ফজলে রাব্বি মিয়ার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
  • আপডেট : ০৭:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
  • / 151
গাইবান্ধা-৫ আসনের টানা ৭ বারের জাতীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার গ্রামের বাড়ি সাঘাটার গটিয়াসহ গোটা গাইবান্ধায়।

শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে (নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা) যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ খবর নিশ্চিত করেন স্পিকারের ছোট ভাই ফরহাদ রাব্বি ও গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন।

ফরহাদ রাব্বি জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৯ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। রোববার (২৪ জুলাই) রাত ১১টায় তার মরদেহ আমেরিকা থেকে পাঠানো হবে। পরদিন সোমবার সকাল পৌনে ৯টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে মরদেহ। এরপর ঢাকায় সংসদ ভবন প্লাজায় জানাজাসহ নিজ বাড়িতে মরদেহ আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রিয় নেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকে সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামের (মিয়া বাড়ি) বাড়িতে ছুটে আসতে থাকেন নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা বলেন, আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়ে ফেললাম। তিনি শুধু সাঘাটা-ফুলছড়ির নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন গাইবান্ধাসহ বাংলাদেশের একজন সর্বজন বিদীত নেতা। সব শ্রেণীর মানুষের জন্য তার দরজা খোলা ছিল।

‘তিনি সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে তার সমাধান করে দিতেন। তিনি ছিলেন ত্যাগী ও আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আর নেতা সৃষ্টির কারিগর।’

উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। গ্রামের বাড়িতে ভাইয়েরা বসবাস করলেও দুই মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। আইনজীবী থাকাকালীন সময়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন।

তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া যুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে কাজ করেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি আমৃত্যু ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ফজলে রাব্বি মিয়ার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া

আপডেট : ০৭:৫৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
গাইবান্ধা-৫ আসনের টানা ৭ বারের জাতীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার গ্রামের বাড়ি সাঘাটার গটিয়াসহ গোটা গাইবান্ধায়।

শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে (নিউইয়র্ক সময় বিকেল ৪টা) যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ খবর নিশ্চিত করেন স্পিকারের ছোট ভাই ফরহাদ রাব্বি ও গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন।

ফরহাদ রাব্বি জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৯ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। রোববার (২৪ জুলাই) রাত ১১টায় তার মরদেহ আমেরিকা থেকে পাঠানো হবে। পরদিন সোমবার সকাল পৌনে ৯টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবে মরদেহ। এরপর ঢাকায় সংসদ ভবন প্লাজায় জানাজাসহ নিজ বাড়িতে মরদেহ আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রিয় নেতা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর খবরে শনিবার সকাল থেকে সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামের (মিয়া বাড়ি) বাড়িতে ছুটে আসতে থাকেন নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা বলেন, আমরা আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবককে হারিয়ে ফেললাম। তিনি শুধু সাঘাটা-ফুলছড়ির নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন গাইবান্ধাসহ বাংলাদেশের একজন সর্বজন বিদীত নেতা। সব শ্রেণীর মানুষের জন্য তার দরজা খোলা ছিল।

‘তিনি সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে তার সমাধান করে দিতেন। তিনি ছিলেন ত্যাগী ও আদর্শ ব্যক্তিত্বের অধিকারী। শুধু তাই নয়, তিনি ছিলেন এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আর নেতা সৃষ্টির কারিগর।’

উল্লেখ্য, ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। গ্রামের বাড়িতে ভাইয়েরা বসবাস করলেও দুই মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন। আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। আইনজীবী থাকাকালীন সময়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন সক্রিয়ভাবে। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন।

তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া যুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে কাজ করেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন। ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি আমৃত্যু ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।