তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে চীন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:৫১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 166
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর থেকে চীন তালেবানের কর্মকাণ্ডে নিজের জানান দিয়ে আসছে। এরপর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটিতে চীনের প্রভাব নতুন করে, নতুন অবয়বে শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার খাদ্য সরবরাহ, করোনাভাইরাসের টিকাসহ আফগানিস্তানকে ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার জরুরি সহায়তার ঘোষণাও দিয়েছে চীন। তাই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াচ্ছে চীন। খবর বিবিসির

অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে যা দাঁড়ায়, ৯/১১–র হামলায় বিরাট ধাক্কা খায় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব অর্থনীতি ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে চালকের আসনে থাকা দেশটিতে এমন সন্ত্রাসী হামলায় বদলে যায় বৈশ্বিক চিত্রপট। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে আফগানিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালায়। অন্যদিকে, বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করে চীনের। এরই ধারাবাহিকতায় এখন তারাই হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরা তালেবানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম।

যদিও তালেবানদের সাথে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এই প্রথম নয়। ১৯৯৯ সালের দিকে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো তালেবানের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের শুরু। এর পেছনে বড় কারণ ছিল চীনের সংখ্যালঘু ও নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমরা। আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্যরা যেন চীনে হামলা করতে না পারে। এ সময় চীনের জিনজিয়াংয়ের পার্শ্ববর্তী আফগানিস্তানে উইঘুর যোদ্ধাদের ক্যাম্প বন্ধ করতেও তালেবানকে অনুরোধ করে তারা।

নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ওই সময়ের তালেবান সরকারকে বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়ারও ঘোষণা দেয় চীন। এর মধ্যে ছিল চীন-আফগানিস্তান সরাসরি বিমান চলাচলের মতো বিষয়। আফগানিস্তানের টেলিযোগাযোগ খাত নির্মাণে চীনের তৎকালীন টেক জায়ান্ট ‘জেটটিই’ করপোরেশন সহযোগিতা করবে-এমন প্রস্তাবও দেয়া হয়। পাশাপাশি তালেবান সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করবে বলেও আশা দেখায় চীন।

এরপর ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো কোনো দেশের অমুসলিম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লু শুলিন তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন নেতা মোল্লা ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে পাকিস্তানের মাধ্যমে নিয়মিতই তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখে চীন।

৯/১১–র সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ২০০১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী অভিযান শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই উৎখাত হয় তালেবান সরকার। এরপর দীর্ঘ ২০ বছর তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে এসেছে তারা। একপর্যায়ে সেই তালেবানের সঙ্গেই শান্তি আলোচনা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা ফিরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তাদের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরেছে কঠোরতা নিয়ে দেশ শাসন করে যাওয়া তালেবান। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে চীন।

এদিকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে চীনের উত্তরাঞ্চলের শহর তিয়ানজিনে তালেবান সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদার নেতৃত্বে নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই ঘনিষ্ঠতাকে চীন-তালেবান ‘মধুচন্দ্রিমা’ হিসেবে বর্ণনা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে চীন

আপডেট : ১২:৫১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
গত ১৫ আগস্ট তালেবান আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলের পর থেকে চীন তালেবানের কর্মকাণ্ডে নিজের জানান দিয়ে আসছে। এরপর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর দেশটিতে চীনের প্রভাব নতুন করে, নতুন অবয়বে শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার খাদ্য সরবরাহ, করোনাভাইরাসের টিকাসহ আফগানিস্তানকে ৩ কোটি ১০ লাখ ডলার জরুরি সহায়তার ঘোষণাও দিয়েছে চীন। তাই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াচ্ছে চীন। খবর বিবিসির

অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করে যা দাঁড়ায়, ৯/১১–র হামলায় বিরাট ধাক্কা খায় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব অর্থনীতি ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে চালকের আসনে থাকা দেশটিতে এমন সন্ত্রাসী হামলায় বদলে যায় বৈশ্বিক চিত্রপট। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে আফগানিস্তানে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ চালায়। অন্যদিকে, বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ বাড়তে শুরু করে চীনের। এরই ধারাবাহিকতায় এখন তারাই হয়ে উঠেছে আফগানিস্তানে ক্ষমতায় ফেরা তালেবানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম।

যদিও তালেবানদের সাথে চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এই প্রথম নয়। ১৯৯৯ সালের দিকে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় প্রথমবারের মতো তালেবানের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের শুরু। এর পেছনে বড় কারণ ছিল চীনের সংখ্যালঘু ও নির্যাতিত উইঘুর মুসলিমরা। আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্যরা যেন চীনে হামলা করতে না পারে। এ সময় চীনের জিনজিয়াংয়ের পার্শ্ববর্তী আফগানিস্তানে উইঘুর যোদ্ধাদের ক্যাম্প বন্ধ করতেও তালেবানকে অনুরোধ করে তারা।

নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ওই সময়ের তালেবান সরকারকে বিশেষ কিছু সুবিধা দেয়ারও ঘোষণা দেয় চীন। এর মধ্যে ছিল চীন-আফগানিস্তান সরাসরি বিমান চলাচলের মতো বিষয়। আফগানিস্তানের টেলিযোগাযোগ খাত নির্মাণে চীনের তৎকালীন টেক জায়ান্ট ‘জেটটিই’ করপোরেশন সহযোগিতা করবে-এমন প্রস্তাবও দেয়া হয়। পাশাপাশি তালেবান সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে কাজ করবে বলেও আশা দেখায় চীন।

এরপর ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো কোনো দেশের অমুসলিম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লু শুলিন তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন নেতা মোল্লা ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর থেকে পাকিস্তানের মাধ্যমে নিয়মিতই তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখে চীন।

৯/১১–র সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ২০০১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী অভিযান শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই উৎখাত হয় তালেবান সরকার। এরপর দীর্ঘ ২০ বছর তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে এসেছে তারা। একপর্যায়ে সেই তালেবানের সঙ্গেই শান্তি আলোচনা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা ফিরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তাদের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরেছে কঠোরতা নিয়ে দেশ শাসন করে যাওয়া তালেবান। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে চীন।

এদিকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে চীনের উত্তরাঞ্চলের শহর তিয়ানজিনে তালেবান সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদার নেতৃত্বে নয় সদস্যের প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই ঘনিষ্ঠতাকে চীন-তালেবান ‘মধুচন্দ্রিমা’ হিসেবে বর্ণনা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।