‘রাওয়াতের কপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ বের করা কঠিন’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:০২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • / 117
ভারতের তামিলনাড়ুর সুলুর থেকে কুন্নুর যাওয়ার পথে যেভাবে প্রতিরক্ষা প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) জেনারেল বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে বলে দেশটির বিমানবাহিনীর বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইন এ খবর জানায়।

ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, সুলুর বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে কুন্নুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের মধ্যে প্রায়ই হেলিকপ্টার যাওয়াআসা করে। তার মধ্যে ভিআইপি কপ্টারও থাকে।

ওই এলাকায় নীলগিরি পর্বতের উচ্চতাও বেশি নয়। কিন্তু জঙ্গল ও চা-বাগানের মধ্যে পড়ে যাওয়ার পর যেভাবে এমআই-১৭ ভিফাইভ কপ্টারটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল, তাতে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর (এরোস্পেস সেফটি) কার্তিকেয় কালের মতে, কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার পর জঙ্গল, চা-বাগান ও পাহাড়ের খাদের মধ্যে পাইলট হেলিকপ্টার নামানোর কোনও উপযুক্ত সমতল জায়গা পাননি বলেই এটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ভারতের বিমান বাহিনীর বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটিতে পড়ার আগে হেলিকপ্টারটি গাছেও ধাক্কা খেয়েছিল। ফলে সেটি সজোরে মাটিতে ধাক্কা খায়।

সাবেক বিমানবাহিনী কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলের ছবি-ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, জ্বালানির ট্যাঙ্কার ফেঁটে তেল বেরিয়ে আসায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। কপ্টারের মূল পাখার দিকের রোটাহেড ও লেজের দিকের টেলবুমের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। টেলবুমে কপ্টারের নম্বরটিও (জেডপি ৫১৬৪) দেখা গেছে।

বিমানবাহিনী ইতোমধ্যেই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী বুধবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কারণ, ঘটনাস্থলের কাছেই একটি গ্রাম ছিল। গ্রামের মানুষই প্রথম উদ্ধারের কাজ শুরু করেন।

মনে হচ্ছে, কপ্টারটি খুব নিচু দিয়ে উড়ছিল। সাধারণত খারাপ আবহাওয়ার সময়ে মেঘের নীচ দিয়ে ওড়ার চেষ্টা করেন পাইলটেরা। তাতে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও এটি উড়েছিল কি না, তা-ও এ ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন।

ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন খুবই শক্তিশালী। যদি সেই হেলিকপ্টার কম উচ্চতায় ওড়ে, তা হলে পাখার হাওয়ার ধাক্কা নীচের জমি বা গাছে গিয়ে লাগা খুব স্বাভাবিক। হেলিকপ্টারের হাওয়ায় গাছপালা দুলতে শুরু করলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আবার সেই হাওয়ার এক বিপরীতমুখী ধাক্কা কপ্টারেও এসে লাগে।

ঘটনাস্থলে বড় গাছের ডাল ভেঙে পড়ার ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, চপারের রোটরে গাছের ধাক্কা লেগেছিল। একবার কপ্টারের গতি কমে গেলে তা ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল, বিশেষত পাহাড়ি এলাকায়।

বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ১৪ আরোহী নিয়ে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৩ জনই নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী ও আরও ১১ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংকে ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুন্নুরের কয়েকজন বাসিন্দা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা চোখে দেখার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। প্রকাশ্যে এসেছে রাওয়াতের কপ্টারের দুর্ঘটনায় পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তের ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঘন কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে জেনারেল রাওয়াতের কপ্টার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘রাওয়াতের কপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ বের করা কঠিন’

আপডেট : ১২:০২:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
ভারতের তামিলনাড়ুর সুলুর থেকে কুন্নুর যাওয়ার পথে যেভাবে প্রতিরক্ষা প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) জেনারেল বিপিন রাওয়াতের হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা কঠিন হতে পারে বলে দেশটির বিমানবাহিনীর বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইন এ খবর জানায়।

ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, সুলুর বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে কুন্নুরে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজের মধ্যে প্রায়ই হেলিকপ্টার যাওয়াআসা করে। তার মধ্যে ভিআইপি কপ্টারও থাকে।

ওই এলাকায় নীলগিরি পর্বতের উচ্চতাও বেশি নয়। কিন্তু জঙ্গল ও চা-বাগানের মধ্যে পড়ে যাওয়ার পর যেভাবে এমআই-১৭ ভিফাইভ কপ্টারটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল, তাতে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর (এরোস্পেস সেফটি) কার্তিকেয় কালের মতে, কিছু সমস্যা দেখা দেয়ার পর জঙ্গল, চা-বাগান ও পাহাড়ের খাদের মধ্যে পাইলট হেলিকপ্টার নামানোর কোনও উপযুক্ত সমতল জায়গা পাননি বলেই এটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ভারতের বিমান বাহিনীর বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাটিতে পড়ার আগে হেলিকপ্টারটি গাছেও ধাক্কা খেয়েছিল। ফলে সেটি সজোরে মাটিতে ধাক্কা খায়।

সাবেক বিমানবাহিনী কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলের ছবি-ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে, জ্বালানির ট্যাঙ্কার ফেঁটে তেল বেরিয়ে আসায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। কপ্টারের মূল পাখার দিকের রোটাহেড ও লেজের দিকের টেলবুমের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। টেলবুমে কপ্টারের নম্বরটিও (জেডপি ৫১৬৪) দেখা গেছে।

বিমানবাহিনী ইতোমধ্যেই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী বুধবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কারণ, ঘটনাস্থলের কাছেই একটি গ্রাম ছিল। গ্রামের মানুষই প্রথম উদ্ধারের কাজ শুরু করেন।

মনে হচ্ছে, কপ্টারটি খুব নিচু দিয়ে উড়ছিল। সাধারণত খারাপ আবহাওয়ার সময়ে মেঘের নীচ দিয়ে ওড়ার চেষ্টা করেন পাইলটেরা। তাতে অনেক সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও এটি উড়েছিল কি না, তা-ও এ ক্ষেত্রে বড় প্রশ্ন।

ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তারা বলছেন, এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের ইঞ্জিন খুবই শক্তিশালী। যদি সেই হেলিকপ্টার কম উচ্চতায় ওড়ে, তা হলে পাখার হাওয়ার ধাক্কা নীচের জমি বা গাছে গিয়ে লাগা খুব স্বাভাবিক। হেলিকপ্টারের হাওয়ায় গাছপালা দুলতে শুরু করলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আবার সেই হাওয়ার এক বিপরীতমুখী ধাক্কা কপ্টারেও এসে লাগে।

ঘটনাস্থলে বড় গাছের ডাল ভেঙে পড়ার ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, চপারের রোটরে গাছের ধাক্কা লেগেছিল। একবার কপ্টারের গতি কমে গেলে তা ফিরিয়ে আনা খুব মুশকিল, বিশেষত পাহাড়ি এলাকায়।

বুধবার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ১৪ আরোহী নিয়ে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৩ জনই নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়াত, তার স্ত্রী ও আরও ১১ সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংকে ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুন্নুরের কয়েকজন বাসিন্দা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা চোখে দেখার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। প্রকাশ্যে এসেছে রাওয়াতের কপ্টারের দুর্ঘটনায় পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তের ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, ঘন কুয়াশায় মিলিয়ে যাচ্ছে জেনারেল রাওয়াতের কপ্টার।