তালেবানের থাকা না থাকা: সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক বাতিল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:০০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 147
আফগানিস্তানের হয়ে তালেবানের থাকা না থাকা নিয়ে মতানৈক্যের জেরে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের জোট সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশনের (সার্ক) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক বাতিল হয়েছে। বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানায়।

স্থানীয় সময় শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায়, পাকিস্তান চেয়েছিল, বৈঠকে তালেবান আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করুক। কিন্তু ভারতসহ জোটের আরও কয়েকটি সদস্য দেশ এতে আপত্তি জানায়। এর জেরেই বাতিল হয়ে যায় ওই বৈঠক।

গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। চলতি মাসের শুরুর দিকে তারা সরকার গঠন করে। ওই সরকারে কোনো নারীর অংশগ্রহণ নেই। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অসন্তোষ রয়েছে।

কাবুলে তালেবান ক্ষমতায় আসায় নানা কারণেই অস্বস্তিতে আছে ভারত। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ভারতের আশঙ্কা কাশ্মিরের বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিতে পারে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে তালেবানের প্রতিনিধিত্বের দাবি অগ্রাহ্য করেছে এবারের বৈঠকের আয়োজক ছিল নেপালও।

প্রতিবারই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে সার্কের মন্ত্রীপর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সার্কের এ আট দেশ হলো- বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান।

ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এনডিটিভিকে জানান, বৈঠকে তালেবানকে রাখার জন্য বার বার বলেছিল পাকিস্তান, কিন্তু অন্য কোনো দেশ তাকে সম্মত হয়নি।

সরকার গঠন করলেও আফগানিস্তানের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। অন্য কোনো দেশও তালেবান সরকারকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই জাতিসংঘের কালোভূক্ত। কারো কারো নাম যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘ওয়ান্টেডে’র তালিকায়ও রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের সামনে কথা বলার অনুরোধ জানিয়েছে তালেবান। গত সোমবার তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি চিঠি দিয়ে এ অনুরোধ জানান। বিবিসির খবরে বলা হয়, তালেবানের এ অনুরোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে জাতিসংঘের একটি কমিটি।

খবরে বলা হয়, তালেবান জাতিসংঘে কথা বলার জন্য এরই মধ্যে তাদের মুখপাত্র সুহাইল শাহীনকে মনোনীত করেছে। যিনি দোহায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায়ও তালেবানের একজন মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন। তালেবান বলছে, আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গানি সরকারের দূত এখন জাতিসংঘে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

জাতিসংঘের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের ওই আলোচনায় অংশ নেয়ার অনুরোধটি জাতিসংঘের ক্রেডেনশিয়াল কমিটি বিবেচনা করছে। ৯ সদস্যের ওই কমিটির অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া।

তবে, আগামী সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে সেখানে তালেবানের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, নিয়মানুযায়ী অধিবেশন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জাতিসংঘে আফগানিস্তানের দূত হিসেবে গোলাম ইসাকজাই বহাল থাকবেন। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর সভার শেষ দিনে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ১৯৯৬ সালে শেষবার যখন তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিলে তখনো তারা জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে দিয়েছিল।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে কাতার বিশ্বনেতাদের তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানায়। কাতারের শাসক শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, তালেবানকে বয়কট করলে শুধু রাজনীতিতে মেরুকরণ ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। এর চেয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ফলপ্রসূ হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তালেবানের থাকা না থাকা: সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক বাতিল

আপডেট : ০১:০০:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
আফগানিস্তানের হয়ে তালেবানের থাকা না থাকা নিয়ে মতানৈক্যের জেরে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের জোট সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশনের (সার্ক) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক বাতিল হয়েছে। বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর জানায়।

স্থানীয় সময় শনিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে এ বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ভারতের সংবাদমাধ্যম জানায়, পাকিস্তান চেয়েছিল, বৈঠকে তালেবান আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করুক। কিন্তু ভারতসহ জোটের আরও কয়েকটি সদস্য দেশ এতে আপত্তি জানায়। এর জেরেই বাতিল হয়ে যায় ওই বৈঠক।

গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। চলতি মাসের শুরুর দিকে তারা সরকার গঠন করে। ওই সরকারে কোনো নারীর অংশগ্রহণ নেই। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অসন্তোষ রয়েছে।

কাবুলে তালেবান ক্ষমতায় আসায় নানা কারণেই অস্বস্তিতে আছে ভারত। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ভারতের আশঙ্কা কাশ্মিরের বিদ্রোহীদের আশ্রয় দিতে পারে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ বৈঠকে তালেবানের প্রতিনিধিত্বের দাবি অগ্রাহ্য করেছে এবারের বৈঠকের আয়োজক ছিল নেপালও।

প্রতিবারই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে সার্কের মন্ত্রীপর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সার্কের এ আট দেশ হলো- বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান।

ভারত সরকারের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এনডিটিভিকে জানান, বৈঠকে তালেবানকে রাখার জন্য বার বার বলেছিল পাকিস্তান, কিন্তু অন্য কোনো দেশ তাকে সম্মত হয়নি।

সরকার গঠন করলেও আফগানিস্তানের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি ভারত। অন্য কোনো দেশও তালেবান সরকারকে এখনও স্বীকৃতি দেয়নি। তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই জাতিসংঘের কালোভূক্ত। কারো কারো নাম যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘ওয়ান্টেডে’র তালিকায়ও রয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতাদের সামনে কথা বলার অনুরোধ জানিয়েছে তালেবান। গত সোমবার তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি চিঠি দিয়ে এ অনুরোধ জানান। বিবিসির খবরে বলা হয়, তালেবানের এ অনুরোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে জাতিসংঘের একটি কমিটি।

খবরে বলা হয়, তালেবান জাতিসংঘে কথা বলার জন্য এরই মধ্যে তাদের মুখপাত্র সুহাইল শাহীনকে মনোনীত করেছে। যিনি দোহায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায়ও তালেবানের একজন মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছেন। তালেবান বলছে, আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গানি সরকারের দূত এখন জাতিসংঘে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন না।

জাতিসংঘের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, উচ্চ পর্যায়ের ওই আলোচনায় অংশ নেয়ার অনুরোধটি জাতিসংঘের ক্রেডেনশিয়াল কমিটি বিবেচনা করছে। ৯ সদস্যের ওই কমিটির অন্যতম সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া।

তবে, আগামী সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শেষ হওয়ার আগে সেখানে তালেবানের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, নিয়মানুযায়ী অধিবেশন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জাতিসংঘে আফগানিস্তানের দূত হিসেবে গোলাম ইসাকজাই বহাল থাকবেন। তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর সভার শেষ দিনে ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে ১৯৯৬ সালে শেষবার যখন তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিলে তখনো তারা জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে সরিয়ে দিয়েছিল।

মঙ্গলবার জাতিসংঘে কাতার বিশ্বনেতাদের তালেবানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার আহ্বান জানায়। কাতারের শাসক শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, তালেবানকে বয়কট করলে শুধু রাজনীতিতে মেরুকরণ ও প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। এর চেয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া ফলপ্রসূ হতে পারে।