২য় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সহযোগিতা কামনা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০২:১৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১১ অক্টোবর ২০২১
  • / 163

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা করছে সরকার। দ্বিতীয় এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চাই। এ ব্যাপারে রাশিয়ার অব্যাহত সহযোগিতা প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রীর এ প্রত্যাশার বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ খাতে কাজ করতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে রাশিয়া।

সোমবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তাদের মধ্যে পরমাণু শক্তিসহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

পাবনার রূপপুরে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটম এই প্রকল্পে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী রোসাটমের মহাপরিচালকের প্রতি স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান, যেন স্থানীয়রাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করতে পারে।

আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতা পারমাণবিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হবে। রূপপুর প্রকল্প পরিচালনার জন্য আমরা বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ দেবো এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে রাশিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয় কর্মীদের প্রশংসা করে লিখাচেভ বলেন, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য জনবলসহ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অনেক বাংলাদেশি কোম্পানিও আমাদের সঙ্গে এখানে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে।

রোসাটম’র মহাপরিচালক রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু কমিশনের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটির নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া প্ল্যান্টের আশপাশের এলাকায় সামাজিক উন্নয়নেও তারা কাজ করছেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সামনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দিকগুলো উপস্থাপন করেন আলেক্সি লিখাচেভ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন রাশিয়ান ফেডারেশনের সমর্থনের কথা স্মরণ করেন। তিনি মহাপরিচালককে আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশের অগ্রগতি কিছুটা থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন সেই অভিঘাত কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

রোসাটম মহাপরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত ৯০ শতাংশের বেশি রাশিয়ান নাগরিককে তারা ভ্যাকসিন দিয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের মূল ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি উৎপাদনের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। বাসস।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

২য় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সহযোগিতা কামনা

আপডেট : ০২:১৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমাবার, ১১ অক্টোবর ২০২১

দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা করছে সরকার। দ্বিতীয় এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চাই। এ ব্যাপারে রাশিয়ার অব্যাহত সহযোগিতা প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রীর এ প্রত্যাশার বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ খাতে কাজ করতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে রাশিয়া।

সোমবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তাদের মধ্যে পরমাণু শক্তিসহ দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

পাবনার রূপপুরে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটম এই প্রকল্পে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী রোসাটমের মহাপরিচালকের প্রতি স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানান, যেন স্থানীয়রাই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করতে পারে।

আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতা পারমাণবিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হবে। রূপপুর প্রকল্প পরিচালনার জন্য আমরা বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ দেবো এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে রাশিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয় কর্মীদের প্রশংসা করে লিখাচেভ বলেন, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য জনবলসহ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অনেক বাংলাদেশি কোম্পানিও আমাদের সঙ্গে এখানে সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে।

রোসাটম’র মহাপরিচালক রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু কমিশনের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকল্পটির নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এছাড়া প্ল্যান্টের আশপাশের এলাকায় সামাজিক উন্নয়নেও তারা কাজ করছেন বলে জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সামনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারিগরি ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দিকগুলো উপস্থাপন করেন আলেক্সি লিখাচেভ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন রাশিয়ান ফেডারেশনের সমর্থনের কথা স্মরণ করেন। তিনি মহাপরিচালককে আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশের অগ্রগতি কিছুটা থামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন সেই অভিঘাত কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

রোসাটম মহাপরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত ৯০ শতাংশের বেশি রাশিয়ান নাগরিককে তারা ভ্যাকসিন দিয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র রিয়্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন। প্রকল্পের মূল ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেশার ভেসেল স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি উৎপাদনের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। বাসস।