ঢাকা ০৫:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ওয়াসা কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষ মুখোমুখি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 112
ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী সমিতির ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’। তবে সংবাদ সম্মেলনেই আয়োজনকারীদের অবৈধ বলে দাবি করেছেন আগের কমিটির সদস্যরা। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষেই বাকযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা নির্বাচিত কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম ও সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডে সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম ও সমিতির ১৩২ কোটি টাকা ঢাকা ওয়াসারই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া নির্বাচিত কমিটি ১০ মাসেও দায়িত্ব বুঝে পায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় নির্বাচন করার কারণে করা বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোসহ অন্যান্য নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় এ নির্বাচন আয়োজনে আপত্তি ছিল ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এক অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা ওয়াসা।

অফিস আদেশে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে এবং ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের মত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সব রকমের সভাসমাবেশ/নির্বাচন/জমায়েত/নির্বাচনী প্রচারণা/ভোটদান হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল। তবে এই অফিস আদেশ অমান্য করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনকারীদের ভাষ্যমতে, নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত কমিটির ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

লিখিত বক্তব্যে নতুন এ কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর থেকে সমিতির ২০১৮-২০ সময়কালের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এতে দেখা যায়, ১৬/০৭/২০১৭ তারিখ হতে ৩০/০৬/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক পিপিআই নামীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা হতে রাজস্ব আদায়ে ঠিকাদারি বিল বাবদ সমিতি সর্বমোট ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা এবং এ বিপুল পরিমাণ অর্থ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে হিসাব বিবরণীতে মাত্র এক কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা হিসাবভূক্ত করা হয়।

গত কমিটির অর্থ আত্মসাতের হিসাব দিয়ে তারা বলেন, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই।

এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সমিতির তৎকালিন অবৈধ ব্যবস্থাপনা কমিটির হাফিজ উদ্দিন, আতাউর রহমান মিয়া ও বাতিলকৃত ব্যবস্থাপনা কমিটির মো. আক্তারুজ্জামান, মো. জাকির হোসেন এবং পিপিআই পরিচালনা পর্ষদ হাফিজ উদ্দিন, মিঞা মো. মিজানুর রহমান গং বিধি বহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খরচ ও আত্মসাৎ করেছেন। এ কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদ গং কর্তৃক ২০১৬ সাল হতে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সমিতি ও পিপিআই প্রকল্প নামীয় বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব হতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতীত প্রায় ৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। যার হিসাবও পাওয়া যায়নি বলে অডিট রিপোর্টে ওঠে এসেছে।

বর্তমান কমিটির দাবি, সাবেক কমিটির নেতারা এই টাকা লোপাট করেছেন। সমিতির ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের সম্পদ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দখলে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শোরগোল শুরু হয়। এ সময় সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত সাবেক কমিটির একজন বলে ওঠেন, ‘এটা তো কোনো নির্বাচনই হয় নাই। ভোট পরছে অনলি টু পারসেন্ট (মাত্র দুই শতাংশ)। তবে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাবেক ও বর্তমানদের কয়েকজন বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ওয়াসা কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষ মুখোমুখি

আপডেট : ০১:১৪:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২১
ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী সমিতির ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’। তবে সংবাদ সম্মেলনেই আয়োজনকারীদের অবৈধ বলে দাবি করেছেন আগের কমিটির সদস্যরা। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন কক্ষেই বাকযুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা নির্বাচিত কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম ও সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকার লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ঢাকা ওয়াসার কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডে সংগঠিত বিভিন্ন অনিয়ম ও সমিতির ১৩২ কোটি টাকা ঢাকা ওয়াসারই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া নির্বাচিত কমিটি ১০ মাসেও দায়িত্ব বুঝে পায়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় নির্বাচন করার কারণে করা বিভাগীয় মামলা ও কারণ দর্শানোসহ অন্যান্য নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এদিকে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় এ নির্বাচন আয়োজনে আপত্তি ছিল ওয়াসা কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এক অফিস আদেশ জারি করে ঢাকা ওয়াসা।

অফিস আদেশে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধে এবং ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের মত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সব রকমের সভাসমাবেশ/নির্বাচন/জমায়েত/নির্বাচনী প্রচারণা/ভোটদান হতে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল। তবে এই অফিস আদেশ অমান্য করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনকারীদের ভাষ্যমতে, নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে নির্বাচিত কমিটির ১০ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

লিখিত বক্তব্যে নতুন এ কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর থেকে সমিতির ২০১৮-২০ সময়কালের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে।

এতে দেখা যায়, ১৬/০৭/২০১৭ তারিখ হতে ৩০/০৬/২০১৮ তারিখ পর্যন্ত চুক্তি মোতাবেক পিপিআই নামীয় প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসা হতে রাজস্ব আদায়ে ঠিকাদারি বিল বাবদ সমিতি সর্বমোট ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা এবং এ বিপুল পরিমাণ অর্থ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে হিসাব বিবরণীতে মাত্র এক কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা হিসাবভূক্ত করা হয়।

গত কমিটির অর্থ আত্মসাতের হিসাব দিয়ে তারা বলেন, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই।

এ বিপুল পরিমাণ অর্থ সমিতির তৎকালিন অবৈধ ব্যবস্থাপনা কমিটির হাফিজ উদ্দিন, আতাউর রহমান মিয়া ও বাতিলকৃত ব্যবস্থাপনা কমিটির মো. আক্তারুজ্জামান, মো. জাকির হোসেন এবং পিপিআই পরিচালনা পর্ষদ হাফিজ উদ্দিন, মিঞা মো. মিজানুর রহমান গং বিধি বহির্ভূত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে খরচ ও আত্মসাৎ করেছেন। এ কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদ গং কর্তৃক ২০১৬ সাল হতে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচন পূর্ব পর্যন্ত সময়ে সমিতি ও পিপিআই প্রকল্প নামীয় বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব হতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত ব্যতীত প্রায় ৪৪ কোটি ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। যার হিসাবও পাওয়া যায়নি বলে অডিট রিপোর্টে ওঠে এসেছে।

বর্তমান কমিটির দাবি, সাবেক কমিটির নেতারা এই টাকা লোপাট করেছেন। সমিতির ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের সম্পদ ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দখলে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছিল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শোরগোল শুরু হয়। এ সময় সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত সাবেক কমিটির একজন বলে ওঠেন, ‘এটা তো কোনো নির্বাচনই হয় নাই। ভোট পরছে অনলি টু পারসেন্ট (মাত্র দুই শতাংশ)। তবে সংবাদ সম্মেলন শেষে সাবেক ও বর্তমানদের কয়েকজন বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।’