ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ‘কথা রাখেনি কেউ’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০৪:০০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১০ মে ২০২১
  • / 263

গাবতলীতে বাড়িমুখো একটি পরিবার

::নিজস্ব প্রতিবেদক::

মহামারি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধে পরিবহন, দোকান-শপিংমল অফিস আদালতসহ ইমাজেন্সি সার্ভিস ছাড়া সব বন্ধ ছিলো। শর্তসাপেক্ষে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলে দেয় সরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৬ মে থেকে জেলা ও সিটির মধ্য গণপরিবহন চলাচলের অনুমতিও দেয়া হয়।

তবে কথা রাখেনি কেউ। আর বেঁধে দেয়া নির্দেশনাও জনসাধারণকে মানাতে পারেনি সরকার। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ ও দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও ঈদ ভোগান্তি সঙ্গী করে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

ঈদযাত্রায় গেল দুদিনের তুলনায় আজকে চাপ কম মহাসড়কে। তবুও ভোগান্তি সঙ্গী করে বাড়ি ফিরছে মানুষ। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায়, কেউ কেউ কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অনেকটা বন্দি অবস্থায় বাড়ি যাচ্ছেন। এদিকে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে কর্তৃপক্ষও ফেরি ছাড়তে বাধ্য হয়।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। সারা বছরই এ নৌপথ দিয়ে হাজারো যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে যানবাহন ও যাত্রীদের সমাগমে মুখর থাকে এই দুই ফেরিঘাট। তবে এবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ঢল ঠেকাতে বিজিবি মোতায়েন করেছিলো সরকার। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, এই দুই ঘাট এলাকায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। থামছেই না ঘরমুখো মানুষের ঢল।

অবশেষে আজ সোমবার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি চলাচলের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি)। একইসঙ্গে যাত্রীর চাপ সামলাতে ফেরীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়।

এদিকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় যে যেভাবে পারছেন নারীর টানে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অনেকটা বন্দি অবস্থায় বাড়ি যাচ্ছেন।

ইমরান হোসেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ব্যাগ নিয়ে ছুটেছেন ঝিনাইদহ জেলার উদ্দেশ্য। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যেভাবেই হোক ঢাকা থেকে যেতে হবে ফেরিঘাটে। সেখানেও নাকি মানুষের উপচেপড়া ভীড়। কিন্তু কি করার আছে, বাড়িতো যেতেই হবে।

এদিকে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকলেও গাবতলী পুলিশ বক্সের আগে কয়েকটি বাসকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিতে দেখা গেছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে পরিবহন চালানো কিংবা জেলার বাইরে না যাওয়ার নিয়মকে তোয়াক্কা না করে এসব গাড়ি চলছে।

এ বিষয়ে গাবতলী এলাকায় কর্মরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এতো মানুষের চাপ সামলানো আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পরেছে। সড়কে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভীড়। সামাজিক দুরত্বও উপেক্ষিত। তবে সিটির বাস বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

মমিনুল হক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কঠোর বিধিনিষেধ, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেছেন। যাবেন পাবনার আরামবাড়িয়া।

রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে গাবতলীর যাত্রা সুখের হলেও এরপর শুরু অনিশ্চিত যাত্রা আর পদে পদে ভোগান্তি। মমিনুল বলেন, ঢাকার মেসে ঈদ কীভাবে করবো? ঈদ তো বছরে দুবার আসে। কষ্ট হলেও বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করবো।

এদিকে আজ সোমবার ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর ও গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা। কিছু জায়গায় পুলিশ এবং শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জনের মতো।

শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে রাজধানীর মিরপুরে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবি মেনে নেয়। বিকেলের দিকে মালিকপক্ষ এসে ঘোষণা দেয়, শ্রমিকদের ১০ দিনের ছুটির দাবি মেনে নেয়া হলো।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঈদযাত্রায় ভোগান্তি ‘কথা রাখেনি কেউ’

আপডেট : ০৪:০০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১০ মে ২০২১
::নিজস্ব প্রতিবেদক::

মহামারি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধে পরিবহন, দোকান-শপিংমল অফিস আদালতসহ ইমাজেন্সি সার্ভিস ছাড়া সব বন্ধ ছিলো। শর্তসাপেক্ষে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলে দেয় সরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৬ মে থেকে জেলা ও সিটির মধ্য গণপরিবহন চলাচলের অনুমতিও দেয়া হয়।

তবে কথা রাখেনি কেউ। আর বেঁধে দেয়া নির্দেশনাও জনসাধারণকে মানাতে পারেনি সরকার। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ ও দিনের বেলায় ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও ঈদ ভোগান্তি সঙ্গী করে বাড়ি ফিরছে মানুষ।

ঈদযাত্রায় গেল দুদিনের তুলনায় আজকে চাপ কম মহাসড়কে। তবুও ভোগান্তি সঙ্গী করে বাড়ি ফিরছে মানুষ। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায়, কেউ কেউ কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অনেকটা বন্দি অবস্থায় বাড়ি যাচ্ছেন। এদিকে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে কর্তৃপক্ষও ফেরি ছাড়তে বাধ্য হয়।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। সারা বছরই এ নৌপথ দিয়ে হাজারো যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে যানবাহন ও যাত্রীদের সমাগমে মুখর থাকে এই দুই ফেরিঘাট। তবে এবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ঢল ঠেকাতে বিজিবি মোতায়েন করেছিলো সরকার। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসেনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, এই দুই ঘাট এলাকায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। থামছেই না ঘরমুখো মানুষের ঢল।

অবশেষে আজ সোমবার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি চলাচলের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি)। একইসঙ্গে যাত্রীর চাপ সামলাতে ফেরীর সংখ্যাও বাড়ানো হয়।

এদিকে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় যে যেভাবে পারছেন নারীর টানে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অনেকটা বন্দি অবস্থায় বাড়ি যাচ্ছেন।

ইমরান হোসেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ব্যাগ নিয়ে ছুটেছেন ঝিনাইদহ জেলার উদ্দেশ্য। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যেভাবেই হোক ঢাকা থেকে যেতে হবে ফেরিঘাটে। সেখানেও নাকি মানুষের উপচেপড়া ভীড়। কিন্তু কি করার আছে, বাড়িতো যেতেই হবে।

এদিকে আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকলেও গাবতলী পুলিশ বক্সের আগে কয়েকটি বাসকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত যাত্রী নিতে দেখা গেছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে পরিবহন চালানো কিংবা জেলার বাইরে না যাওয়ার নিয়মকে তোয়াক্কা না করে এসব গাড়ি চলছে।

এ বিষয়ে গাবতলী এলাকায় কর্মরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এতো মানুষের চাপ সামলানো আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পরেছে। সড়কে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভীড়। সামাজিক দুরত্বও উপেক্ষিত। তবে সিটির বাস বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

মমিনুল হক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কঠোর বিধিনিষেধ, তীব্র রোদ উপেক্ষা করে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেছেন। যাবেন পাবনার আরামবাড়িয়া।

রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে গাবতলীর যাত্রা সুখের হলেও এরপর শুরু অনিশ্চিত যাত্রা আর পদে পদে ভোগান্তি। মমিনুল বলেন, ঢাকার মেসে ঈদ কীভাবে করবো? ঈদ তো বছরে দুবার আসে। কষ্ট হলেও বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করবো।

এদিকে আজ সোমবার ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর মিরপুর ও গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকটি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা। কিছু জায়গায় পুলিশ এবং শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৫ জনের মতো।

শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে রাজধানীর মিরপুরে স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস ঈদের ছুটি বাড়ানোর দাবি মেনে নেয়। বিকেলের দিকে মালিকপক্ষ এসে ঘোষণা দেয়, শ্রমিকদের ১০ দিনের ছুটির দাবি মেনে নেয়া হলো।