ঢাকা ১১:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বার্ধক্য একটি রোগ, ওষুধে সারিয়ে তোলা সম্ভব, মার্কিন বিজ্ঞানী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:২২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 125
আমরা জানি বার্ধক্য ঠেকানো যায় না, বার্ধক্য একটা প্রাকৃতিক নিয়ম এবং প্রত্যেকেরই নিয়তি। আমরা বেশিরভাগ মানুষ জীবনকে এভাবেই দেখি। কিন্তু জেনেটিক বিজ্ঞানী ডেভিড সিনক্লেয়ার তা মনে করেন না।

দুই দশকের ওপর এ বিষয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তিনি বলছেন, বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন শুধু কিছু সহজ অভ্যাস।

ড. সিনক্লেয়ার বিশ্বাস করেন, এমন দিন খুব দূরে নেই যখন ওষুধের সাহায্যে বার্ধক্য সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এসব ওষুধ এখন পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে এবং এ ওষুধগুলো দিয়ে বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়া আসলেই আটকে রাখা যাবে।

বিজ্ঞানী ড. ডেভিড সিনক্লেয়ার অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছেন। পরবর্তীতে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস্ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে। বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি ল্যাবরেটোরির প্রধান, যেখানে তার গবেষণার বিষয়- ‘কেন আমরা বুড়ো হই।’

তার গবেষণার জন্য তিনি বিজ্ঞান জগতের বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন সেলিব্রিটিও। টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের তালিকায় তিনি নির্বাচিত একজন ব্যক্তিত্ব। টুইটারে তার অনুসারীর সংখ্যা দুই লাখ।

বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়, তার ৩৫টি গবেষণার সত্ত্বাধিকারী তিনি নিজে। তিনি বেশ কয়েকটি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হয় প্রতিষ্ঠাতা, নয়তো সেগুলোর কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকটি কাজের ক্ষেত্র হল বার্ধক্য বিলম্বিত করা বা ঠেকানো।

মেরিল লিঞ্চ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বার্ধক্য সংক্রান্ত কাজে বর্তমানে ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার কোটি ডলার, যা ২০২৫ সালে গিয়ে পৌঁছবে ৬০ হাজার কোটি বা ৬০০ বিলিয়ন ডলারে।

বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি কাটতি যে বইটির, সেটি ড. সিনক্লেয়ারের লেখা- ‘লাইফস্প্যান-হোয়াই উই এজ-অ্যান্ড হোয়াই উই ডোন্ট হ্যাভ টু’ (কেন আমরা বৃদ্ধ হই, আর কেন আমরা বৃদ্ধ হবো না)। এই বইয়ে তিনি প্রচলিত বিশ্বাস ভাঙার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন- কেন বার্ধক্য একটা অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়া নয়।

ড. সিনক্লেয়ার বিশ্বাস করেন বৃদ্ধ হওয়া নিয়ে যেভাবে আমরা ভাবি, সে ভাবনাতে আমাদের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে, বার্ধক্য একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম নয়, আমাদের এটাকে একটা ‘অসুখ’ হিসাবে দেখতে হবে। অর্থাৎ রোগ হিসাবে এর চিকিৎসা সম্ভব এবং এর নিরাময়ও সম্ভব।

তিনি বলছেন, বৃদ্ধ বয়স নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা একেবারে পাল্টে ফেলতে পারি, তাহলে মানবজাতির আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে।

অন্যথায়, তিনি বলছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে আমাদের আয়ু আরও বছর দু’য়েক হয়ত বাড়ানো যাবে: ‘আমাদের লক্ষ্য সেটা আরও অনেক বাড়ানো।’

আমরা কেনো বৃদ্ধ হই- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সিনক্লেয়ার বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের শরীরের দুই ধরনের তথ্য মজুত থাকে। এর মধ্যে এক ধরনের তথ্য আমরা বংশগতভাবে পাই বাবা-মায়ের কাছ থেকে, আর অন্য ধরনের তথ্যগুলো শরীরে পরিবেশগত নানা কারণে সময়ের সাথে সাথে তৈরি হয়।

এর একটি হল ‘ডিজিটাল’ তথ্য- অর্থাৎ যেগুলো জেনেটিক সূত্র এবং অন্যটি হল ‘অ্যানালগ’ তথ্য- যাকে বলা হয় ‘এপিজিনোম’, যেটি কোষের ভেতরকার একটা পদ্ধতি, অর্থাৎ কোন জিন চালু রাখতে হবে, কোনটা বন্ধ করে দিতে হবে সেটা যে পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ল্যাবরেটরিতে বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, তার প্রধান ড. সিনক্লেয়ার

একটা কোষের ভেতর যে ২০ হাজার জিন থাকে, সেগুলোর মধ্যে কোনটি সক্রিয় থাকবে, আর কোনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, সেটাই কোষটিকে বলে দেয় সে কে। অর্থাৎ ওই কোষের পরিচয় কী হবে এবং কীভাবে সেই কোষটি কাজ করবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই এপিজিনোম পদ্ধতি তথ্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করে।

ধরুন ঠিক যেভাবে আপনার গানের একটা সিডিতে আঁচড় লেগে গেলে সিডি সেখান থেকে গানের অংশটা আর খুঁজে বের করতে পারে না। ফলে তথ্যের অভাবে কোষগুলোও ঠিক সময়ে সঠিক জিনকে চালু করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে – তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ড. সিনক্লেয়ার বলছেন, ‘আমার মতে, এ কারণেই আমরা বুড়ো হই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বার্ধক্য একটি রোগ, ওষুধে সারিয়ে তোলা সম্ভব, মার্কিন বিজ্ঞানী

আপডেট : ১২:২২:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
আমরা জানি বার্ধক্য ঠেকানো যায় না, বার্ধক্য একটা প্রাকৃতিক নিয়ম এবং প্রত্যেকেরই নিয়তি। আমরা বেশিরভাগ মানুষ জীবনকে এভাবেই দেখি। কিন্তু জেনেটিক বিজ্ঞানী ডেভিড সিনক্লেয়ার তা মনে করেন না।

দুই দশকের ওপর এ বিষয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। তিনি বলছেন, বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন শুধু কিছু সহজ অভ্যাস।

ড. সিনক্লেয়ার বিশ্বাস করেন, এমন দিন খুব দূরে নেই যখন ওষুধের সাহায্যে বার্ধক্য সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এসব ওষুধ এখন পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে এবং এ ওষুধগুলো দিয়ে বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়া আসলেই আটকে রাখা যাবে।

বিজ্ঞানী ড. ডেভিড সিনক্লেয়ার অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেছেন। পরবর্তীতে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস্ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে। বর্তমানে তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি ল্যাবরেটোরির প্রধান, যেখানে তার গবেষণার বিষয়- ‘কেন আমরা বুড়ো হই।’

তার গবেষণার জন্য তিনি বিজ্ঞান জগতের বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন সেলিব্রিটিও। টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ জনের তালিকায় তিনি নির্বাচিত একজন ব্যক্তিত্ব। টুইটারে তার অনুসারীর সংখ্যা দুই লাখ।

বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়, তার ৩৫টি গবেষণার সত্ত্বাধিকারী তিনি নিজে। তিনি বেশ কয়েকটি জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হয় প্রতিষ্ঠাতা, নয়তো সেগুলোর কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকটি কাজের ক্ষেত্র হল বার্ধক্য বিলম্বিত করা বা ঠেকানো।

মেরিল লিঞ্চ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বার্ধক্য সংক্রান্ত কাজে বর্তমানে ব্যয় হচ্ছে ১১ হাজার কোটি ডলার, যা ২০২৫ সালে গিয়ে পৌঁছবে ৬০ হাজার কোটি বা ৬০০ বিলিয়ন ডলারে।

বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি কাটতি যে বইটির, সেটি ড. সিনক্লেয়ারের লেখা- ‘লাইফস্প্যান-হোয়াই উই এজ-অ্যান্ড হোয়াই উই ডোন্ট হ্যাভ টু’ (কেন আমরা বৃদ্ধ হই, আর কেন আমরা বৃদ্ধ হবো না)। এই বইয়ে তিনি প্রচলিত বিশ্বাস ভাঙার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন- কেন বার্ধক্য একটা অবশ্যম্ভাবী প্রক্রিয়া নয়।

ড. সিনক্লেয়ার বিশ্বাস করেন বৃদ্ধ হওয়া নিয়ে যেভাবে আমরা ভাবি, সে ভাবনাতে আমাদের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের ভাবতে হবে, বার্ধক্য একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম নয়, আমাদের এটাকে একটা ‘অসুখ’ হিসাবে দেখতে হবে। অর্থাৎ রোগ হিসাবে এর চিকিৎসা সম্ভব এবং এর নিরাময়ও সম্ভব।

তিনি বলছেন, বৃদ্ধ বয়স নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যদি আমরা একেবারে পাল্টে ফেলতে পারি, তাহলে মানবজাতির আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে।

অন্যথায়, তিনি বলছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে অগ্রগতি হয়েছে তার ফলে আমাদের আয়ু আরও বছর দু’য়েক হয়ত বাড়ানো যাবে: ‘আমাদের লক্ষ্য সেটা আরও অনেক বাড়ানো।’

আমরা কেনো বৃদ্ধ হই- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সিনক্লেয়ার বিবিসিকে বলেন, ‘আমাদের শরীরের দুই ধরনের তথ্য মজুত থাকে। এর মধ্যে এক ধরনের তথ্য আমরা বংশগতভাবে পাই বাবা-মায়ের কাছ থেকে, আর অন্য ধরনের তথ্যগুলো শরীরে পরিবেশগত নানা কারণে সময়ের সাথে সাথে তৈরি হয়।

এর একটি হল ‘ডিজিটাল’ তথ্য- অর্থাৎ যেগুলো জেনেটিক সূত্র এবং অন্যটি হল ‘অ্যানালগ’ তথ্য- যাকে বলা হয় ‘এপিজিনোম’, যেটি কোষের ভেতরকার একটা পদ্ধতি, অর্থাৎ কোন জিন চালু রাখতে হবে, কোনটা বন্ধ করে দিতে হবে সেটা যে পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ল্যাবরেটরিতে বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, তার প্রধান ড. সিনক্লেয়ার

একটা কোষের ভেতর যে ২০ হাজার জিন থাকে, সেগুলোর মধ্যে কোনটি সক্রিয় থাকবে, আর কোনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে, সেটাই কোষটিকে বলে দেয় সে কে। অর্থাৎ ওই কোষের পরিচয় কী হবে এবং কীভাবে সেই কোষটি কাজ করবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই এপিজিনোম পদ্ধতি তথ্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করে।

ধরুন ঠিক যেভাবে আপনার গানের একটা সিডিতে আঁচড় লেগে গেলে সিডি সেখান থেকে গানের অংশটা আর খুঁজে বের করতে পারে না। ফলে তথ্যের অভাবে কোষগুলোও ঠিক সময়ে সঠিক জিনকে চালু করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে – তাদের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ড. সিনক্লেয়ার বলছেন, ‘আমার মতে, এ কারণেই আমরা বুড়ো হই।’