ঢাকা ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার ভাই ছাত্রদলের নেতা ছিল

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:১৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৩০ অগাস্ট ২০২১
  • / 153
‘আমার বাবা বেঁচে আছেন কি না জানি না। আমার বাবার জন্য আর এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁদতে চাই না। আমরা এখন আর কাঁদতেও পারি না। চোখে পানি নেই। আমি শুধু বাবাকে ফিরে পেতে চাই।’- অশ্রুসজল চোখে এভাবেই আন্তর্জাতিক গুম দিবসের অনুষ্ঠানে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলো তেজগাঁওয়ের যুবদলের সাজিদুল ইসলাম সুমনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে হাফসা ইসলাম।

একই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া রাজধানীর সূত্রাপুরের ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা আক্তার মুন্নিও ভাইকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ভাই গুম হওয়ার পর থেকে আমরা কোনো ঈদ করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকটা সকাল হয় অপেক্ষা নিয়ে। এই বুঝি একটা খবর পাব। কিন্তু দিন শেষে কিছুই হয় না। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার ভাইয়ের সন্ধান ছাড়া আর কিছু চাই না।’

আন্তর্জাতিক গুম দিবসের অনুষ্ঠানে এসে নানা সময় ‘গুমের’ শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান তাদের স্বজনরা। এসময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘদিনেও প্রিয়জনদের সন্ধান না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা হয়। বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, গণসংহতির সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।

‘মায়ের ডাক’-এর অন্যতম সদস্য ও ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া ঢাকার তেজগাঁওয়ের শাহিনবাগের বাসিন্দা মানবাধিকারকর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, ‘আমরা কেমন আছি সেটা বলে বোঝানো যাবে না। এরই মধ্যে আমাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে থাকা অনেক অভিভাবক মারা গেছেন। এখন আমাদের সঙ্গে গুম হওয়াদের ছোট্ট সন্তানরা আছে। আরও অনেকে সঙ্গে আছেন। তাই যতদিন না স্বজনরা ফিরে আসবে ততদিন আমরা চেষ্টা করে যাবো। নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’

ছাত্রদল নেতা পিন্টুর বোন মুন্নি বলেন, ‘আমার ভাই ছাত্রদলের নেতা ছিল। ওর কি অপরাধ ছিল জানি না। অপরাধ করলে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে পারত। কিন্তু আজকে সাত বছরেরও বেশি সময় ভাইয়ের খোঁজ নেই। এত বছরে আমরা কোনো ঈদ করি নাই। ভাইয়ের জন্য কত জায়গায় গিয়েছি। ভাইকে পাইনি।’

গুম নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নানা সময়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে মুন্নি বলেন, ‘ছেলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমাদের বাবা গত ২২ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমরা আমাদের ভাইকে ফিরে পেতে এখনো অপেক্ষা করছি। আপনাদেরও তো সন্তান আছে। তারা যে গুম হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? কেউ গুম হলে বুঝবেন কি যন্ত্রণা (বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।)

নিখোঁজদের ছবি বুকে ধারণ করে অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করেন স্বজনরা। সন্তানহারা মা, পিতাহারা সন্তান আর স্বামীহারা স্ত্রীদের কান্নায় পুরো হলরুমের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আমার ভাই ছাত্রদলের নেতা ছিল

আপডেট : ১২:১৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৩০ অগাস্ট ২০২১
‘আমার বাবা বেঁচে আছেন কি না জানি না। আমার বাবার জন্য আর এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁদতে চাই না। আমরা এখন আর কাঁদতেও পারি না। চোখে পানি নেই। আমি শুধু বাবাকে ফিরে পেতে চাই।’- অশ্রুসজল চোখে এভাবেই আন্তর্জাতিক গুম দিবসের অনুষ্ঠানে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানাচ্ছিলো তেজগাঁওয়ের যুবদলের সাজিদুল ইসলাম সুমনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে হাফসা ইসলাম।

একই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া রাজধানীর সূত্রাপুরের ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা আক্তার মুন্নিও ভাইকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘ভাই গুম হওয়ার পর থেকে আমরা কোনো ঈদ করতে পারি না। আমাদের প্রত্যেকটা সকাল হয় অপেক্ষা নিয়ে। এই বুঝি একটা খবর পাব। কিন্তু দিন শেষে কিছুই হয় না। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার ভাইয়ের সন্ধান ছাড়া আর কিছু চাই না।’

আন্তর্জাতিক গুম দিবসের অনুষ্ঠানে এসে নানা সময় ‘গুমের’ শিকার ব্যক্তিদের ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চান তাদের স্বজনরা। এসময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘদিনেও প্রিয়জনদের সন্ধান না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সোমবার দুপুরে আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের হলরুমে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভা হয়। বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন, গণসংহতির সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।

‘মায়ের ডাক’-এর অন্যতম সদস্য ও ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া ঢাকার তেজগাঁওয়ের শাহিনবাগের বাসিন্দা মানবাধিকারকর্মী সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী বলেন, ‘আমরা কেমন আছি সেটা বলে বোঝানো যাবে না। এরই মধ্যে আমাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে থাকা অনেক অভিভাবক মারা গেছেন। এখন আমাদের সঙ্গে গুম হওয়াদের ছোট্ট সন্তানরা আছে। আরও অনেকে সঙ্গে আছেন। তাই যতদিন না স্বজনরা ফিরে আসবে ততদিন আমরা চেষ্টা করে যাবো। নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’

ছাত্রদল নেতা পিন্টুর বোন মুন্নি বলেন, ‘আমার ভাই ছাত্রদলের নেতা ছিল। ওর কি অপরাধ ছিল জানি না। অপরাধ করলে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে পারত। কিন্তু আজকে সাত বছরেরও বেশি সময় ভাইয়ের খোঁজ নেই। এত বছরে আমরা কোনো ঈদ করি নাই। ভাইয়ের জন্য কত জায়গায় গিয়েছি। ভাইকে পাইনি।’

গুম নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের নানা সময়ের বক্তব্যের সমালোচনা করে মুন্নি বলেন, ‘ছেলের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমাদের বাবা গত ২২ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। আমরা আমাদের ভাইকে ফিরে পেতে এখনো অপেক্ষা করছি। আপনাদেরও তো সন্তান আছে। তারা যে গুম হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? কেউ গুম হলে বুঝবেন কি যন্ত্রণা (বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।)

নিখোঁজদের ছবি বুকে ধারণ করে অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করেন স্বজনরা। সন্তানহারা মা, পিতাহারা সন্তান আর স্বামীহারা স্ত্রীদের কান্নায় পুরো হলরুমের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।