএম) পদ্ধতিতে প্যাকেজ নং : লাল/পৌ/এডিপি /রেভিনিউ ০৪ মূল্য সম্পাদনের জন্য পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় উক্তিটি একাধিক জাতীয় পত্রিকা প্রকাশিত হয় উক্ত নির্মাণ কাজের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির মধ্যে ৬ সদস্যের উপস্থিতিতে বিগত ২৫/৩/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ তারিখে দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়।
নির্মাণ কাজের জন্য মোট ৩জন ঠিকাদার দরপত্র দাখিল করেন। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসাস রিয়াজ স্টোর এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ কামাল হোসেন ১কোট ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা দরপত্র দাখিল করেন। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ২০২০ তারিখে সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে রিয়াজ স্টোর কে দরপত্র প্রক্রিয়ার সুপারিশ করেন। ফলে সভা কর্তৃক উক্ত কার্যাদেশ প্রদান করেন।
এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসাজ রিয়া স্টোর এর স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন রিয়াজ রিয়াজ সিকিউরিটি পে অর্ডার বাবদ ১০ লক্ষ ১ হাজার টাকা জমা দেন। লালমোহন পৌরসভার মেয়র হাজী এমদাদুল ইসলাম তুহিন ৩০০ শত টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের উপর একটি স্বাক্ষরিত হয়।
উক্ত কাজের প্রকাশিত মূল্য দুই কোটি টাকা এবং মূল্য ১ কোটি ৯৯ হাজার ৯৬ টাকা নির্ধারিত হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার তারিখ ছিল ২৫ মে ২০২০। কাজ শেষ হওয়ার তারিখ নির্ধারিত হয় পরবর্তী ১২০ কর্মদিবসের মধ্যে যা ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ঠিকাদার মোহাম্মদ কামাল হোসেন রিয়াজ উক্ত কাজের সম্পাদন না করে ১৮ জুন-২০২০ তারিখে চলতি বিল প্রদানের জন্য লালমন পৌরসভার বরাবর আবেদন করেন। উক্ত কাজের তদারকি কর্মকর্তা লালমোহন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত) উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিন নথিতে লিপিবদ্ধ করে মতামতসহ স্বাক্ষর পূর্বক ১ম চলতি বিল বাবদ ১ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার ১২৮ টাকা ঠিকাদার কামাল হোসেন রিয়াজকে প্রদানের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল বণিকের নিকট উপস্থাপন করেন।
লালমোহন পৌরসভা মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন ও পৌরসভার সচিব নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিকের যৌথ স্বাক্ষরের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসাস রিয়াজ স্টোর কে ১ম চলতি দিন বাবদ লালমোহন পৌরসভার নামীয় জনতা ব্যাংক লালমোহন শাখায় চলতি হিসাব নং ০১০০২১০৩০৯০২৫ এর চেক নং : সিডি. ১০/সিবি -২১১৫৪৪। গত ২১ জুন ২০২০ তারিখে ৮৭ লাখ ১১ হাজার ১৪০ টাকা, ভ্যাট আইটি, জামানত বাদে) প্রদান করা হয়।
এছাড়াও পরবর্তীতে লালমোহন পৌর মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল বনিক, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নিজাম উদ্দিন ও ঠিকাদার মেসার্স রিয়াজ স্টোরের মালিক কামাল হোসেন রিয়াজ এর যোগ সাজসে কাজ শেষ না করে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ ৯১৯ টাকা জনতা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেন।
এছাড়াও লালমোহন পৌরসভা মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন বিগত সময়ে নামে-বেনামে অর্থ পাচার, সম্পদ দখল ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মূলহোতা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় লোকজন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই তিনি কেমন মানুষ তা বলে শেষ করা যাবে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে চান। সবকিছুতেই তার অনিয়ম। কোন ভালো মানুষকে-কি দুদকে ধরে?’
দুর্নীতির বিষয়ে লালমোহন পৌর মেয়র এমদাদুল ইসলাম তুহিন সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।