দেশে তৈরি যক্ষ্মার ওষুধ রপ্তানিও হবে
- আপডেট : ০৫:৫৭:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২২
- / 208
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে টিবি বিষয়ক নবম জেএমএম প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, যক্ষ্মা পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আছে, এখনো তার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। যক্ষ্মায় প্রতি বছর ৩ লাখের অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। অসংখ্য মারা যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুর হার কমেছে। ২০১৫ সালে যেখানে ৭০ হাজারের অধিক মৃত্যু ছিল, এখন তা ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। আমাদের মৃত্যু বেশি, কারণ জনসংখ্যা বেশি।
জাহিদ মালিক বলেন, টিবি পরিস্থিতির অগ্রগতি হচ্ছে। ব্যাপক ভিত্তিতে টিবি স্ক্রিনিং কার্যক্রম চলছে। আমাদের সব হাসপাতালে যক্ষ্মা পরীক্ষার যন্ত্রপাতি রয়েছে। টিবির বিষয়ে দেশে বেশকিছু স্টিগমা (অপবাদ) আছে। তবে পরিবর্তন আসছে। মানুষ এখন কুসংস্কার এড়িয়ে চিকিৎসাকেন্দ্রে যাচ্ছেন। ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছেন। আমরা চাই মানুষ চিকিৎসা নিতে আসুক। তাদের চিকিৎসা দেয়ার সব ব্যবস্থা রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার চাপ শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এসময় আমাদের স্বাস্থ্যখাত চাপে পড়েছিল। হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য দিয়ে দিতে হয়েছিল। তখন সরকারকে নতুন নতুন হাসপাতাল করতে হয়েছে। নতুন নতুন শয্যা ও সুযোগ সুবিধা যুক্ত করতে হয়েছে। এসময় টিবিসহ অন্যান্য সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করে খুব দ্রুতই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। যেখানে সারাবিশ্বে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এখন প্রতি জেলায়ই রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমরা সহায়তাও দিচ্ছি। আমরা চিকিৎসা দিতে পারি কিন্তু আক্রান্তের হার কমাতে মশা কমাতে হবে। এটি স্থানীয় সরকার বিভাগকে করতে হবে।
এ সংক্রান্ত তথ্যসূত্রে বলা হয়, ২০২১ সালে নতুনভাবে ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের ৯৫ শতাংশ শনাক্তকরণ এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ সম্ভব হয়েছে। ২০১৫ সালে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যায় যক্ষ্মা সংক্রমণের হার ২২৫ জন থেকে ২০২১ সালে সংক্রমণের হার ২১৮ জনের মধ্যে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। সব ধরনের যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা শনাক্তকরণ বেড়েছে, যা ২০১৫ সালে ছিল প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার ৮৬৬ এবং ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৩১ জনে।
বাংলাদেশ ২০১২ সালে জিন এক্সপার্ট নামে একটি উন্নত স্বয়ংক্রিয় যক্ষ্মা শনাক্তকারী পরীক্ষা চালু করেছিল, যা এখন ৫১০টি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব যক্ষ্মা অনুমানকারীর জন্য এ পরীক্ষাটি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম স্বল্পমেয়াদি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেছে। বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার লক্ষ্যকে একটি বাধ্যতামূলক লক্ষণীয় রোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কাগজভিত্তিক রেকর্ডিং এবং রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক রেকর্ডিং এবং রিপোর্টিং চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করলেও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এখনো ধারণা করা হচ্ছে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ শনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি। এই লক্ষ্যে নবম জেএমএমে যক্ষ্মা কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন প্রস্তাবিত হয়েছে। মূল চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রোগ্রামের লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টিবি মহামারির একটি টেকসই সমাপ্তির জন্য যক্ষ্মা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্জনযোগ্য সমাধানগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।