ঢাকা ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যানজটের দায় কার?

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০২:১৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 131
‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না’ – শাহ্ আব্দুল করিমের এই জনপ্রিয় গান কার না মুখে মুখে ফেরে। গানের এই লাইনের সাথে রাজধানীর সড়কের ‍মিল আছে। তীব্র যানজটে গাড়ির চাকাগুলো যেন ঘুরতেই চায় না, একটা গাড়ির সঙ্গে সাথে আরেকটা গাড়ির ছুঁই ছুঁই অবস্থা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বাড়ছে এমন যানজট? রাজধানীর নানা জায়গায় রাস্তা কেটে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ, অনেক জায়গায় এখন রাস্তা কাটা। ফলে দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। তীব্র এই যানজটের জন্য উন্নয়নযজ্ঞের খেসারত, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, চালক ও যাত্রীদের নিয়ম না মানাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাফিজা খাতুন পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। অফিস গুলিস্তান হলেও অফিসের প্রয়োজনে একই দিনে তাকে ঢাকার উত্তরা থেকে গুলিস্তান যাতায়ত করতে হয়।

তিনি বাংলাদেশ জার্নাকে বলেন, যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক আগে বের হয়েও অফিসে পৌঁছাতে পারে না। অফিস শেষ করে বাসায় যেতেও পড়তে হয় অসহনীয় যন্ত্রণায়।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই তীব্র যানজট রাজধানীর ধানমন্ডি, শাহবাগ, পল্টন, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটর, কাকরাইল, কারওয়ানবাজার, মৌচাক, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে। দুপুরে যানজট কিছুটা কম হলেও বিকেল থেকে আবার শুরু হয় যানজটের তীব্রতা বলে জানিয়েছেন ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও ট্রাফিক সদস্যরা।

কাকরাইলের ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সকাল থেকেই বাংলামোটর ও আশেপাশের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ায় যানজট বেড়েছে আরও বেশি। এর আগেও বেশ কিছুদিন ধরেই এমন যানজটের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সড়কের যাত্রীরা বিরক্তি নিয়ে বলছেন, ঢাকায় এখন ট্র্যাফিক জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিশ্চল অবস্থায় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। কয়েক ঘণ্টা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকাই যেন এ শহরে সাধারণ নিয়ম হয়ে গেছে।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহীন উদ্দিন জানান, সকাল ১০টার পর থেকে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বেলা গড়াতে থাকলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতি সিগন্যালে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগছে।

তীব্র এ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীসহ বাস চালকেরাও। ডি-লিংক পরিবহনের একজন বাসচালক বলেন, গুলিস্তান থেকে আমাদের বাস নিয়ে ধামরাই পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু গুলিস্তান থেকে গাবতলী পার হতেই সময় লেগে যায় ২ ঘণ্টার বেশি। সারাদিনে একবার যেয়ে আসতেই সময় শেষ হয়ে যায়। এমন হলে আামাদের পারিশ্রমিকও থাকে না।

পরিস্থান পরিবহনের বাস চালক খাইরুল বলেন, সড়কে যেখান-সেখান দিয়ে পথচারীরা পার হন। আর দুর্ঘটনা ঘটলে দায় বর্তায় চালকের ওপর। তিনি বলেন, রাস্তায় বাস চলছে। হঠাৎ পথচারী রাস্তায় নেমে হাত উঠিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে লাগলো। কারও গাড়ির ব্রেক দুর্বল হলে তখন গাড়ি তার ওপর উঠে যেতে পারে। আর ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

রমনা জোন ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জয়দেব চৌধুরি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অনেকদিন ধরেই যানজট বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মেট্রোরেল ও বিভিন্ন রাস্তায় খোড়াখুড়ির কারণে সড়কে সংকীর্ণতা হওয়ায় এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

যানজট নিরসনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এডিসি, এসিসহ নিরসনে সবাই কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, বর্তমানে রাজধানীতে প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত বেড়েছে। এতে প্রাইভেট কারের দখলেই বেশিরভাগ সড়ক। ফলে অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন খুব কম সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পান। এছাড়া অনেক ফুটপাত এখনো দখল মুক্ত না হওয়ায় এবং নগরীতে রিকশার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এমন যানজট। মূল সড়কগুলোতে এসব ছোট যানবহনের ধীর গতিতে যানজট আরও বাড়িয়ে তোলে।

মতিঝিল জোন ট্রাফিক বিভাগের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম বজলুর রশিদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় হওয়ায় যানজট অন্য এলাকার চেয়ে অনেকটাই বেশি দেখা যায়। তবে এর পাশাপাশি মেট্রোরেলের জন্য সড়কগুলো অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় যানজট বেশি হয় বলে মনে করেন তিনি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বাস কোম্পানিগুলো যাত্রী পেতে প্রতিযোগিতা করে। তারা সড়ক আটকে যাত্রী পাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যান চলাচলই বন্ধ করে দেয়।

পুলিশের কর্মকর্তারা ট্রাফিক বিভাগের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিক বিভাগের নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন তারা কাজ বুঝে ওঠার আগেই বদলি হয়ে যান। ফলে নীতিনির্ধারণে সমস্যা থেকেই যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যানজটের দায় কার?

আপডেট : ০২:১৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
‘গাড়ি চলে না, চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না’ – শাহ্ আব্দুল করিমের এই জনপ্রিয় গান কার না মুখে মুখে ফেরে। গানের এই লাইনের সাথে রাজধানীর সড়কের ‍মিল আছে। তীব্র যানজটে গাড়ির চাকাগুলো যেন ঘুরতেই চায় না, একটা গাড়ির সঙ্গে সাথে আরেকটা গাড়ির ছুঁই ছুঁই অবস্থা।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র যানজটের কবলে পড়ে ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বাড়ছে এমন যানজট? রাজধানীর নানা জায়গায় রাস্তা কেটে চলছে উন্নয়নযজ্ঞ, অনেক জায়গায় এখন রাস্তা কাটা। ফলে দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। তীব্র এই যানজটের জন্য উন্নয়নযজ্ঞের খেসারত, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, চালক ও যাত্রীদের নিয়ম না মানাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাফিজা খাতুন পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। অফিস গুলিস্তান হলেও অফিসের প্রয়োজনে একই দিনে তাকে ঢাকার উত্তরা থেকে গুলিস্তান যাতায়ত করতে হয়।

তিনি বাংলাদেশ জার্নাকে বলেন, যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক আগে বের হয়েও অফিসে পৌঁছাতে পারে না। অফিস শেষ করে বাসায় যেতেও পড়তে হয় অসহনীয় যন্ত্রণায়।

মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই তীব্র যানজট রাজধানীর ধানমন্ডি, শাহবাগ, পল্টন, সায়েন্সল্যাব, বাংলামোটর, কাকরাইল, কারওয়ানবাজার, মৌচাক, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কগুলোতে। দুপুরে যানজট কিছুটা কম হলেও বিকেল থেকে আবার শুরু হয় যানজটের তীব্রতা বলে জানিয়েছেন ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও ট্রাফিক সদস্যরা।

কাকরাইলের ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, সকাল থেকেই বাংলামোটর ও আশেপাশের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ায় যানজট বেড়েছে আরও বেশি। এর আগেও বেশ কিছুদিন ধরেই এমন যানজটের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সড়কের যাত্রীরা বিরক্তি নিয়ে বলছেন, ঢাকায় এখন ট্র্যাফিক জ্যামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিশ্চল অবস্থায় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক। কয়েক ঘণ্টা ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে থাকাই যেন এ শহরে সাধারণ নিয়ম হয়ে গেছে।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহীন উদ্দিন জানান, সকাল ১০টার পর থেকে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বেলা গড়াতে থাকলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতি সিগন্যালে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো সময় লাগছে।

তীব্র এ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীসহ বাস চালকেরাও। ডি-লিংক পরিবহনের একজন বাসচালক বলেন, গুলিস্তান থেকে আমাদের বাস নিয়ে ধামরাই পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু গুলিস্তান থেকে গাবতলী পার হতেই সময় লেগে যায় ২ ঘণ্টার বেশি। সারাদিনে একবার যেয়ে আসতেই সময় শেষ হয়ে যায়। এমন হলে আামাদের পারিশ্রমিকও থাকে না।

পরিস্থান পরিবহনের বাস চালক খাইরুল বলেন, সড়কে যেখান-সেখান দিয়ে পথচারীরা পার হন। আর দুর্ঘটনা ঘটলে দায় বর্তায় চালকের ওপর। তিনি বলেন, রাস্তায় বাস চলছে। হঠাৎ পথচারী রাস্তায় নেমে হাত উঠিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে লাগলো। কারও গাড়ির ব্রেক দুর্বল হলে তখন গাড়ি তার ওপর উঠে যেতে পারে। আর ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।

রমনা জোন ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জয়দেব চৌধুরি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, অনেকদিন ধরেই যানজট বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মেট্রোরেল ও বিভিন্ন রাস্তায় খোড়াখুড়ির কারণে সড়কে সংকীর্ণতা হওয়ায় এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

যানজট নিরসনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এডিসি, এসিসহ নিরসনে সবাই কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছে, বর্তমানে রাজধানীতে প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত বেড়েছে। এতে প্রাইভেট কারের দখলেই বেশিরভাগ সড়ক। ফলে অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন খুব কম সড়ক ব্যবহারের সুযোগ পান। এছাড়া অনেক ফুটপাত এখনো দখল মুক্ত না হওয়ায় এবং নগরীতে রিকশার সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে এমন যানজট। মূল সড়কগুলোতে এসব ছোট যানবহনের ধীর গতিতে যানজট আরও বাড়িয়ে তোলে।

মতিঝিল জোন ট্রাফিক বিভাগের সহকারি পুলিশ কমিশনার (এসি) এস এম বজলুর রশিদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় হওয়ায় যানজট অন্য এলাকার চেয়ে অনেকটাই বেশি দেখা যায়। তবে এর পাশাপাশি মেট্রোরেলের জন্য সড়কগুলো অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় যানজট বেশি হয় বলে মনে করেন তিনি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। বাস কোম্পানিগুলো যাত্রী পেতে প্রতিযোগিতা করে। তারা সড়ক আটকে যাত্রী পাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে যান চলাচলই বন্ধ করে দেয়।

পুলিশের কর্মকর্তারা ট্রাফিক বিভাগের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা বলেন, ট্রাফিক বিভাগের নীতিনির্ধারণী পদগুলোতে যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন তারা কাজ বুঝে ওঠার আগেই বদলি হয়ে যান। ফলে নীতিনির্ধারণে সমস্যা থেকেই যায়।