পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ ৮৯টি স্কুল
- আপডেট : ০১:৩৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২১
- / 112
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে দেড় বছর বন্ধ ছিল রাজ্যের স্কুল। গত মাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলেছে। এখন নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির অফলাইন ক্লাস হচ্ছে। এরই মধ্যে স্কুল বন্ধের দুঃসংবাদ।
রাজ্যের ৮৯টি স্কুল আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। এ স্কুলগুলো জুনিয়ার হাই ও হাইস্কুল স্তরের। এসব স্কুলের অধিকাংশতেই নেই কোনো শিক্ষার্থী। এ শিক্ষার্থীর অভাবেই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পরিষদ।
বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব স্কুল থেকে ৩১১ শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বদলি করা হবে অন্যত্র। রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতি রয়েছে। বন্ধ হওয়া স্কুলের শিক্ষকদের সেখানে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে ১৭০ জনের বদলির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে পরিষদ।
বন্ধ হওয়া স্কুল সবচেয়ে বেশি রয়েছে হাওড়াতে। খোদ কলকাতাসহ এ তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, আলিপুরদুয়ার ও অন্যান্য জেলা।
স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও রবীন্দ্রভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, ‘একজন ছাত্র থাকলেও একটা স্কুল চালাতে হবে। তবেই তো আরও শিক্ষার্থী আসবে। স্কুল তুলে দেয়া কোনো সমাধান নয়। এ বিষয়টা নিয়ে আমি একেবারে বিভ্রান্ত। সরকারের উচিত এ নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া। কেন তারা স্কুল বন্ধ করল, এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা দরকার।’
জুনিয়র হাইস্কুল গড়ে ওঠার পেছনে কারণ কী? স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে সরকার এ ধরনের স্কুল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে, যাতে কোনো শিক্ষার্থীকে এক কিলোমিটারের বেশি দূরে পড়তে যেতে না হয়। কিন্তু এ স্কুলগুলোতে মাত্র দুই তিনজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির লেখাপড়ার জন্য সেই শিক্ষকরা বদলি বা অন্য কারণে স্কুল ছেড়ে দিলে সেই শূন্যস্থান পূরণ হয়নি।
ফলে একজন শিক্ষকের পক্ষে সব ছাত্র সামলানো সম্ভব হতো না। সেক্ষেত্রে অভিভাবকরা অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত বড় স্কুল, যেখানে প্রায় হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে, সেখানে ছুটেছেন। আর ক্রমশ শূন্য হয়ে পড়েছে জুনিয়র হাইস্কুল।
প্রথম থেকেই স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। এই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, ‘সরকারের উদাসীনতার ফলেই স্কুলগুলো রুগ্ন হয়ে পড়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে ক্রমশ ছাত্রশূন্য হয়ে গেছে স্কুলগুলো। সরকারের উচিত ছিল যথাযথভাবে নিয়োগ করে, পরিকাঠামো উন্নত করে স্কুলগুলোকে লেখাপড়ার উপযোগী রাখা। সেটা না করাতেই স্কুল বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।’
করোনা আবহে একদিকে অভিভাবকদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা চরমে, বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। সংসারের আর্থিক কারণে যেমন নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে, তেমনি অনেক পড়ুয়া শিশুশ্রমিকের কাজ নিয়ে অন্য রাজ্যে চলে গেছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের কুলতলির একটি স্কুলে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ুয়া স্কুলছুট।
এ রকম পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলবে? শিক্ষাবিদ ও জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অভিজিৎ পাঠক বলেন, ‘কোভিডের দেড় বছরে ল্যাপটপ, মোবাইল না থাকায় শিক্ষায় গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছে। এলিটদের সুবিধা হয়েছে। স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে এই ফারাক আরো বাড়বে।’
স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষালাভ শিশুর অধিকার। প্রত্যেক এলাকায় স্কুল থাকা দরকার। কোভিড পরবর্তী সময়ে যখন বিধি মেনে স্কুল খোলার পর্ব চলছে, সেই সময় স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত মানা যায় না।’ এতে দূরের স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পাঠানোর প্রবণতা কমবে, বাড়বে ড্রপ আউট।
সরকারি স্কুল বন্ধ হলে তা যে আদতে শিক্ষার বাণিজ্যিকরণে সাহায্য করবে, এমনটা মনে করছে শিক্ষা মহলের একাংশ। কিঙ্কর বলেন, ‘যদি সরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে যায় বা পরিকাঠামো না থাকে, তাহলে সঙ্গতিসম্পন্ন অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুলের দিকে ঝুঁকবেন। যদি প্রাথমিক স্কুলের কথাই ধরেন, তাহলে দুই তিনজন কর্মী দিয়ে সেই স্কুল চলে। আর নার্সারি স্কুলের ১৭-১৮ জন কর্মী থাকেন। সেখানকার পরিকাঠামো, পড়ালেখা ভালো হওয়ার সুযোগ তো থাকবেই।’