বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:০০:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 132

বিদেশি চ্যানেলের দেশীয় পরিবেশক-অপারেটরদের আইন মানার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, দেশের আকাশ উন্মুক্ত রয়েছে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, প্রথমত আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি, বন্ধ করার জন্যও বলিনি। বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, এখানে যে কোনো চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারে কিন্তু সেটি দেশের আইন মেনে করতে হয়।

যেকোনো বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে সম্প্রচারের আইন ভারত, নেপাল, পাকিস্তাান, শ্রীলংকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর অন্যান্য সবদেশেই আছে এবং আইন মেনেই সেখানে বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে, শুধু আমাদের দেশেই এই আইনকে বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছিল, বলেন ড. হাছান।

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই আইন বাস্তবায়নের কথা দু’বছর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম এবং বেশ কয়েকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে, নোটিশ করা হয়েছে এবং সবশেষে আগস্টে সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে পয়লা অক্টোবর থেকে আমরা আইন কার্যকর করবো।

আমরা সেটিই করেছি, কোনো চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি। কেউ কেউ বলছে ডিজিটালাইড না হওয়া পর্যন্ত এ আইন শিথিল রাখার জন্য। পুরো ভারতবর্ষ তো ডিজিটাল হয় নাই, সে সবদেশেও তো আইন কার্যকর আছে, সেখানে ডিজিটাল হওয়ার আগে থেকেই আইন কার্যকর আছে।

সুতরাং আমাদের দেশে আইনকে তোয়াক্কা না করে এ ধরণের অজুহাত তোলার কোনো যুক্তি নেই।’

বিদেশি বেশকিছু চ্যানেল সম্প্রচার অপারেটররা বন্ধ রেখেছে সেবিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা যেহেতু সংশ্লিষ্ট চ্যানেল থেকে ক্লিনফিড পায়নি, সেজন্য বন্ধ রেখেছে, সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা কোনোটাই বন্ধ করতে বলিনি, আগে থেকেই সময় দেয়া হয়েছিল যাতে করে তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোকে ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য বলে এবং পাশাপাশি তারাও প্রস্তুতি নেয়।

যথেষ্ট অর্থাৎ দুই বছর সময় দেয়া হয়েছিল। আমি দু’বছর আগে থেকে তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছি। এর আগেও এ আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। সবশেষে সবার সাথে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনএইচকে, ফ্রান্স ২৪, রাশিয়া টুডে’সহ প্রায় ২৪টি চ্যানেলের ক্লিনফিড আসে। কিন্তু সেগুলো অনেকে চালাচ্ছেন না, যেটি ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ। কেউ শর্তভঙ্গ করলে, সেই অপরাধে অভিযুক্ত হবেন।’

ড. হাছান বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে, ক্লিনফিডের দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের এবং এজেন্টের। কিন্তু কোনো কোনো ক্যাবল অপারেটর এজেন্টদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে এটি পাইরেসি করে ডাউনলিংক করে। অনুমতি ছাড়া ডাউনলিংক করা আইন বহির্ভূত।’

কিছু ক্যাবল অপারেটরের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরণের আন্দোলনের কথা বলা অযৌক্তিক। যারা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে এবং সংস্কৃতিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে, সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা দেশের স্বার্থবিরোধী, আইনবিরোধী। আমি আশা করবো দেশের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হবেন না। সরকার কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না।

দেশের স্বার্থ উর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য, দেশের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। অবশ্যই তারা যদি আলোচনা করতে চায়, আলোচনা হতেই পারে, তারাও এখানে আমাদের সহযোগী। তাদের সাথে অবশ্যই আলোচনা হবে পারে। তবে আলোচনার ভিত্তি হবে আইনমানা, দেশের স্বার্থসংরক্ষণ।’

ক্যাবল অপারেটরদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কার কথা কেউ কেউ বলছে, এটি জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মতো একটি বক্তব্য বলেন মন্ত্রী। ক্যাবল অপারেটররা কি মানুষের কাছ থেকে যে চার্জ নেয় সেটি কি কমিয়ে দিয়েছে -প্রশ্ন রেখে ড. হাছান বলেন, তাদের আয় এক টাকাও কমে নাই বরং আরো টাকা সাশ্রয় হবে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, দেশের মিডিয়াদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে আমরা যখন এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি দেশের সমস্ত গণমাধ্যম এটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা সম্প্রচার জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং শিল্পীরাও অভিনন্দন জানিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, সাংবাদিকদের স্বার্থে, গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী-কলাকুশলীদের স্বার্থে। আমাদের দেশে যারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থকে যারা জলাঞ্জলি দিয়ে কথা বলে তারা দেশের পক্ষে কথা বলে না।’

সারাদেশে আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে এবং রোববার মন্ত্রণালয়ের সচিব সকল ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের সাথে অনলাইনে সভা করার কথা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইন ভঙ্গের অভিযোগ যেখান থেকে পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী

আপডেট : ১১:০০:৫১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অক্টোবর ২০২১

বিদেশি চ্যানেলের দেশীয় পরিবেশক-অপারেটরদের আইন মানার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, দেশের আকাশ উন্মুক্ত রয়েছে।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এসংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, প্রথমত আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি, বন্ধ করার জন্যও বলিনি। বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, এখানে যে কোনো চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারে কিন্তু সেটি দেশের আইন মেনে করতে হয়।

যেকোনো বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে সম্প্রচারের আইন ভারত, নেপাল, পাকিস্তাান, শ্রীলংকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর অন্যান্য সবদেশেই আছে এবং আইন মেনেই সেখানে বিদেশি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে, শুধু আমাদের দেশেই এই আইনকে বছরের পর বছর ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছিল, বলেন ড. হাছান।

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই আইন বাস্তবায়নের কথা দু’বছর আগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলেছিলাম এবং বেশ কয়েকবার তাগাদা দেয়া হয়েছে, নোটিশ করা হয়েছে এবং সবশেষে আগস্টে সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে পয়লা অক্টোবর থেকে আমরা আইন কার্যকর করবো।

আমরা সেটিই করেছি, কোনো চ্যানেল বন্ধ করা হয়নি। কেউ কেউ বলছে ডিজিটালাইড না হওয়া পর্যন্ত এ আইন শিথিল রাখার জন্য। পুরো ভারতবর্ষ তো ডিজিটাল হয় নাই, সে সবদেশেও তো আইন কার্যকর আছে, সেখানে ডিজিটাল হওয়ার আগে থেকেই আইন কার্যকর আছে।

সুতরাং আমাদের দেশে আইনকে তোয়াক্কা না করে এ ধরণের অজুহাত তোলার কোনো যুক্তি নেই।’

বিদেশি বেশকিছু চ্যানেল সম্প্রচার অপারেটররা বন্ধ রেখেছে সেবিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তারা যেহেতু সংশ্লিষ্ট চ্যানেল থেকে ক্লিনফিড পায়নি, সেজন্য বন্ধ রেখেছে, সেটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা কোনোটাই বন্ধ করতে বলিনি, আগে থেকেই সময় দেয়া হয়েছিল যাতে করে তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোকে ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য বলে এবং পাশাপাশি তারাও প্রস্তুতি নেয়।

যথেষ্ট অর্থাৎ দুই বছর সময় দেয়া হয়েছিল। আমি দু’বছর আগে থেকে তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছি। এর আগেও এ আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। সবশেষে সবার সাথে বসেই আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে, বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, এনএইচকে, ফ্রান্স ২৪, রাশিয়া টুডে’সহ প্রায় ২৪টি চ্যানেলের ক্লিনফিড আসে। কিন্তু সেগুলো অনেকে চালাচ্ছেন না, যেটি ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ। কেউ শর্তভঙ্গ করলে, সেই অপরাধে অভিযুক্ত হবেন।’

ড. হাছান বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোর এদেশে এজেন্ট আছে, ক্লিনফিডের দায়িত্ব হচ্ছে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের এবং এজেন্টের। কিন্তু কোনো কোনো ক্যাবল অপারেটর এজেন্টদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি স্যাটেলাইট থেকে এটি পাইরেসি করে ডাউনলিংক করে। অনুমতি ছাড়া ডাউনলিংক করা আইন বহির্ভূত।’

কিছু ক্যাবল অপারেটরের আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরণের আন্দোলনের কথা বলা অযৌক্তিক। যারা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে এবং সংস্কৃতিকে চোখ রাঙ্গাচ্ছে, সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা দেশের স্বার্থবিরোধী, আইনবিরোধী। আমি আশা করবো দেশের স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হবেন না। সরকার কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে না।

দেশের স্বার্থ উর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য, দেশের আইন বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। অবশ্যই তারা যদি আলোচনা করতে চায়, আলোচনা হতেই পারে, তারাও এখানে আমাদের সহযোগী। তাদের সাথে অবশ্যই আলোচনা হবে পারে। তবে আলোচনার ভিত্তি হবে আইনমানা, দেশের স্বার্থসংরক্ষণ।’

ক্যাবল অপারেটরদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কার কথা কেউ কেউ বলছে, এটি জনগণকে ধোঁকা দেয়ার মতো একটি বক্তব্য বলেন মন্ত্রী। ক্যাবল অপারেটররা কি মানুষের কাছ থেকে যে চার্জ নেয় সেটি কি কমিয়ে দিয়েছে -প্রশ্ন রেখে ড. হাছান বলেন, তাদের আয় এক টাকাও কমে নাই বরং আরো টাকা সাশ্রয় হবে।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, দেশের মিডিয়াদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে আমরা যখন এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি দেশের সমস্ত গণমাধ্যম এটিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা সম্প্রচার জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং শিল্পীরাও অভিনন্দন জানিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে, দেশের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে, সাংবাদিকদের স্বার্থে, গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী-কলাকুশলীদের স্বার্থে। আমাদের দেশে যারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থকে যারা জলাঞ্জলি দিয়ে কথা বলে তারা দেশের পক্ষে কথা বলে না।’

সারাদেশে আমাদের মোবাইল কোর্ট চলমান থাকবে এবং রোববার মন্ত্রণালয়ের সচিব সকল ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারের সাথে অনলাইনে সভা করার কথা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আইন ভঙ্গের অভিযোগ যেখান থেকে পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।