ঢাকা ১০:২৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের হুঁশিয়ারি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১০:৪৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১
  • / 181

খালেদা জিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে জাতীয় সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ সংসদ সদস্য।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা।

মানববন্ধনে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, ‘সংসদে আমরা একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা জনগণের প্রতিনিধি। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছি। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা তার মুক্তি চাই।’

বিএনপি চাইলে বিদেশ থেকে ডাক্তার আনতে পারে- আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার তো সারা পৃথিবীতে এক। সমস্যা কোথায়? সমস্যা তো চিকিৎসায়, ইকুপমেন্টে। আজ ম্যাডামের লিভারে প্রচন্ড রকম সমস্যা এবং রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই। এখানে মেডিসিন দিয়ে হবে না। সার্জারি লাগবে। সেই সার্জারি ইকুপমেন্ট কোথায়?’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতি করছে অভিযোগ করে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, ‘বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে বেগম জিয়ার চিকিৎসা করানোর যে বক্তব্য আইনমন্ত্রীর দিয়েছে তাতে সরকারের হঠকারিতার প্রকাশ পায়।

এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার, বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।

বগুড়া-৪ আসনের সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আমরা আজকে একটি অবৈধ সরকারের কাছে আবেদন করছি। কারণ কোনো উপায় তো নেই। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এরপরও সরকার চিকিৎসক, পরিবার এবং দলের আবেদনকে উপেক্ষা করছে। সরকার তাদের নিজের মতো চলছে। আইনমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। ৪০১ ধারা নিয়ে আইনমন্ত্রী পজিটিভ নেগেটিভ বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনি খালেদা জিয়ার বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বেগম জিয়া যেখানে আছেন সেটাকেই সাবজেল ঘোষণা করা হোক। সেখান থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সরকার চাইলে তাকে ২৫ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে পারে। ’

এই সাংসদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার বক্তব্য শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাকরি না নেত্রী বেগম জিয়াকে তিনি মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। তাই মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করছি আপনি নিজস্ব ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারণ আপনাকে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া আছে।’

চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি জায়গা উপনীত হয়েছে যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন, একেবারে অনুপস্থিত। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সত্যিকার অর্থেই তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই, প্রতিবাদ করারও ভাষা নেই। একথা কি সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করে না প্রধানমন্ত্রীর ওপরেই নির্ভর করছে চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া না পাওয়া। ’

তিনি বলেন, ‘একজন আইনমন্ত্রী সিনিয়র ‘ল’ ইয়ার। তিনি আইনের যে ব্যাখ্যা দেন সেটা এদেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। হঠাৎ করে তিনি বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সুযোগ দিবেন। আমার তো বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার জন্য দাবি জানাইনি ‘

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ও বিএনপির বিরোধী দলীয় হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আপনারা জানেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার আবেদন করা হয়েছে। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যখন কারাগারে যান তিনি পায়ে হেঁটে গেছেন। কিন্তু গত তিন বছরে তার কি হাল হয়েছে, এটা দেশের মানুষ জানে। এর দায় এই সরকারকে নিতে হবে। কারণ গত তিন বছরে তিনি দল, পরিবার এবং নিজের হেফাজতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের হেফাজতে। ’

রুমিন বলেন, ‘গত তিন বছরে বেগম জিয়ার ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে কোনো প্রকার ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়নি। যদি তিনি তার অসুখের চিকিৎসা করাতে পারতেন, সরকার যদি সেই সুযোগ দিতো তাহলে আজকে তার এই অবস্থা হতো না। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘৪০১ ধারায় সাজাপ্রাপ্ত বা সাজাপ্রাপ্ত নয় এমন যে কোনো ব্যক্তিকে সরকার শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দণ্ড মওকুফ করতে পারে। কিংবা দন্ড স্থগিত করতে পারে। এ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সরকার দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, ওনার কোন ভাবেই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা একেবারেই ডাহা মিথ্যা কথা এবং আইনের অপব্যাখ্যা। আইনের ভুল ব্যাখ্যা। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, ৪০১ এর ধারার ক্ষমতাবলে সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিএনপির এমপিদের পদত্যাগের হুঁশিয়ারি

আপডেট : ১০:৪৩:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১

খালেদা জিয়ার অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে জাতীয় সংসদ থেকে একযোগে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ সংসদ সদস্য।

রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা।

মানববন্ধনে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বলেন, ‘সংসদে আমরা একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমরা জনগণের প্রতিনিধি। আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাচ্ছি। জনগণের পক্ষ থেকে আমরা তার মুক্তি চাই।’

বিএনপি চাইলে বিদেশ থেকে ডাক্তার আনতে পারে- আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার তো সারা পৃথিবীতে এক। সমস্যা কোথায়? সমস্যা তো চিকিৎসায়, ইকুপমেন্টে। আজ ম্যাডামের লিভারে প্রচন্ড রকম সমস্যা এবং রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর চিকিৎসা আমাদের দেশে নেই। এখানে মেডিসিন দিয়ে হবে না। সার্জারি লাগবে। সেই সার্জারি ইকুপমেন্ট কোথায়?’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার রাজনীতি করছে অভিযোগ করে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, ‘বিদেশ থেকে ডাক্তার এনে বেগম জিয়ার চিকিৎসা করানোর যে বক্তব্য আইনমন্ত্রীর দিয়েছে তাতে সরকারের হঠকারিতার প্রকাশ পায়।

এসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তার, বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন।

বগুড়া-৪ আসনের সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, ‘আমরা আজকে একটি অবৈধ সরকারের কাছে আবেদন করছি। কারণ কোনো উপায় তো নেই। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এরপরও সরকার চিকিৎসক, পরিবার এবং দলের আবেদনকে উপেক্ষা করছে। সরকার তাদের নিজের মতো চলছে। আইনমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। ৪০১ ধারা নিয়ে আইনমন্ত্রী পজিটিভ নেগেটিভ বক্তব্য দিয়েছেন।

তিনি খালেদা জিয়ার বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বেগম জিয়া যেখানে আছেন সেটাকেই সাবজেল ঘোষণা করা হোক। সেখান থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সরকার চাইলে তাকে ২৫ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে পারে। ’

এই সাংসদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার বক্তব্য শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাকরি না নেত্রী বেগম জিয়াকে তিনি মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। তাই মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করছি আপনি নিজস্ব ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারণ আপনাকে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া আছে।’

চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটি জায়গা উপনীত হয়েছে যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন, একেবারে অনুপস্থিত। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে যে কথা বলেছেন, সত্যিকার অর্থেই তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই, প্রতিবাদ করারও ভাষা নেই। একথা কি সুষ্ঠুভাবে প্রমাণ করে না প্রধানমন্ত্রীর ওপরেই নির্ভর করছে চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া না পাওয়া। ’

তিনি বলেন, ‘একজন আইনমন্ত্রী সিনিয়র ‘ল’ ইয়ার। তিনি আইনের যে ব্যাখ্যা দেন সেটা এদেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে না। হঠাৎ করে তিনি বলছেন, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সুযোগ দিবেন। আমার তো বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার জন্য দাবি জানাইনি ‘

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ও বিএনপির বিরোধী দলীয় হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আপনারা জানেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার আবেদন করা হয়েছে। তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যখন কারাগারে যান তিনি পায়ে হেঁটে গেছেন। কিন্তু গত তিন বছরে তার কি হাল হয়েছে, এটা দেশের মানুষ জানে। এর দায় এই সরকারকে নিতে হবে। কারণ গত তিন বছরে তিনি দল, পরিবার এবং নিজের হেফাজতে ছিলেন না। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের হেফাজতে। ’

রুমিন বলেন, ‘গত তিন বছরে বেগম জিয়ার ওপর নিপীড়ন, নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাকে কোনো প্রকার ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়নি। যদি তিনি তার অসুখের চিকিৎসা করাতে পারতেন, সরকার যদি সেই সুযোগ দিতো তাহলে আজকে তার এই অবস্থা হতো না। বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘৪০১ ধারায় সাজাপ্রাপ্ত বা সাজাপ্রাপ্ত নয় এমন যে কোনো ব্যক্তিকে সরকার শর্তযুক্ত বা শর্তহীনভাবে দণ্ড মওকুফ করতে পারে। কিংবা দন্ড স্থগিত করতে পারে। এ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সরকার দফায় দফায় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে। কিন্তু এখন আইনমন্ত্রী বলছেন, ওনার কোন ভাবেই বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটা একেবারেই ডাহা মিথ্যা কথা এবং আইনের অপব্যাখ্যা। আইনের ভুল ব্যাখ্যা। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে বলতে চাই, ৪০১ এর ধারার ক্ষমতাবলে সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’