তেঁতুলতলা মাঠ শিশুদের জন্যই নির্ধারিত হোক: রত্না

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০৮:৪৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
  • / 208
প্রতিদিন বিকেল হলেই তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে চলতে আসতো এলাকার শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা। তবে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। এরপর থেকেই সেখানে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় তাদের কোলাহল।

এদিকে বৃহস্পতিবার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পরই আনন্দে মেতে ওঠে আন্দোলনকারীসহ এলাকাবাসী ও শিশু কিশোররা। এরপর থানার নির্মাণকাজ বন্ধ হলে দল বেঁধে মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট খেলছে তারা। আবার কেউ দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে যেন ঈদের আগে আরেক ঈদ। তবে তখনো মাঠে পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে বসে থাকতে দেখা যায়। মাঠ ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হবার সাথে সংশয় প্রকাশ করছিলেন মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না। তেঁতুলতলা মাঠের ব্যবহার করলেও জায়গাটা পুলিশেরই থাকবে। তারা স্থায়ীভাবে মাঠের নিয়ন্ত্রণ চান। এর মালিকানা যেন সরকারের হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর আড়াইটায় তেঁতুলতলা মাঠে ভবন নির্মাণকাজের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল আন্দোলনকারীরা। এর প্রস্তুতি চলছি। তবে এরই মধ্যে ঘোষণা আসে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, মাঠে থানার ভবন হচ্ছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিবাদী সমাবেশ রূপ নেয় আনন্দ সমাবেশে।

মাঠ ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু সাকাত বাংলাদেশ জার্নালকে বলে, এই মাঠে আমরা খেলতাম। থানা হবে বলে আমাদের আর খেলতো দিতো না। এই সময়ে আমরা টিভি দেখতাম। নাহলে কম্পিউটারে গেম খেলতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য আবার খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমাদের খুব ভালো লাগছে মাঠ ফিরে পেয়ে। খেলাধুলা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। আমরা ঈদের দিনও খেলতে পারবো।

আরেক শিক্ষার্থী তানিশা বলে, বাসার পাশে হওয়ায় আমরা মেয়েরাও এখানে খেলি। আশেপাশে আমাদের খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠ নেই। তাই মাঠ ফিরে পেয়ে আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতোই লাগছে।

এর আগে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বলেন, ওই এলাকায় খেলার কোনো মাঠ নেই, শিশুদের খেলা বা বিনোদনের কোনো জায়গায় নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, এটা পুলিশের জায়গা, পুলিশের থাক। তবে আর যেন কোনো কন্সট্রাকশন কাজ না হয়।

মন্ত্রী বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের জায়গাটা পুলিশের, সেটা পুলিশেরই থাকবে। সেটা এতদিন যেভাবে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল, সেভাবে মাঠ হিসেবে ব্যবহার হবে। মাঠটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। এতদিন যে কাজে ‘ইউজ’ হচ্ছিল সে কাজে ব্যবহার হবে। যেহেতু মাঠটা পুলিশকে দেয়া হয়েছে, এটি পুলিশেরই থাকবে।

কলাবাগান আবাসিক এলাকায় (পান্থপথের দক্ষিণ পাশে) তেঁতুলতলায় শিশু-কিশোররা যেমন খেলত, তেমনি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানও চলে আসছিল। স্থানীয়রা একে তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবেই চেনে।

এ বিষয়ে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মাঠে থানার ভবন হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা দেয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর আগেই দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। তবে এই দেয়াল কখন ভেঙে ফেলা হবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, তেঁতুলতলা মাঠটি ঢাকার আধুনিক মাঠ হিসেবে গড়ে তুলতে মাঠের নকশা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তারা এর স্পন্সর করবেন। যেভাবে মাঠটি সুন্দর করে সবার জন্য খেলধুলার ব্যবস্থা করবেন তিনি।

সৈয়দা রত্না বলেন, তবে এখনো একটা সমস্য আছে। মাঠটি পুলিশের মালিকানায় থাকবে বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। দুই বছর পর যদি তাদের জমি তারা নিয়ে নিতে চায় তখন কি আবার আন্দোলন করবো। এর জন্য আমরা চাইছি অন্যান্য মাঠ যেভাবে সরকরি থাকে যেটা আর কেউ দাবি করতে পারবে না, এটা বাচ্চাদের জন্য থাকবে। মাঠটি সেভাবে হোক।

এখন আর মাঠে খেলতে কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে সৈয়দা রত্না বলেন, এখনো মাঠে পুলিশ বসে। তারা বাধা না দিলে সমস্যা নেই। তবে তারা মাঠের মধ্যে বসে থাকায় তাদের গায়ে বল লাগলে তারা বকা দিতে পারে। তারা এখনো কেন বসে আছে জানি না। তবে পুলিশদের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের কিছু জানায়নি।

মাঠে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য আহসান হাবিব বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের উর্দ্বতন কোনো স্যার কিছুই জানাননি। এখান থেকে চলে যেতে বললে আমরা চলে যাবে।

এবিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

এর আগে গত রোববার পুলিশ ওই মাঠে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে সৈয়দা রত্না তার তরুণ ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ফেইসবুক লাইভ শুরু করলে তাদের ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য অনলাইনে-অফলাইনে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ১২ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার মাঠ না ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে ওই এলাকার শিশুদের খেলাধুলার জন্য কলাবাগান ক্লাবের মাঠটি দেখিয়ে দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।

তাতে বলা হয়, কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য দেশের প্রচলিত সকল আইন কানুন মেনে বরাদ্দ নিয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। ওই এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের দাবির প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বিকল্প খেলার মাঠ ব্যবস্থার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

কিন্তু তারপরও তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাতে বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান অধিকারকর্মী খুশি কবির, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও সঙ্গীতা ইমাম।

তাদের কথা শোনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনও মাঠ ছিল না। এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। আমরা শুনেছি। লোকালয়ের পাশে খালি জায়গা এখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতো। একটু আলাপচারিচার জন্য এই জায়গাটি ছিল। এখন সবাই এই জায়গা নিয়ে নানানভাবে কথাবার্তা বলছে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক নোটিসে বলা হয়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ওই নোটিশে এই জমিকে পতিত জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এ বছরের ৩১ জানুয়ারি মাঠটিতে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত জায়গাটিতে কলাবাগান থানার ভবন হবে বলে জানানো হয়। তবে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী আন্দোলন করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠটির চারদিকে কয়েকটি রেইনট্রি ও মেহগনি গাছ। এছাড়াও মাঠের এক কোণে স্থানীয়দের লাশ গোসল করানোর ঘর রয়েছে। জায়গাটি খোলা হওয়ায় সেখানে স্থানীয় শিশুরা সুযোগ পেলেই খেলায় মেতে ওঠে। বড়রাও নিয়মিত হাঁটেন, আড্ডা দেন। এটিই ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত।

গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী ও শিশু-কিশোররা এই নোটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তেঁতুলতলা মাঠ শিশুদের জন্যই নির্ধারিত হোক: রত্না

আপডেট : ০৮:৪৬:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২২
প্রতিদিন বিকেল হলেই তেঁতুলতলা মাঠে খেলতে চলতে আসতো এলাকার শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা। তবে গত ৩১ জানুয়ারি কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। এরপর থেকেই সেখানে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় তাদের কোলাহল।

এদিকে বৃহস্পতিবার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানার ভবন হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পরই আনন্দে মেতে ওঠে আন্দোলনকারীসহ এলাকাবাসী ও শিশু কিশোররা। এরপর থানার নির্মাণকাজ বন্ধ হলে দল বেঁধে মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট খেলছে তারা। আবার কেউ দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে যেন ঈদের আগে আরেক ঈদ। তবে তখনো মাঠে পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে বসে থাকতে দেখা যায়। মাঠ ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হবার সাথে সংশয় প্রকাশ করছিলেন মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না। তেঁতুলতলা মাঠের ব্যবহার করলেও জায়গাটা পুলিশেরই থাকবে। তারা স্থায়ীভাবে মাঠের নিয়ন্ত্রণ চান। এর মালিকানা যেন সরকারের হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর আড়াইটায় তেঁতুলতলা মাঠে ভবন নির্মাণকাজের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল আন্দোলনকারীরা। এর প্রস্তুতি চলছি। তবে এরই মধ্যে ঘোষণা আসে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, মাঠে থানার ভবন হচ্ছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিবাদী সমাবেশ রূপ নেয় আনন্দ সমাবেশে।

মাঠ ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু সাকাত বাংলাদেশ জার্নালকে বলে, এই মাঠে আমরা খেলতাম। থানা হবে বলে আমাদের আর খেলতো দিতো না। এই সময়ে আমরা টিভি দেখতাম। নাহলে কম্পিউটারে গেম খেলতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য আবার খেলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমাদের খুব ভালো লাগছে মাঠ ফিরে পেয়ে। খেলাধুলা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। আমরা ঈদের দিনও খেলতে পারবো।

আরেক শিক্ষার্থী তানিশা বলে, বাসার পাশে হওয়ায় আমরা মেয়েরাও এখানে খেলি। আশেপাশে আমাদের খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠ নেই। তাই মাঠ ফিরে পেয়ে আমাদের কাছে ঈদের আনন্দের মতোই লাগছে।

এর আগে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের নিজ কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বলেন, ওই এলাকায় খেলার কোনো মাঠ নেই, শিশুদের খেলা বা বিনোদনের কোনো জায়গায় নেই। তাই প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছেন, এটা পুলিশের জায়গা, পুলিশের থাক। তবে আর যেন কোনো কন্সট্রাকশন কাজ না হয়।

মন্ত্রী বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের জায়গাটা পুলিশের, সেটা পুলিশেরই থাকবে। সেটা এতদিন যেভাবে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল, সেভাবে মাঠ হিসেবে ব্যবহার হবে। মাঠটি যেভাবে ছিল, সেভাবেই থাকবে। এতদিন যে কাজে ‘ইউজ’ হচ্ছিল সে কাজে ব্যবহার হবে। যেহেতু মাঠটা পুলিশকে দেয়া হয়েছে, এটি পুলিশেরই থাকবে।

কলাবাগান আবাসিক এলাকায় (পান্থপথের দক্ষিণ পাশে) তেঁতুলতলায় শিশু-কিশোররা যেমন খেলত, তেমনি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানও চলে আসছিল। স্থানীয়রা একে তেঁতুলতলা মাঠ হিসেবেই চেনে।

এ বিষয়ে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মাঠে থানার ভবন হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা দেয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর আগেই দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। তবে এই দেয়াল কখন ভেঙে ফেলা হবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

তিনি বলেন, তেঁতুলতলা মাঠটি ঢাকার আধুনিক মাঠ হিসেবে গড়ে তুলতে মাঠের নকশা করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তারা এর স্পন্সর করবেন। যেভাবে মাঠটি সুন্দর করে সবার জন্য খেলধুলার ব্যবস্থা করবেন তিনি।

সৈয়দা রত্না বলেন, তবে এখনো একটা সমস্য আছে। মাঠটি পুলিশের মালিকানায় থাকবে বলে জানতে পেরেছি। এই বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। দুই বছর পর যদি তাদের জমি তারা নিয়ে নিতে চায় তখন কি আবার আন্দোলন করবো। এর জন্য আমরা চাইছি অন্যান্য মাঠ যেভাবে সরকরি থাকে যেটা আর কেউ দাবি করতে পারবে না, এটা বাচ্চাদের জন্য থাকবে। মাঠটি সেভাবে হোক।

এখন আর মাঠে খেলতে কোনো বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে সৈয়দা রত্না বলেন, এখনো মাঠে পুলিশ বসে। তারা বাধা না দিলে সমস্যা নেই। তবে তারা মাঠের মধ্যে বসে থাকায় তাদের গায়ে বল লাগলে তারা বকা দিতে পারে। তারা এখনো কেন বসে আছে জানি না। তবে পুলিশদের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের কিছু জানায়নি।

মাঠে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্য আহসান হাবিব বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমাদের উর্দ্বতন কোনো স্যার কিছুই জানাননি। এখান থেকে চলে যেতে বললে আমরা চলে যাবে।

এবিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেনি।

এর আগে গত রোববার পুলিশ ওই মাঠে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে সৈয়দা রত্না তার তরুণ ছেলেকে নিয়ে সেখানে গিয়ে ফেইসবুক লাইভ শুরু করলে তাদের ধরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য অনলাইনে-অফলাইনে ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে ১২ ঘণ্টা পর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

এরপর গত মঙ্গলবার মাঠ না ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে ওই এলাকার শিশুদের খেলাধুলার জন্য কলাবাগান ক্লাবের মাঠটি দেখিয়ে দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় ঢাকা মহানগর পুলিশ।

তাতে বলা হয়, কলাবাগান থানা নির্মাণের জন্য দেশের প্রচলিত সকল আইন কানুন মেনে বরাদ্দ নিয়েছে। এক্ষেত্রে ডিএমপি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার জমিতে বেআইনিভাবে থানা ভবন নির্মাণ করছে না। ওই এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের দাবির প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বিকল্প খেলার মাঠ ব্যবস্থার বিষয়টি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এখতিয়ারভুক্ত নয়।

কিন্তু তারপরও তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাতে বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান অধিকারকর্মী খুশি কবির, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও সঙ্গীতা ইমাম।

তাদের কথা শোনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনও মাঠ ছিল না। এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। আমরা শুনেছি। লোকালয়ের পাশে খালি জায়গা এখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতো। একটু আলাপচারিচার জন্য এই জায়গাটি ছিল। এখন সবাই এই জায়গা নিয়ে নানানভাবে কথাবার্তা বলছে।

গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসনের এক নোটিসে বলা হয়, ডিএমপির কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ওই নোটিশে এই জমিকে পতিত জমি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এ বছরের ৩১ জানুয়ারি মাঠটিতে তারকাঁটার বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত জায়গাটিতে কলাবাগান থানার ভবন হবে বলে জানানো হয়। তবে থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী আন্দোলন করছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠটির চারদিকে কয়েকটি রেইনট্রি ও মেহগনি গাছ। এছাড়াও মাঠের এক কোণে স্থানীয়দের লাশ গোসল করানোর ঘর রয়েছে। জায়গাটি খোলা হওয়ায় সেখানে স্থানীয় শিশুরা সুযোগ পেলেই খেলায় মেতে ওঠে। বড়রাও নিয়মিত হাঁটেন, আড্ডা দেন। এটিই ঢাকার কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নামে পরিচিত।

গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কলাবাগানের বাসিন্দা, পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন, সমাজকর্মী, উন্নয়নকর্মী, সাংস্কৃতিককর্মী ও শিশু-কিশোররা এই নোটিশের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।