রাষ্ট্রও সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে: আইজিপি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:২৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
  • / 155
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সাইবার ওয়ার্ল্ড আমাদের জীবন সহজতর করেছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, টেকনোলজি ব্যবহার করে অপরাধীরা এর সুযোগ নিয়ে নানা অপরাধ করছে। এতে অনেকে সাইবার বুলিং বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। শুধু ব্যক্তি বা সমাজ নয়, অনেক সময় রাষ্ট্রও এর ভিকটিম হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন’ এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশপ্রধান বলেন, নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এটা দিন দিন বাড়ছে। একজন নারী যখন সাইবার হামলার শিকার হন, তখন ওই নারী এবং তার পরিবারে কী বিপর্যয় নেমে আসে তা ভুক্তভোগীই জানেন।

তিনি বলেন, আমরা সাইবার অপরাধের শিকার নারীদের সেবা দেয়ার জন্য এ সার্ভিস চালু করেছি। ইতোমধ্যে এ সার্ভিসের মাধ্যমে অনেক নারীকে সেবা দেয়া হয়েছে।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা চাই না নারী-পুরুষ কেউই ভিকটিম হোক। তারপরও দুর্ভাগ্যজনভাবে কোনো নারী যদি ভিকটিম হয়েই যান, তাহলে সেটি লুকিয়ে রাখবেন না। আমরা চাই অপরাধীদের শাস্তি হোক।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক কারণে অনেকেই এ সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা-মোকদ্দমা করতে চায় না। তরুণীরাই মূলত ভিকটিম হচ্ছে বেশি। সমাজ বা মানহানির ভয়ে তারা এটা করতে চায় না। সবচেয়ে মুশকিল হয় তখনই, যখন অপরাধীকে শনাক্ত করার পরে ভিকটিম যদি ব্যাকঅফ করে। তাই আমাদেরকে এটা মোকাবেলা করতে হবে। সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত বা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনো ব্যক্তিকে অ্যাকসেস না দেয়ার আহবান জানান আইজিপি।

আইজিপি বলেন, অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো সাথে বাইরে বের হলে তারও ঝুঁকি রয়েছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য তিনি ইউনিটকে ধন্যবাদ জানান।

উল্লেখ্য, আইজিপির নির্দেশে গত বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। সম্পূর্ণ নারী পুলিশ পরিচালিত এ সার্ভিসে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৮০ জন ভুক্তভোগী নারী যোগাযোগ করেছেন। যার মধ্যে ১২ হাজার ৬৪১ জন নারী ভুক্তভোগী হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে ৮ হাজার ২২১ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, যা মোট অভিযোগের ৪৩ ভাগ।

নারীর প্রতি সাইবার স্পেসে অপরাধের ধরন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভুয়া আইডি থেকে মেসেজ/তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি, আইডি হ্যাক করে হয়রানি, ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইলে কল করে হয়রানি, আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি ইত্যাদি।

ভুক্তভোগী নারীদের বয়স পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের শতকরা ১৬ ভাগের বয়স ১৮ বছরের কম। শতকরা ৫৮ ভাগ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী শতকরা ২০ ভাগ এবং ৬ ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি।

অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে মামলার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে আগ্রহী হননি। তারা শুধু আইডি বন্ধ করে বা মেসেজ ডিলিট করে সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগ আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে জিডি বা মামলা করেছেন যার মধ্যে মাত্র ১৩ ভাগ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিস থেকে সেবা পাওয়া কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

রাষ্ট্রও সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে: আইজিপি

আপডেট : ১১:২৩:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, সাইবার ওয়ার্ল্ড আমাদের জীবন সহজতর করেছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে, টেকনোলজি ব্যবহার করে অপরাধীরা এর সুযোগ নিয়ে নানা অপরাধ করছে। এতে অনেকে সাইবার বুলিং বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। শুধু ব্যক্তি বা সমাজ নয়, অনেক সময় রাষ্ট্রও এর ভিকটিম হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তরের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর ওমেন’ এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশপ্রধান বলেন, নারীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এটা দিন দিন বাড়ছে। একজন নারী যখন সাইবার হামলার শিকার হন, তখন ওই নারী এবং তার পরিবারে কী বিপর্যয় নেমে আসে তা ভুক্তভোগীই জানেন।

তিনি বলেন, আমরা সাইবার অপরাধের শিকার নারীদের সেবা দেয়ার জন্য এ সার্ভিস চালু করেছি। ইতোমধ্যে এ সার্ভিসের মাধ্যমে অনেক নারীকে সেবা দেয়া হয়েছে।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা চাই না নারী-পুরুষ কেউই ভিকটিম হোক। তারপরও দুর্ভাগ্যজনভাবে কোনো নারী যদি ভিকটিম হয়েই যান, তাহলে সেটি লুকিয়ে রাখবেন না। আমরা চাই অপরাধীদের শাস্তি হোক।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক কারণে অনেকেই এ সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা-মোকদ্দমা করতে চায় না। তরুণীরাই মূলত ভিকটিম হচ্ছে বেশি। সমাজ বা মানহানির ভয়ে তারা এটা করতে চায় না। সবচেয়ে মুশকিল হয় তখনই, যখন অপরাধীকে শনাক্ত করার পরে ভিকটিম যদি ব্যাকঅফ করে। তাই আমাদেরকে এটা মোকাবেলা করতে হবে। সামাজিক ট্যাবু ভাঙতে হবে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত বা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনো ব্যক্তিকে অ্যাকসেস না দেয়ার আহবান জানান আইজিপি।

আইজিপি বলেন, অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো সাথে বাইরে বের হলে তারও ঝুঁকি রয়েছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য তিনি ইউনিটকে ধন্যবাদ জানান।

উল্লেখ্য, আইজিপির নির্দেশে গত বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। সম্পূর্ণ নারী পুলিশ পরিচালিত এ সার্ভিসে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৮০ জন ভুক্তভোগী নারী যোগাযোগ করেছেন। যার মধ্যে ১২ হাজার ৬৪১ জন নারী ভুক্তভোগী হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে ৮ হাজার ২২১ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, যা মোট অভিযোগের ৪৩ ভাগ।

নারীর প্রতি সাইবার স্পেসে অপরাধের ধরন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভুয়া আইডি থেকে মেসেজ/তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি, আইডি হ্যাক করে হয়রানি, ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইলে কল করে হয়রানি, আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি ইত্যাদি।

ভুক্তভোগী নারীদের বয়স পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের শতকরা ১৬ ভাগের বয়স ১৮ বছরের কম। শতকরা ৫৮ ভাগ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী শতকরা ২০ ভাগ এবং ৬ ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি।

অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে মামলার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে আগ্রহী হননি। তারা শুধু আইডি বন্ধ করে বা মেসেজ ডিলিট করে সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগ আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে জিডি বা মামলা করেছেন যার মধ্যে মাত্র ১৩ ভাগ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজি, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিস থেকে সেবা পাওয়া কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন।