ঢাকা ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভয়াবহ ওমিক্রনে ‘বিচ্ছিন্ন’ দ. আফ্রিকা, ফ্লাইট বন্ধ বহু দেশের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০৯:১৭:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
  • / 76
করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) ওমিক্রনের কারণে কার্যত ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত সপ্তাহে করোনার এ নতুন ধরন দেশটিতে ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা এটাকে করোনার ‘সবচেয়ে ভয়াবহ ধরন’ বলে মন্তব্য করছেন।

প্রাথমিকভাবে এটাকে বি.১.১.৫২৯ নামে চিহ্নিত করা হলেও শুক্রবার এর নামকরণ করা হয়েছে ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা এ নামকরণ করেন। তারা এটাকে ‘উদ্বেগের ধরন’ বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গবেষকরা বলছেন, করোনার মূল ধরনগুলো থেকে এটি অনেকটাই আলাদা। তাই ওমিক্রন মোকাবেলায় করোনার প্রচলিত টিকা কতোটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্বের বহু দেশ।

ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তাদের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে। যেসব দেশ এখনও তা করেনি, তারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করছে।

গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেন। পরে বোস্তওয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং ও ইসরায়েলে নতুন এ ধরনের খোঁজ পাওয়া যায়।

সংক্রমণের ঝুঁকি ও টিকার কার্যাকরিতার প্রশ্নে ওমিক্রনকে করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ ধরন বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর আশাপাশের সাতটি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ দেশগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবোয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, এসয়াতিনি, মোজাম্বিক ও মালাওয়ি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ। শনিবার অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, ইরান, ব্রাজিল, কানাডা ও থাইল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর আশপাশের কয়েকটি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে আফ্রিকার ওই দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। তারা বলছে, ব্রিটিশ ও আইরিশ জাতীয়তার লোক ছাড়া কাউকে আপাতত তারা দেশে প্রবেশ করতে দেবে না।

ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে সিঙ্গাপুরও। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো দেশই বিমানপথে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখছে।

নতুন এ ধরন সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের এ ধরনটি ব্যাপকভাবে মিউটেট (আচরণ পরিবর্তন) করেছে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের একজন ভাইরোলজিস্ট নতুন এ ধরনকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরন’ বলে বর্ণনা করেছেন। শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে মোট ৫৯ জন ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেন, এ ধরন ‘মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক’ এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে এটি ‘অনেক ভিন্ন।’

তিনি বলেন, ‘এ ভ্যারিয়েন্ট আমাদের অবাক করেছে। বিবর্তনের হিসেবে এবং পরবর্তী মিউটেশনের হিসেব করলে এটি কয়েক ধাপ লাফ দিয়েছে।’

এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক অলিভিয়েরা বলেন, সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি মিউটেশেনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনের এ ধরনগুলোকে আক্রমণ করে।

ভাইরাসের যে অংশটি- রিসিপটর বাইন্ডিং ডোমেইন- আমাদের শরীরের কোষের সাথে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টে সেটির ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসেবে আলোড়ন তৈরি করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এ মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি।

অনেকগুলো মিউটেশন থাকা মানেই যে তা ক্ষতিকর, তা নয়। কিন্তু মিউটেশনগুলো আসলে কী ক্ষতি করছে- তা জানা জরুরি। চিন্তার বিষয় হলো, চীনের উহানে উদ্ভূত ধরণের চেয়ে এটি অনেক ভিন্ন।

এর অর্থ হলো, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তৈরি হওয়া টিকা- যেগুলো মূল ধরণটি ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল- নতুন ধরণের জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।

অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের সাথে এর পার্থক্য? এ ভ্যারিয়েন্টটিতে দেখা যাওয়া কয়েকটি মিউটেশন এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।

নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরও কিছু মিউটেশন রয়েছে, যার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে না এবং ভ্যাকসিনকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর করতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেন, ‘মিউটেশনগুলো ভাইরাসকে সংক্রমণে, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। ইমিউন সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতাও থাকতে পারে এগুলোর।’

এর আগেও করোনা ভাইরাসের নতুন আবিষ্কৃত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আতঙ্ক শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এ বছরের শুরুতে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরি করেছিল বেটা ভ্যারিয়েন্ট। কারণ, ইমিউন সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ছিল এ ভ্যারিয়েন্টের। কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুত সংক্রমিত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি ভয়াবহ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন, ‘বেটা শুধু ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতো, আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণের ক্ষমতা ছিল বেশি। নতুন ভ্যারিয়ন্টের এ দুই ধরণের ক্ষতি করারই সামর্থ্য রয়েছে।’

ল্যাবরেটরিতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রকৃতিতে এই ভাইরাস কেমন আচরণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করলে আরও দ্রুত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভয়াবহ ওমিক্রনে ‘বিচ্ছিন্ন’ দ. আফ্রিকা, ফ্লাইট বন্ধ বহু দেশের

আপডেট : ০৯:১৭:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২১
করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) ওমিক্রনের কারণে কার্যত ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত সপ্তাহে করোনার এ নতুন ধরন দেশটিতে ধরা পড়ে। বিজ্ঞানীরা এটাকে করোনার ‘সবচেয়ে ভয়াবহ ধরন’ বলে মন্তব্য করছেন।

প্রাথমিকভাবে এটাকে বি.১.১.৫২৯ নামে চিহ্নিত করা হলেও শুক্রবার এর নামকরণ করা হয়েছে ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা এ নামকরণ করেন। তারা এটাকে ‘উদ্বেগের ধরন’ বা ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গবেষকরা বলছেন, করোনার মূল ধরনগুলো থেকে এটি অনেকটাই আলাদা। তাই ওমিক্রন মোকাবেলায় করোনার প্রচলিত টিকা কতোটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমিক্রনের সংক্রমণ ঠেকাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্বের বহু দেশ।

ইতোমধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তাদের ফ্লাইট বন্ধ ঘোষণা করেছে। যেসব দেশ এখনও তা করেনি, তারা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করছে।

গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের অস্তিত্ব চিহ্নিত করেন। পরে বোস্তওয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং ও ইসরায়েলে নতুন এ ধরনের খোঁজ পাওয়া যায়।

সংক্রমণের ঝুঁকি ও টিকার কার্যাকরিতার প্রশ্নে ওমিক্রনকে করোনার সবচেয়ে ভয়াবহ ধরন বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর।

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর আশাপাশের সাতটি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ দেশগুলো হলো- দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবোয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, এসয়াতিনি, মোজাম্বিক ও মালাওয়ি।

দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ। শনিবার অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, ইরান, ব্রাজিল, কানাডা ও থাইল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা ও এর আশপাশের কয়েকটি দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে আফ্রিকার ওই দেশগুলোর সঙ্গে ফ্লাইট বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। তারা বলছে, ব্রিটিশ ও আইরিশ জাতীয়তার লোক ছাড়া কাউকে আপাতত তারা দেশে প্রবেশ করতে দেবে না।

ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে সিঙ্গাপুরও। আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সবগুলো দেশই বিমানপথে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখছে।

নতুন এ ধরন সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের এ ধরনটি ব্যাপকভাবে মিউটেট (আচরণ পরিবর্তন) করেছে।

যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সংক্রামক রোগ বিষয়ক সংস্থা ইমপেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইনফেকশাস ডিজিজের একজন ভাইরোলজিস্ট নতুন এ ধরনকে ‘ভয়াবহ’ ও ‘এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে খারাপ ধরন’ বলে বর্ণনা করেছেন। শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা ও হংকংয়ে মোট ৫৯ জন ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভিয়েরা বলেন, এ ধরন ‘মিউটেশনের ধারা অস্বাভাবিক’ এবং অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট থেকে এটি ‘অনেক ভিন্ন।’

তিনি বলেন, ‘এ ভ্যারিয়েন্ট আমাদের অবাক করেছে। বিবর্তনের হিসেবে এবং পরবর্তী মিউটেশনের হিসেব করলে এটি কয়েক ধাপ লাফ দিয়েছে।’

এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক অলিভিয়েরা বলেন, সব মিলিয়ে ৫০টি মিউটেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৩০টি মিউটেশেনই স্পাইক প্রোটিনে। অধিকাংশ টিকাই স্পাইক প্রোটিনের এ ধরনগুলোকে আক্রমণ করে।

ভাইরাসের যে অংশটি- রিসিপটর বাইন্ডিং ডোমেইন- আমাদের শরীরের কোষের সাথে প্রথম সংযোগ ঘটায়, নতুন ভ্যারিয়েন্টে সেটির ১০টি মিউটেশন রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতিকর হিসেবে আলোড়ন তৈরি করা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে এ মিউটেশন ছিল মাত্র দুটি।

অনেকগুলো মিউটেশন থাকা মানেই যে তা ক্ষতিকর, তা নয়। কিন্তু মিউটেশনগুলো আসলে কী ক্ষতি করছে- তা জানা জরুরি। চিন্তার বিষয় হলো, চীনের উহানে উদ্ভূত ধরণের চেয়ে এটি অনেক ভিন্ন।

এর অর্থ হলো, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে তৈরি হওয়া টিকা- যেগুলো মূল ধরণটি ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল- নতুন ধরণের জন্য সমানভাবে কার্যকর নাও হতে পারে।

অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের সাথে এর পার্থক্য? এ ভ্যারিয়েন্টটিতে দেখা যাওয়া কয়েকটি মিউটেশন এর আগে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।

নতুন ভ্যারিয়েন্টে আরও কিছু মিউটেশন রয়েছে, যার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শনাক্ত করতে পারে না এবং ভ্যাকসিনকে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর করতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলু-নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড লেসেলস বলেন, ‘মিউটেশনগুলো ভাইরাসকে সংক্রমণে, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে ছড়িয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী করেছে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। ইমিউন সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতাও থাকতে পারে এগুলোর।’

এর আগেও করোনা ভাইরাসের নতুন আবিষ্কৃত হওয়া ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে আতঙ্ক শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল।

এ বছরের শুরুতে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক তৈরি করেছিল বেটা ভ্যারিয়েন্ট। কারণ, ইমিউন সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে শরীরে প্রবেশ করার সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি ছিল এ ভ্যারিয়েন্টের। কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুত সংক্রমিত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই বেশি ভয়াবহ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাভি গুপ্তা বলেন, ‘বেটা শুধু ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতো, আর কিছু না। ডেল্টার সংক্রমণের ক্ষমতা ছিল বেশি। নতুন ভ্যারিয়ন্টের এ দুই ধরণের ক্ষতি করারই সামর্থ্য রয়েছে।’

ল্যাবরেটরিতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় গবেষণার মাধ্যমে নতুন এ ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে আরও পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রকৃতিতে এই ভাইরাস কেমন আচরণ করে, তা পর্যবেক্ষণ করলে আরও দ্রুত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।