ঢাকা ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিকের শিক্ষক থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা ইকবাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৫:৫২:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২
  • / 199
২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ইকবাল হোসেন। নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামক এক ব্যক্তির সাথে পরিচয়ের সূত্রে তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীণের নিশ্চয়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি রপ্ত করে।

আলতাফ হোসেন মারা গেলে ইকবাল প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করে। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকরি পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত।

হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সিন্ডিকেটের মূলহোতা ইকবাল ও তার অন্যতম ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বুধবার দিবাগত রাত ১টায় র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা মো. ইকবাল হোসেন (৪২), রমিজ মৃধা (৩০), মো. নজরুল ইসলাম এবং (৪) মো. মোদাচ্ছের হোসেনকে (৬২) গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, প্রথমে তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ঐ নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষা নেয়ার স্থান ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এসময় চক্রের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকরি পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত।

পরবর্তীতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের কাছে উদ্ধারকৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো দিয়ে এর ব্যবহার বিধি প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে ১ থেকে ২ দুই লাখ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করত। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পরে পরিশোধ করবে বলে চুক্তি করত। এভাবে তারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন বলেন, বিদেশ থেকে আনা এই ডিজিটাল ডিভাইসগুলো মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত। ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ার পিছ তারা পরীক্ষার্থীদের কানের ভিতর এবং অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সীম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে তাদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করাত।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের কাছে পাঠাত। প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়ার জন্য আগে থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখত। এরপর এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তরসমূহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিম এর মাধ্যমে খুঁজে বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বলে দিতো।

তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রটির মূলহোতা গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেন। গ্রেপ্তার রমিজ এই প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকার সময় ২০২০ সালে ইকবালের তার সাথে পরিচয় হয়। সে সময় রমিজ তার আর্থিক সংকটের কথা ইকবালকে খুলে বলে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে ইকবাল তাকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সহযোগিতা করার কথা বলে তাকে এই প্রতারক চক্রের সদস্য করে নেয়। ইকবাল এর ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় সে রমিজকে দিয়ে এই কাজ সম্পাদন করাতো।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারি-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগ দেয়। চাকরি সূত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে সুম্পর্ক গড়ে উঠে নজরুলের। এই সুযোগে সে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রাথীর্দেরকে প্রতারক ইকবাল ও রমিজ এর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতো। এছাড়ও, সে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার সময়, স্থান ও পরীক্ষায় গার্ড খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করত।

গ্রেপ্তার মোদাচ্ছের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সমাজসেবাকর্মী হিসেবে ২০১৯ সালে অবসর গ্রহণ করে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের খুঁজে বের করে ইকবাল ও রমিজ এর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিত বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

প্রাথমিকের শিক্ষক থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা ইকবাল

আপডেট : ০৫:৫২:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ মে ২০২২
২০০৮ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয় ইকবাল হোসেন। নিজ এলাকায় শিক্ষকতা করার সময় ২০১৫ সালে একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী আলতাফ হোসেন নামক এক ব্যক্তির সাথে পরিচয়ের সূত্রে তার কাছ থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীণের নিশ্চয়তা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি রপ্ত করে।

আলতাফ হোসেন মারা গেলে ইকবাল প্রতারক চক্রটি পরিচালনা করে। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকরি পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত।

হিডেন স্পাই ওয়্যারলেস কিট ব্যবহার করে সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের নিশ্চয়তা দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সিন্ডিকেটের মূলহোতা ইকবাল ও তার অন্যতম ৩ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

বুধবার দিবাগত রাত ১টায় র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানী ও তার আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা মো. ইকবাল হোসেন (৪২), রমিজ মৃধা (৩০), মো. নজরুল ইসলাম এবং (৪) মো. মোদাচ্ছের হোসেনকে (৬২) গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রাজধানীর কাওরান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদের তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব জানায়, প্রথমে তারা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে ঐ নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষা নেয়ার স্থান ও পরীক্ষার গার্ড সম্পর্কে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। এসময় চক্রের অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি চাকরি প্রত্যাশীদের খুঁজে বের করে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষায় পাশ ও চাকরি পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তার মাধ্যমে তাদেরকে প্রলোভন দেখাত।

পরবর্তীতে আগ্রহী পরীক্ষার্থীদের কাছে উদ্ধারকৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো দিয়ে এর ব্যবহার বিধি প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিকভাবে ১ থেকে ২ দুই লাখ টাকা জামানত হিসেবে গ্রহণ করত। অবশিষ্ট টাকা চাকরি পাওয়ার পরে পরিশোধ করবে বলে চুক্তি করত। এভাবে তারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন বলেন, বিদেশ থেকে আনা এই ডিজিটাল ডিভাইসগুলো মূলত দুইটি অংশে বিভক্ত। ডিভাইসটির একটি অংশ ইয়ার পিছ তারা পরীক্ষার্থীদের কানের ভিতর এবং অটোমেটিক কল রিসিভ হওয়া সীম লাগানো অপর অংশটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে তাদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করাত।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের কাছে পাঠাত। প্রতারক চক্রটি প্রশ্নপত্রের উত্তর দেয়ার জন্য আগে থেকেই মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি টিম প্রস্তুত রাখত। এরপর এই চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার হল থেকে পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তরসমূহ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত টিম এর মাধ্যমে খুঁজে বের করে চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের বলে দিতো।

তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রটির মূলহোতা গ্রেপ্তার ইকবাল হোসেন। গ্রেপ্তার রমিজ এই প্রতারক চক্রের অন্যতম সহযোগী এবং একটি হত্যা মামলার পলাতক আসামী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকার সময় ২০২০ সালে ইকবালের তার সাথে পরিচয় হয়। সে সময় রমিজ তার আর্থিক সংকটের কথা ইকবালকে খুলে বলে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে ইকবাল তাকে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় সহযোগিতা করার কথা বলে তাকে এই প্রতারক চক্রের সদস্য করে নেয়। ইকবাল এর ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় সে রমিজকে দিয়ে এই কাজ সম্পাদন করাতো।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নজরুল ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অফিস সহকারি-কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরিতে যোগ দেয়। চাকরি সূত্রে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে সুম্পর্ক গড়ে উঠে নজরুলের। এই সুযোগে সে দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষকে চাকরি দেয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রাথীর্দেরকে প্রতারক ইকবাল ও রমিজ এর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতো। এছাড়ও, সে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার সময়, স্থান ও পরীক্ষায় গার্ড খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করত।

গ্রেপ্তার মোদাচ্ছের মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয় থেকে সমাজসেবাকর্মী হিসেবে ২০১৯ সালে অবসর গ্রহণ করে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেয়ার কথা বলে সাধারণ চাকরি প্রার্থীদের খুঁজে বের করে ইকবাল ও রমিজ এর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিত বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।