খুব দ্রুতই টিকা সংকট কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৃহস্পতিবার দুপুরে অন-লাইন জুম অ্যাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা জানান।

‘করোনায় দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রস্ততি ও জরুরি অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা বিষয়ক’ এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

টিকা প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, ভারতের সেরাম কোম্পানির সাথে আমাদের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি থাকলেও সে দেশের বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার কারণে চুক্তি অনুযায়ী সব টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে টিকা নিতে রাশিয়ার সাথে সরকারের কথা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। রাশিয়ার সাথে শিগগির চুক্তি হবে আমাদের। পাশাপাশি চীন ১২ মে’র মধ্যে ৫ লাখ টিকা দিচ্ছে। চীন সরকারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। দ্রুতই চীনের টিকা নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত চলে আসবে। একই সাথে, অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা ভারত ছাড়া বিশ্বের অন্য যে দেশগুলি উৎপাদন করছে আমরা সেই দেশগুলির সাথেও যোগাযোগ করছি। সব মিলিয়ে আশা করা যায়, খুব দ্রুতই টিকা সংকট কেটে যাবে।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে সাধারণ ও করোনা রোগী মিলে ৭০ থেকে ৮০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর পিক-এর সময় সর্বোচ্চ অক্সিজেন চাহিদা ছিল ২১০ টন পর্যন্ত। এই মুহূর্তে দেশে দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ টন। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অক্সিজেন সংকটের কারণে বর্তমানে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। যেকোন সময় একই রকম অবস্থা যাতে আমাদের দেশে না হতে পারে, সেজন্য সরকারিভাবে আপদকালীন সময়ের জন্য এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯০০ টন অক্সিজেন মজুদ রাখা হয়েছে। এর সাথে দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে আরো ৪৫০ টন অক্সিজেন মজুদ রয়েছে।

আগামী মাসে একটি বেসরকারি সংস্থা ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জুলাই মাসে অন্য একটি বেসরকারি সংস্থা আরো ৪০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করবে। ফলে দেশে করোনাকালীন তৃতীয় ঢেউ-এর মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে তা মোকাবেলা করতে কোন সমস্যা হবে না। তবে করোনা আক্রান্তের মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হলে এবং মানুষ অস্বাভাবিকভাবে আক্রান্ত হলে শুধু সেক্ষেত্রেই বড় রকম সমস্যা হতে পারে। আর সেরকম বিপর্যয় যাতে না হতে পারে তার জন্যই সরকারকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লকডাউনসহ জরুরি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।

বিদেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা চিকিৎসায় রোগীর খারাপ অবস্থা হলে তখন অক্সিজেন মূল ভূমিকা পালন করে। এ কারণে অতি দ্রুত দেশের সরকারি ১৩০টি হাসপাতালে এখন সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই ১৩০টি হাসপাতালের মাধ্যমে এখন প্রায় ১৬ হাজার শয্যায় অক্সিজেন বেড করোনা রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করে যাচ্ছে।

সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বেশি মানুষকে টিকা দিতে হবে। সরকার যাতে দ্রুতই ভ্যাকসিন আমদানি করতে সক্ষম হয়, সেজন্য সরকারের সকল বিভাগ সক্রিয় রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল এসোসিয়েশনের সভাপতি মুবিন খানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ার হোসেন খান এমপি, স্বাচিপ-এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিপু মিয়াসহ দেশের বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য হাসপাতাল প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।