ভারতের সাহায্য ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে না: নুর
- আপডেট : ০৯:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / 183
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে যুব অধিকার পরিষদের মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি। ২১ শে ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা নিবেদন ও প্রভাতফেরিতে ঢাকা, টাঙ্গাইল, শেরপুর বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র, যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, আপনারা দেখেছেন, মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি শ্রদ্ধা জানাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নিজেদের মধ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। তারা সাধারণ মানুষদের, আমাদের নেতাকর্মীদেরও হামলা করে। নিউমার্কেটের চাঁদাবাজ ছাত্রলীগের নেতারা ঢাকা কলেজে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। টাঙ্গাইলে আমাদের নেতাকর্মীদের ব্যানার কেড়ে নেয়া হয়, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়। বাগেরহাট-শেরপুরেও হামলা করা হয়। আওয়ামী লীগ জনগণ, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
‘আমাদের নেতাকর্মীরা বলেছেন, দেশের জন্য জীবন দিতে হলে আমরা মৃত্যুর জন্যও প্রস্তুত। জনগণের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারাই সিদ্ধান্ত নেন, আপনারা আপনাদের দেশকে কাশ্মীর বানাবেন নাকি সিকিম বানাবেন; নাকি দেশকে স্বাধীন করবেন! এখন দেশের মুক্তির জন্য জালিম সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার কোনো বিকল্প নেই।’
এ সময় ঢাকা কলেজে হামলার শিকার আহমেদ জীবন বলেন, ‘গতকাল আমরা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে গেলে ছাত্রলীগ আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাধা প্রদান করে এবং তাদের নির্যাতন করে। আমাকেও কাঁটাবন তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে তারা। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে- আমরা, ভিপি নূর টাকা কেমনে পাই! আমরা তাদের বলতে চাই দেশের জনগণকে সুষ্ঠু রাজনীতি উপহার দিতেই কাজ করি, টাকার জন্য না। তারা আমাকে ইয়াবা দিয়ে পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। তারপর আমার মাথায় চাবির রিং দিয়ে মারে। তাদেরকে রুখে দেয়ার সময় এসেছে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সানাউল্লাহ বলেন, ‘১৯৫২ সালে আমরা সংগ্রাম করি ভাষার স্বাধীনতার জন্য। সেজন্যই আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করি। কিন্তু এই মহান দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলে ঢাকা কলেজে হামলা করা হয়। বাগেরহাটে আমাদের ২ জন নেতাকর্মীকে মেরে হাত-পা ভেঙে দেয় ছাত্রলীগ। আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদ এই হামলার নিন্দা জানাই ও বিচার দাবি করি।’
যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করা হয়। আমরা গুটিকয়েক মিলে দেশের মানুষের কথা বললে তাদের ভয় হয়। আমরা পোস্টার লাগালে তারা আমাদের পোস্টার আগুনে পোড়ায়। তারা মেট্রোরেল বানায়, পদ্মাসেতু নির্মাণ করে কিন্তু মানুষের মন জয় করতে পারে না। আজকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে প্রায় হাজার মানুষ আছে। কিন্তু আন্দোলন করছি মাত্র আমরা কজন। আমরা এখনো দেশের মানুষের ঘুম ভাঙাতে পারিনি। সবার উদ্দেশে বলতে চাই, আমাদের সকলের এক হয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘এ কেমন বাংলাদেশ? যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছেন, ২ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত দিয়েছেন সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ধরে রাখার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন, শ্রদ্ধা জানাতে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে ছাত্রলীগ নিজেরা নিজেদের উপর হামলা করে। হামলা করা ছাত্রলীগের চরিত্র। কিন্তু ছাত্রলীগের ইতিহাস তো এমন নয়। তারা এখন সারা দেশে তাদের ভিন্ন মতের সকলকে দমনের দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছে। তারা বলে তাদের অভিভাবক শেখ হাসিনা। আমরা বলতে চাই শেখ হাসিনাকে এসবের দায় নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পাশের বুয়েটে আবরারকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হত্যা করে। এর দায় কি শেখ হাসিনা নিয়েছেন? আপনারা জানেন, সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করতে তারা তৈরি করেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। তারা কথা বলতে গেলে তাদের ভয় দেখানো হয়, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ১৩ বছর ধরে আওয়ামী লীগ যা খুশি করছে। গণভবনে মানুষের চিৎকার-আর্তনাদ পৌঁছায় না। দেশের মানুষের কষ্টে তাদের কষ্ট লাগে না। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।’
কর্মসূচিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের পাঠাগার বিষয় সম্পাদক ছাত্রনেতা আহমেদ জীবন, ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তার সম্পাদক মো. সানাউল্লাহ, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, নিজামুদ্দিন, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তারেক রহমান, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা-উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবির আহমেদ সবুজ, লেখক ও সংগঠক বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি পরিষদের সমন্বয়ক শওকত হোসেন, বাংলাদেশ শ্রম অধিকার পরিষদের সভাপতি সোহেল রানা সম্পদ, যুব অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান সহ প্রমুখ নেতাকর্মীদের সাথে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মসূচি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেষ হয়। অনুষ্ঠান শেষে নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারের বেদীতে মোমবাতি প্রজ্বলন করে যান।