ঢাকা ০৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো রেজাল্ট করায় কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৮:০৭:৩৭ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৭ মার্চ ২০২২
  • / 159
ঝিনাইদহে কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনায় মূলহোতা গাফফারসহ তিন জনকে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এছাড়া অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীকেও উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব বলছে, ভিকটিম অত্যন্ত মেধাবী, যশোর বোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এসএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করায় গাফফার ধারণা করে সে তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই সে ভিকটিমকে অপহরণ করে। অপহরণের পর ৩০ ঘণ্টা আটকে রেখে চারটি জেলায় ঘুরিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন গাফফার। বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়েটিকে অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। যাতে পরে মেয়েটির বিয়ে না হয়। গ্রেপ্তার গাফফার আইন পেশায় যুক্ত থেকেও বেআইনি কাজ করেছেন।

সোমবার ভোরে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা থেকে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আবু জার গিফারী গাফফার(৩৫), সাব্বির হোসেন(২২) ও হাফিজুর রহমানকে(৪৬) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-৬ । এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি দেশীয় অস্ত্র, এসিড জাতীয় পদার্থ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

সোমবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৫ মার্চ বিকালে প্রাইভেট পড়া শেষে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন ঝিনাইদহেরে একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গ্রেপ্তাররা শৈলকূপার একটি রাস্তা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার গাফফারকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে খন্দকার আল মঈন জানায়, ভিকটিম অত্যন্ত মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। পরে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়। তিনি যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। খুব ভালো রেজাল্ট করায় গাফফার ধারণা করে সে তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত এ কারণেই সে ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুই দিন আগে ঝিনাইদহ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় গাফফার তার সমমনাদের নিয়ে অপহরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিমকে প্রাইভেট থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে অপহরণ করে।

তিনি আরও বলেন, পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য প্রথমে রাজবাড়ীতে এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায় ছাত্রীকে। পরে সেখান থেকে সহযোগীদের সাহায্যে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আশ্রয় না পেয়ে মাইক্রোবাসে ভিকটিমকে সিলেটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পুনরায় তাকে নিয়ে ফরিদপুরে রওনা করে। পথিমধ্যে গাফফার ভিকটিমকে এসিড এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, যাতে ভিকটিম কোনও প্রকার চিৎকার বা আওয়াজ না করে। এরপর মানিকগঞ্জ থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মেয়েটিকে অপহরণ করে চারটি জেলায় ৩০ ঘণ্টা ঘোরানোর পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদের ধরতে পারলো না? এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন জানান, অপহরণের পর মামলা কিংবা কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে মামলার পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে অভিযান চালিয়ে অপহৃত মেয়েটিকে উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার গাফফার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইনি পেশায় যুক্ত হন। আইনি পেশায় যুক্ত থেকেও বেআইনি কাজ করেছেন।

মেয়েটিকে জোর করে গাড়িতে তোলার সময় স্থানীয় ৮-১০ জন অপহরণের ঘটনাটি দেখলেও তারা সেখানে কোনো বাঁধা প্রদান করেনি। এ ঘটনায় র‌্যাবের এই কর্মকর্তা ধিক্কার জানিয়ে বলেন, স্থানীয়দের উচিত ছিলো সেখানে তাদের বাঁধা দেয়া। এতে মেয়েটিকে অপহরণের সুযোগ পেত না গাফফার। গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভালো রেজাল্ট করায় কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ

আপডেট : ০৮:০৭:৩৭ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৭ মার্চ ২০২২
ঝিনাইদহে কলেজ ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনায় মূলহোতা গাফফারসহ তিন জনকে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এছাড়া অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীকেও উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব বলছে, ভিকটিম অত্যন্ত মেধাবী, যশোর বোর্ডে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এসএসসিতে খুব ভালো রেজাল্ট করায় গাফফার ধারণা করে সে তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ কারণেই সে ভিকটিমকে অপহরণ করে। অপহরণের পর ৩০ ঘণ্টা আটকে রেখে চারটি জেলায় ঘুরিয়ে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন গাফফার। বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়েটিকে অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়। যাতে পরে মেয়েটির বিয়ে না হয়। গ্রেপ্তার গাফফার আইন পেশায় যুক্ত থেকেও বেআইনি কাজ করেছেন।

সোমবার ভোরে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা থেকে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আবু জার গিফারী গাফফার(৩৫), সাব্বির হোসেন(২২) ও হাফিজুর রহমানকে(৪৬) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ ও র‌্যাব-৬ । এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি দেশীয় অস্ত্র, এসিড জাতীয় পদার্থ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

সোমবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ৫ মার্চ বিকালে প্রাইভেট পড়া শেষে রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন ঝিনাইদহেরে একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গ্রেপ্তাররা শৈলকূপার একটি রাস্তা থেকে ওই শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তার গাফফারকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে খন্দকার আল মঈন জানায়, ভিকটিম অত্যন্ত মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। পরে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়। তিনি যশোর বোর্ডে মেধাতালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। খুব ভালো রেজাল্ট করায় গাফফার ধারণা করে সে তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত এ কারণেই সে ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। ঘটনার দুই দিন আগে ঝিনাইদহ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় গাফফার তার সমমনাদের নিয়ে অপহরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ভিকটিমকে প্রাইভেট থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে অপহরণ করে।

তিনি আরও বলেন, পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য প্রথমে রাজবাড়ীতে এক আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যায় ছাত্রীকে। পরে সেখান থেকে সহযোগীদের সাহায্যে তাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানে আশ্রয় না পেয়ে মাইক্রোবাসে ভিকটিমকে সিলেটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পুনরায় তাকে নিয়ে ফরিদপুরে রওনা করে। পথিমধ্যে গাফফার ভিকটিমকে এসিড এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, যাতে ভিকটিম কোনও প্রকার চিৎকার বা আওয়াজ না করে। এরপর মানিকগঞ্জ থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মেয়েটিকে অপহরণ করে চারটি জেলায় ৩০ ঘণ্টা ঘোরানোর পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদের ধরতে পারলো না? এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন জানান, অপহরণের পর মামলা কিংবা কোনো অভিযোগ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পরে মামলার পর র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে অভিযান চালিয়ে অপহৃত মেয়েটিকে উদ্ধার ও অপহরণ চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তার গাফফার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইনি পেশায় যুক্ত হন। আইনি পেশায় যুক্ত থেকেও বেআইনি কাজ করেছেন।

মেয়েটিকে জোর করে গাড়িতে তোলার সময় স্থানীয় ৮-১০ জন অপহরণের ঘটনাটি দেখলেও তারা সেখানে কোনো বাঁধা প্রদান করেনি। এ ঘটনায় র‌্যাবের এই কর্মকর্তা ধিক্কার জানিয়ে বলেন, স্থানীয়দের উচিত ছিলো সেখানে তাদের বাঁধা দেয়া। এতে মেয়েটিকে অপহরণের সুযোগ পেত না গাফফার। গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।