ঢাকা ০১:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অগ্নিঝরা মার্চ

স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়লো সবখানে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৭:৪৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩
  • / 125

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ। ১৯৭১ সালের এ দিন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়। এ দিন পূর্ব বাংলার কোথাও পাকিস্তনের পতাকা ওড়েনি। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কবর ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান অনিবার্য করে তোলে।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চের লাহোর প্রস্তাবের স্মরণে পাকিস্তানের জাতীয় দিবস ‘পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবস’ প্রত্যাখ্যান করে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ স্বাধীন কেন্দ্রীয় বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পূর্ব বাংলায় জাতীয়ভাবে ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধায়নে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনী’ এদিন পল্টন ময়দানে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে পূর্ণ সামরিক কায়দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। ‘জয় বাংলা বাহিনী’র প্রধান কামরুল আলম খান খসরুর (পরবর্তীতে ‘ওরা ১১ জন’ খ্যাত চিত্রনায়ক) .২২ বোর রাইফেলের প্রকাশ্য গান ফায়ারের সাথে ‘জয় বাংলা বাহিনী’র উপ-প্রধান হাসানুল হক ইনু (বর্তমানে জাসদ সভাপতি ও সংসদ সদস্য) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

‘জয় বাংলা বাহিনী’র নারী ও পুরুষ কন্টিজেন্টের সদস্যরা ডামী রাইফেল নিয়ে মার্চ পাষ্ট করে পতাকার প্রতি সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ মার্চ পাষ্টে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় মাইকে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বেজে ওঠে। এরপর ‘জয় বাংলা বাহিনী’ রাজপথে সামরিক কায়দায় মার্চ পাষ্ট করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পতাকাটি নিজ বাসভবনে উত্তোলন করেন। এদিন কূর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট, প্রেসিডেন্ট হাউস, মার্কিন কনস্যূলেট ছাড়া ঢাকায় হাইকোর্ট, সচিবালয়, বিচারপতিদের বাসভবন, বিদেশী কূটনৈতিক মিশন সহ সরকারী-বেসরকারী সকল ভবন ও স্থাপনার শীর্ষে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তৈরি ও বিতরণ করা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

একইভাবে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পূর্ব বাংলার সকল জেলা, মহকুমা, থানায় সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এদিন ঢাকা টেলিভিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় যাতে করে টেলিভিশনে পাকিস্তনের পতাকা প্রদর্শন করতে না হয়। রেডিওতে বার বার জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাজানো হয়।

এ দিন সকল বাংলা দৈনিকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম প্রদত্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা ছাপানো হয় যা দেখে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনার সাথে পতাকা তৈরি ও উত্তোলন করে। এ দিন হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের সাথে আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন। জুলফিকার আলী ভূট্রো ও খান আবদুল কাইয়ূম খান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে জুলফিকার আলী ভূট্রো সাংবাদিকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনেরপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি স্বায়ত্ত্বশাসনের চাইতে অনেক বেশী, প্রায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কাছাকাছি।

এ দিন ভাসানী ন্যাপ ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলা দিবস’ পালন করে। ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন), ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) সহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন ছাত্র, নারী, শ্রেণী-পেশার সংগঠন ঢাকা সহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা-মিছিল করে। এ দিনই পূর্ব বাংলার বাঙালিরা স্বাধীনতা ও স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অগ্নিঝরা মার্চ

স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়লো সবখানে

আপডেট : ০৭:৪৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ। ১৯৭১ সালের এ দিন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়। এ দিন পূর্ব বাংলার কোথাও পাকিস্তনের পতাকা ওড়েনি। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের কবর ও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান অনিবার্য করে তোলে।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চের লাহোর প্রস্তাবের স্মরণে পাকিস্তানের জাতীয় দিবস ‘পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবস’ প্রত্যাখ্যান করে ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ স্বাধীন কেন্দ্রীয় বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পূর্ব বাংলায় জাতীয়ভাবে ‘প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের তত্ত্বাবধায়নে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনী’ এদিন পল্টন ময়দানে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে পূর্ণ সামরিক কায়দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। ‘জয় বাংলা বাহিনী’র প্রধান কামরুল আলম খান খসরুর (পরবর্তীতে ‘ওরা ১১ জন’ খ্যাত চিত্রনায়ক) .২২ বোর রাইফেলের প্রকাশ্য গান ফায়ারের সাথে ‘জয় বাংলা বাহিনী’র উপ-প্রধান হাসানুল হক ইনু (বর্তমানে জাসদ সভাপতি ও সংসদ সদস্য) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।

‘জয় বাংলা বাহিনী’র নারী ও পুরুষ কন্টিজেন্টের সদস্যরা ডামী রাইফেল নিয়ে মার্চ পাষ্ট করে পতাকার প্রতি সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা আ স ম আবদুর রব, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী ও শাজাহান সিরাজ মার্চ পাষ্টে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় মাইকে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বেজে ওঠে। এরপর ‘জয় বাংলা বাহিনী’ রাজপথে সামরিক কায়দায় মার্চ পাষ্ট করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরস্থ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পতাকাটি নিজ বাসভবনে উত্তোলন করেন। এদিন কূর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট, প্রেসিডেন্ট হাউস, মার্কিন কনস্যূলেট ছাড়া ঢাকায় হাইকোর্ট, সচিবালয়, বিচারপতিদের বাসভবন, বিদেশী কূটনৈতিক মিশন সহ সরকারী-বেসরকারী সকল ভবন ও স্থাপনার শীর্ষে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তৈরি ও বিতরণ করা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

একইভাবে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পূর্ব বাংলার সকল জেলা, মহকুমা, থানায় সর্বত্র স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এদিন ঢাকা টেলিভিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় যাতে করে টেলিভিশনে পাকিস্তনের পতাকা প্রদর্শন করতে না হয়। রেডিওতে বার বার জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ বাজানো হয়।

এ দিন সকল বাংলা দৈনিকে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম প্রদত্ত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নকশা ছাপানো হয় যা দেখে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনার সাথে পতাকা তৈরি ও উত্তোলন করে। এ দিন হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের সাথে আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনেন। জুলফিকার আলী ভূট্রো ও খান আবদুল কাইয়ূম খান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে জুলফিকার আলী ভূট্রো সাংবাদিকদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনেরপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ৬ দফার ভিত্তিতে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি স্বায়ত্ত্বশাসনের চাইতে অনেক বেশী, প্রায় স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কাছাকাছি।

এ দিন ভাসানী ন্যাপ ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলা দিবস’ পালন করে। ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন), ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া) সহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন ছাত্র, নারী, শ্রেণী-পেশার সংগঠন ঢাকা সহ সারা দেশে সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা-মিছিল করে। এ দিনই পূর্ব বাংলার বাঙালিরা স্বাধীনতা ও স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।